Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার আন্তরিক না হওয়ায় সমাধানও নেই’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:০৩

ফাইল ছবি: ড. এ কে আব্দুল মোমেন

ঢাকা: বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমার আন্তরিক নয়। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোনো ‘সমাধান’ নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন মন্ত্রী।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের জেরে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন এলাকায়ও বিদ্রোহীদের সঙ্গে অস্থিরতা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা খুব জটিল সময়। আমাদের পলিসি হচ্ছে আর একজন রোহিঙ্গাকেও আমরা নেব না। কিন্তু আমরা তো ওদের মারতে পারি না। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবস্থান নিয়েছে যে, আমরা এদের নেব না। কিছু কিছু যখন আসে, আমার দেখার চেষ্টা করব সেটাকে কীভাবে দেখভাল করা যায়।’

কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফেরতের ব্যাপারে শর্টকাট কোনো পথ নেই বলে উল্লেখ করেন ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বলেছি। আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে নেবে করে ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও নিচ্ছে না। তারা এখনো আন্তরিক নয়।’

বর্তমান পরিস্থিতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন করে দেশটিতে সংঘাত বাড়ায় সমস্যাও বেড়েছে। বর্তমানে এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো সমাধান নেই। আমরা মিয়ানমার সরকারকে বলেছি, তোমরা তোমাদের একজন লোকও পাঠাবা না। কিন্তু ওখানে সংঘাত হচ্ছে। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেজন্য ভয়ে পালিয়ে আসছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে— তারা তাদের জন্মভূমিতে ফিরে যাবে। এটা আমাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার। তাদের প্রত্যাবাসন করতে হবে। আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কাছে কোনো সমাধান নেই।’

সীমান্ত হত্যা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, একটা লোকও বর্ডারে মারা যাবে না। কিন্তু তারপরও দুর্ঘটনা ঘটে। আমি সবসময় বলি, আমার পাঁচ আঙ্গুল সমান না, কোনো একটা লোক মেরে ফেললে আমাদের বদনামটা হয়। দু’দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একটা লোকও মারা যাবে না।’

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজার, টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে বসবাস করছে।

মানবিক কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে এলেও বাংলাদেশ শুরু থেকেই এই নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে, টেকসই ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার জন্য জোরালো দাবি জানিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের তৎকালীন সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও করে। এরপর ২০১৯ সালে দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তা পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা।

এর মধ্যে, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে তার দলের অধিকাংশ নেতাকে গ্রেফতর করলে মিয়ানমারের সংকট ঘনীভূত হয়।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

টপ নিউজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর