রংপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:১০
রংপুর: রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারি জমি দখল, প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, সরকারি গাছ কেটে বিক্রিসহ ২০টি অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ১০ ইউপি সদস্য। তাদের অভিযোগ বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান পছন্দের দুজন ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় এসব অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন।
অভিযুক্ত ওই ইউপি চেয়ারম্যানের নাম জিল্লুর রহমান। তিনি গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) বিকেলে তার বিরুদ্ধে ১০ জন ইউপি সদস্য স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে ইউএনও নাহিদ তামান্নার কাছে।
ইউএনও নাহিদ তামান্না অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ইউএনও বলেন, ‘চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে মর্ণেয়া ইউপি সদস্যদের অভিযোগ পেয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছাড়াও জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এবিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন সদস্যরা। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে।’
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে— ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান পরিষদের সদস্যদের না জানিয়ে নিজের খেয়াল-খুশিমতো ইউনিয়ন পরিষদ চালাচ্ছেন। সেই সঙ্গে সরকারি প্রকল্পের অর্থ নয়ছয় করে পকেট ভারি করছেন। কোনো সভা করা ছাড়াই টিসিবির কার্ড, ভিজিএফের কার্ড বিতরণ, ৪০ দিনের কর্মসূচিতে নিজের পছন্দের ইউপি সদস্যদের কাজ দেওয়া, টাকার বিনিময়ে রেশন কার্ড বিক্রি করেন তিনি।
এ ছাড়া হতদরিদ্র ও বন্যায় দুর্গতদের শুকনো খাবার ও ২ টন চাল, এডিপি বরাদ্দ, ২টি নন-ওয়েজ প্রকল্পের অর্থ, এলজিএসপির তিনটি প্রকল্পের ৯ লাখ টাকা, কাবিখা, কাবিটা প্রকল্পের টাকা, সরকারি প্রকল্পের টাকা, ইউনিয়ন পরিষদের পুরস্কারের টাকাসহ চৌকিদারের ট্যাক্সের টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
অভিযোগে ইউপি সদস্যরা বলেন, ‘৫০ হাজার টাকা মূল্যের টিআর বরাদ্দের জন্য ইউপি সদস্য প্রতি ১০ হাজার টাকা ও চৌকিদার নিয়োগে ৬ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান। ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন খাত ট্রেড লাইসেন্স, ভূমিহীন সনদ, ওয়ারিশ সনদ, জন্ম নিবন্ধন ও মৃত্য সনদপত্রের টাকা নিজ কর্মী দিয়ে উত্তোলণ করে আত্মসাৎ, সরকারি জমিতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি, ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তার ৩০১টি সরকারি গাছ কেটে বিক্রি, সরকারি জমি দখল করে ১০ একর জমি লিজ দিয়ে টাকা উত্তোলনসহ ইউপি সদস্যদের ভয়-ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ তোলা হয়েছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।’
এ ছাড়া ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ছাড়াও তার পছন্দের দুই ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম ও মজমুল হক এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সমন্বয়কারী বলে অভিযোগ করেন মর্ণেয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য তৌহিজার রহমান।
তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ চালাচ্ছেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো সভা করেন না তিনি। চেয়ারম্যান সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেই টাকা আত্মসাৎ করছেন। ইউপি সদস্যরা এর প্রতিবাদ করলে তাদের নানা হুমকি ও ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। আমরা দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যানের বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মর্ণেয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সারাবাংলা/একে