Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তাড়াশে ২৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী দইমেলা


২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৩২

সিরাজগঞ্জ: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে শুরু হয়েছে ২৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী দইমেলা। এটি মূলত শ্রী পঞ্চমী মেলা হলেও এলাকাবাসীর মুখে মুখে দইমেলা নামেই পরিচিত। এ মেলায় দইসহ বিক্রি হয় মুড়কি, চিড়া, মোয়া, বাতাসা, কদমা, খেজুরের গুড়সহ বাহারি সব খাবার।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে তাড়াশ উপজেলাসহ জেলা সদরের মুজিব সড়কে এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এদিন সকাল থেকে দিনব্যাপী দই মেলা অনুষ্ঠিত হবে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা জানান, মেলা উপলক্ষে বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেল থেকে সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ার নামিদামি ঘোষদের দই আসার মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী দইয়ের মেলা শুরু হয়েছে। দিনব্যাপী মেলায় দইসহ রসনা বিলাসী খাবার ঝুরি মুড়ি, মুড়কি, চিড়া, মোয়া, বাতাসা, কদমা, খেজুরের গুড়সহ বাহারি সব খাবার বেচাকেনা হচ্ছে। এ দই মেলা নিয়ে রয়েছে নানা গল্পকাহিনী ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় যুগ যুগ ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসা এই মেলা আগামী দিনে আরও প্রসারিত হবে এমনটাই প্রত্যাশা দই প্রেমীদের।

জানা যায়, তাড়াশের তৎকালীন জমিদার পরম বৈঞ্চব বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দই মেলার প্রচলন করেছিলেন। এলাকায় জনশ্রতি আছে জমিদার রাজা রায় বাহাদুর নিজেও দই ও মিষ্টান্ন পছন্দ করতেন। তাই জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করতেন। আর সে থেকেই জমিদার বাড়ির সামনে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে স্বরস্বতী পূজায় দিনব্যাপী দই মেলার প্রচলন শুরু করেন। সে থেকে প্রতি বছর শীত মৌসুমের মাঘ মাসে সরস্বতী পূজার দিন শ্রী পঞ্চমী তিথিতে দই মেলার শুরু হয়। সেই ধারাবাহিকতায় তাড়াশ বাজারের পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ শহরেও বসে দইয়ের মেলা। আড়াইশ বছরের এ ঐতিহ্য ধরে রেখেছে স্থানীয়রা।

বিজ্ঞাপন

মেলায় দই নিয়ে আসা জেলার এনায়েতপুরের রনি মিষ্টান্ন ভান্ডারের রঞ্জিত ঘোষ বলেন, ‘আজ ১৫ মণ দই নিয়ে এসেছি। দইয়ের চাহিদা থাকায় দুপুরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তবে দুধের দাম, জ্বালানি, শ্রমিক খরচ, দই পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে।’

রায়গঞ্জের চান্দাইকোনা থেকে আসা দই বিক্রেতা দিলীপ ঘোষ জানান, বাপ-দাদার আমল থেকেই তিনি দই নিয়ে মেলায় আসেন। এ মেলায় প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ মণ দই বিক্রি করেন।

লাল কুমার (৫২) নামে একজন ক্রেতা সন্তান নিয়ে মেলায় এসেছেন দই কিনতে। তিনি বলেন, ‘আমার জন্মের পর থেকেই এই মেলা দেখে আসছি।’

দই কিনতে আসা অমিত্র সাহা বলেন, ‘প্রতি বছর সকালে এই মেলা থেকে দই কিনি। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বাড়িতে অনেক অতিথি এসেছে। তাদের আপ্যায়নের জন্য দই কিনেছি।’ আরেক ক্রেতা বলেন, ‘বোন জামাইসহ বাড়িতে অনেক আত্মীয় স্বজন এসেছে। এখানকার দই খুব সুস্বাদু। প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ কেজি দই কেনা হয়। তবে এবার একটু দাম বেশি। তার পরেও পাঁচ কেজি দই কিনেছি।’

তাড়াশ উপজেলা সনাতন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সনাতন কুমার দাস বলেন, ‘ঐতিহ্য মেনে এখনও তাড়াশে দইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে আগের মতো সেই জৌলুস আর নেই। অল্প কিছু দোকান বসেছে। মেলা সুষ্ঠু পরিবেশে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু বলেন, ‘শীত মৌসুমে মাঘ মাসে শ্রী পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে এ দই মেলা বসে থাকে।সিরাজগঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলায় এই মেলা প্রায় আড়াইশ বছরের ঐতিহ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে মেলায় মানুষের ভিড় বেশি থাকায় প্রবেশ করা যেত না। কিন্তু এবার ১৫-১৮টি দোকান বসেছে। মানুষের মধ্যেও নেই সেই আগ্রহ। এখন আর মেলা উপলক্ষে নেই সাজ সাজ ভাব, আগের মতো আর আসে না জামাই বা আত্মীয়-স্বজনরা।’

দইমেলা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর