সলঙ্গা বিদ্রোহের ১০০ বছর পার হলেও তৈরি হয়নি স্মৃতিস্তম্ভ
২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:১৪
সিরাজগঞ্জ: তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী অসহযোগ আন্দোলন ও খেলাফত আন্দোলনে জনতা উদ্বেলিত হয়ে বিলেতি পণ্য বর্জন করে স্বদেশি পণ্য ব্যবহারের সংগ্রাম শুরু হয়েছিল। যার ঢেউ লেগেছিল সলঙ্গায়ও।
১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশের নেতৃত্বে এ আন্দোলনের কর্মীরা বিলেতি পণ্য কেনা-বেচা বন্ধ করতে সলঙ্গা হাটে প্রচারণা চালায়। স্বদেশি আন্দোলন বন্ধ করতে পাবনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃতে ৪০ জন সশস্ত্র লাল পাগড়িওয়ালা পুলিশ ছুটে আসে এবং মওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশকে গ্রেফতার করে। এতে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে সলঙ্গার সংগ্রামী জনতা। জনতার ঢল ও আক্রোশ দেখে ম্যাজিস্ট্রেট জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য গুলি চালাতে নির্দেশ দেয়।
শুরু হয়ে নির্বিচারে গুলি। গুলিতে প্রায় সাড়ে চার হাজার সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়। এরপর থেকে দিনটিকে রক্তাক্ত সলঙ্গা বিদ্রোহ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) রক্তাক্ত সলঙ্গা বিদ্রোহের ১০১তম দিবস ছিল। সলঙ্গা বিদ্রোহের ১০০ বছর পেরিয়ে গেলেও জায়গার অভাবে শহীদদের স্মরণে নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি একটি স্মৃতিস্তম্ভ।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানান, হাটের অনেক জায়গা দখলে নিয়ে ভবন নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। আবার অনেকে হাটের জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ করে বিক্রি করছেন। অথচ ১০০ বছর পার হলেও নিহত শহীদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়নি।
সলঙ্গা ফোরামের সভাপতি এ এইচ এম মহিবল্লাহ মহিব বলেন, ‘কিছু প্রভাবশালী সলঙ্গা হাটের প্রায় ১০০ বিঘা জমি দখল করে রাখায় অনেক উন্নয়মূলক কাজ করা যাচ্ছে না। ১০০ বছর পার হলেও এখনও সলঙ্গা দিবসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়নি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি, সলঙ্গা দিবসকে যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়।’
মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ পাঠাগারের সহ-সভাপতি গজেন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, ‘ভূমিদস্যুরা হাটের অনেক জায়গা দখলে নিয়েছে। নিহত শহীদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।’
মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ গবেষণা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ও ইতিহাস গবেষক মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ শুধু সলঙ্গার জন্য নয়; তিনি দেশের জন্য আন্দোলন করেছিলেন। তার আন্দোলনের কারণেই আজ ঐতিহ্যবাহী সলঙ্গা হাটে লাখ লাখ টাকার পণ্য আমদানি-রফতানি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রক্তাক্ত সলঙ্গা বিদ্রোহ দিবসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
সারাবাংলা/ইআ