‘নাদিয়া ছিল আশা-ভরসা, এখন আমার সব শেষ’
২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:২৭
ঢাকা: তিন মেয়ের মধ্যে নাদিয়া ছিল বড়। আমার কোনো ছেলে নেই। ওই ছিল ছেলের মতো। অনেক কষ্ট করে নাদিয়াকে পড়ালেখা করাচ্ছিলাম। সে চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছিল। কিন্তু পছন্দের সাবজেক্ট ফার্মেসি না পাওয়ায় নাদিয়া ভর্তি হয়নি। নর্দান ইউনিভার্সিটি ভর্তি হয় ফার্মেসি বিভাগে।
আশা ছিল, পড়াশোনা শেষ করে ছোট দুই বোনের দায়িত্ব নেবে। ওই ছিল আমার আমার আশা-ভরসা। কিন্তু কোথা থেকে কী হয়ে গেল? সবকিছু যেন দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে।
বাসচাপায় মেয়ে নাদিয়ার মৃত্যুর পর তার স্মৃতি প্রসঙ্গে বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন সারাবাংলাকে এ সব কথা বলেন।
নাদিয়ার বাবা বলেন, ‘আমাকে ও বলত, বাবা তুমি আর এক বছর চাকরি করবে। এরপর আমি সংসার দেখব।’
আক্ষেপ করে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে। সব আশা-ভরসা শেষ। যাদের কারণে আমার মেয়েকে এই বয়সে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। সর্বোচ্চ বিচার চাই।’
গত ২২ জানুয়ারি দুপুর পৌনে ১টায় রাজধানীর প্রগতি সরণিতে ভিক্টর পরিবহনের বাস চাপায় মারা যান নর্দান ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাদিয়া। নাদিয়া মৃত্যু ঘটনায় ওই দিনই তার বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন ভাটারা থানায় মামলা করেন।
মামলা দায়েরের পর ভিক্টর পরিবহনের বাসের চালক লিটন ও তার সহকারী মো. আবুল খায়েরকে গত ২৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাড্ডার আনন্দনগর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ওইদিন দুপুরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোস্তফা রেজা নূরের আদালত দুইজনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর গত ২৬ জানুয়ারি এ দুই আসামি আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেন। আদালত আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য করেন।
তবে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আল ইমরান রাজন এ বিষযে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
যে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে মৃত্য হয় নাদিয়ার। ওই মোটরসাইকেলটি যাচ্ছিলেন তার বন্ধু মেহেদী হাসান। প্রত্যক্ষদর্শী মেহেদী হাসান বলেন, ‘ঘটনার দিন নাদিয়া আর আমি ঘুরতে বের হই। যমুনা ফিউচার পার্কে আমাদের যাওয়ার কথা ছিল। আমাদের বাইকটি ১৫/২০ কিলোমিটারে চলছিল। এরপর একটি বাস এসে আমাদের বাইকে ধাক্কা দেয়। আমরা দুইজন দুই পাশে পড়ে যাই।’
বাসটির হেলপার চিৎকার করে বলে, ওস্তাদ ব্রেক। আশেপাশের লোকজনও বলছিল, গাড়ি থামানো জন্য। কিন্তু চালক থামাননি।
মেহেদী হাসান আরও বলেন, ‘২/১ সেকেন্ড ব্রেক করলে নাদিয়া উঠে পড়তে পারত। ও (নাদিয়া) ওঠার চেষ্টা করছিল। যখনই উঠতে যাবে তখনই বাসটি নাদিয়ার মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। ওই স্মৃতি ভুলতে পারছি না। চোখের সামনে একটি মেয়ের জীবন শেষ হয়ে গেল।’
মাত্র দুসপ্তাহ আগে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলেন নাদিয়া। ওই ঘটনায় নাদিয়ার মৃত্যুর পর ভাটারা থানায় নিরাপদ সড়ক আইনে মামলা করা হয়। পরদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাড্ডার আনন্দনগর থেকে চালক-হেলপারকে গ্রেফতার করা হয়। বাসটি জব্দ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এআই/একে