৫১ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে আদানি গ্রুপ
২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:৩১
মাত্র তিন দিনের ঝড়ে আদানি সাম্রাজ্য টালমাটাল। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) শেয়ারবাজারে দুই সেশনে ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হারিয়েছে ভারতের ধনকুবের গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গ্রুপ।
মার্কিন শর্ট সেলার হিনডেনবার্গ রিসার্চের এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পর এমন ধাক্কা খেয়েছে আদানি সাম্রাজ্য। হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, আদানির প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর কারসাজির মাধ্যমে অতিমূল্যায়িত করা হয়েছে। আর এতেই আদানি উপর আস্থা হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
আদানি গ্রুপ হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন ভিত্তিহীন বলে নিন্দা করেছে। গ্রুপের তরফ থেকে বলা হয়েছে, হিনডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবে তারা।
কিন্তু হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনের কারণে ইতোমধ্যে বাজারে বড় ক্ষতির মুখে আদানি গ্রুপ। বুধবার থেকে শেয়ার দর ক্রমাগত কমছে। শুক্রবার পতনের গতি আরও বেগবান হয়েছে। এদিন মার্কিন হেজ ফান্ডের বিলিয়নিয়ার বিল অ্যাকমেন বলেন, আদানি গ্রুপ সম্পর্কে হিনডেনবার্গের প্রতিবেদন তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়েছে। তার এমন মন্তব্যে আদানি গ্রুপের শেয়ার দ্রুত ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।
মার্কিন শর্ট সেলার কোম্পানি হিনডেনবার্গ রিসার্চ গত মঙ্গলবার আদানি গ্রুপ নিয়ে ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, আদানি গ্রুপ এক দশক ধরে স্টক কারসাজি এবং অ্যাকাউন্টিং জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারের দর বাড়িয়েছে। শেয়ারবাজারে আদানি গ্রুপের সাতটি সংস্থা তালিকাভুক্ত। এই সাতটি সংস্থাই দর হারাচ্ছে ক্রমাগত।
হিনডেনবার্গ রিসার্চ এমন এক সময় এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যখন আদানি গ্রুপ বাজারে ব্যাপক সংখ্যায় শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা করছিল। শুক্রবার বাজারে ২৪০ কোটি ডলার মূল্যের শেয়ার ছাড়ার কথা আদানি গ্রুপের।
শুক্রবার আদানি এন্টারপ্রাইজ প্রায় ১৯ শতাংশ শেয়ার দর হারিয়েছে। ২০১৭ সালের পর এই পতন সর্বোচ্চ। গ্রুপটির শাখা আদানি ট্রান্সমিশন, আদানি গ্রিন এনার্জি এবং আদানি টোটাল গ্যাস শেয়ার দর হারিয়েছে ২০ শতাংশের বেশি। বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত আদানি গ্রুপ হারিয়েছে প্রায় ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বৃহস্পতিবার ভারতের বাজারে বেঞ্চমার্ক এনএসই নিফটি ৫০ সূচক এক দশমিক ৬ শতাংশ পতন হয়েছে, যা এশিয়ার বাজারগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এই সূচক পতনের জন্য দায়ী আদানি গ্রুপ।
ভারতের বাজারে ব্যাংকগুলোর স্টকেও বড় প্রভাব পড়েছে। আদানি গ্রুপের সঙ্গে ব্যবসা থাকার কারণে শঙ্কা তৈরি হয়েছে ব্যাংকের স্টকের উপর। বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ উঠিয়ে নিচ্ছেন।
গ্লোবাল সিআইও ফোরামের প্রধান নির্বাহী গ্যারি ডুগান এ ব্যাপারে ব্লুমবার্গকে বলেন, আদানি গ্রুপের এই ব্যাপারটি ভারতীয় কর্পোরেট খাতের কেন্দ্রস্থলে আঘাত হেনেছে। এখানে বেশ কয়েকটি পরিবার-নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের আধিপত্য রয়েছে৷ স্বভাবগতভাবেই তারা অস্বচ্ছ। বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের কর্পোরেট গভর্নেন্সের বিষয়গুলোতেই আস্থা রাখতে হবে।
বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, গত বছর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স পর ভারতীয় ইক্যুইটি এবং যেকোনো হাই প্রোফাইল কোম্পানির শেয়ার এখন ঝুঁকিপূর্ণ। অতএব বৃহত্তর ভারতীয় ইক্যুইটি বাজার আরও পতনের ঝুঁকিতে রয়েছে, যার অনুঘটক আদানি গ্রুপ।
ভারতের শিল্পপতি গৌতম আদানি বিল গেটস এবং ওয়ারেন বাফেটের পরে বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি। ৬০ বছর বয়সী আদানি ৩০ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করে আদানি গ্রুপ।
সারাবাংলা/আইই