তীব্র শীত কাটিয়ে চুয়াডাঙ্গায় বোরো ধান লাগাতে ব্যস্ত কৃষক
২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১০:২১
চুয়াডাঙ্গা: জেলায় শীত ও কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় জেলার কৃষকদের স্বাভাবিক কর্মজীবনে দেখা দিয়েছিল স্থবিরতা। তীব্র শীতে ইরি-বোরো ধানের চারা রোপণ নিয়েও বিপাকে পড়েছিলেন তারা। তবে গত কয়েকদিন ধরে জেলায় শীতের তীব্রতা কমে যাওয়ায় কৃষকরা তাদের জমিতে এখন বোরো ধান লাগানোর কাজে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলার চার উপজেলায় ৩৬ হাজার ৭০৯ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৬ হাজার ৮১৫ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১২ হাজার ৪৬৪ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৯ হাজার ৯৩০ হেক্টর, জীবননগর উপজেলায় ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জেলায় ১ হাজার ৯০৪ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে ধানের চারা রোপণ কাজ হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, ২১ জানুয়ারি জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। তাপমাত্রা কম ও হিমেল বাতাসে কৃষকরা কর্মহীন হয়ে পড়ে। এরপর থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে।
গতকাল শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) জেলায় সর্বনিম্ন ১৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকরা আবার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। উথলী গ্রামের দিনমজুর জাহিরুল ইসলাম বলেন, ‘তীব্র ঠাণ্ডায় কাজ করা খুব কষ্টকর ছিল। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এখন কাজ করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
জীবননগরের কৃষক হাসান নিলয় বলেন, ‘এ বছর দুই বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করার প্রস্তুতি নিয়েছি। কনকনে ঠাণ্ডা ও হিমেল বাতাসে বীজতলা থেকে চারা এনে রোপণ করার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছিল না। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এখন শ্রমিক নিয়ে মাঠে কাজ করেত পারছি।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ‘এ বছর আমরা লক্ষ্যমাত্রার অধিক বীজতলা প্রস্তুত করেছি, যাতে ধানের চারার কোনো সংকট না হয়। তাই এ বছর বোরো ধানের চারার তেমন কোনো সঙ্কট নেই। জেলার কৃষক এখন বোরো ধান আবাদের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন। কিছু ধান চারার বয়স ১ মাসের বেশিও হয়ে গেছে।’
চলতি মৌসুমে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে বোরো ধানের পর্যাপ্ত ফলনসহ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘গত মৌসুমে জেলায় ৩৬ হাজার ৭০৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছিল। শীত মৌসুমে মৃদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে ঘন কুয়াশায় কৃষকদের আমরা বীজতলা থেকে শিশির সরিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়েছিলাম। জমিতে জমে থাকা অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে বলা হয়েছিল। তাছাড়া মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সতর্ক রাখা হয়েছে। যাতে কৃষকরা কোনভাবেই বোরো ধান আবাদ করতে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন না হয়।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বীজতলা লাল হয়ে গেলে জিপসাম ও ইউরিয়া সার দিতে বলা হচ্ছে। এতে ভালো ফল পাওয়া গেছে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
সারাবাংলা/এমও