Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঐতিহ্যবাহী সলঙ্গা হাটের জায়গা বেদখল, বেড়েছে বেচাকেনা

রানা আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:১২

সিরাজগঞ্জ: আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঐতিহ্যবাহী সলঙ্গা হাটে বেড়েছে বেচাকেনা। গড়ে উঠেছে নতুন নতুন স্থাপনা। শুরুতে শুধু হাটের দিন দুই-তিন শত মণ ধান বেচাকেনা হতো। এখন প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ধান ও সবজি আমদানি হয়। তখন বাজারে হাতেগোনা কয়েকটি দোকান ছিল। এখন ছোটবড় মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক দোকান রয়েছে।

আরও রয়েছে সাতটি আধুনিক মার্কেট। কাপড় ও গার্মেন্টের শতাধিক দোকান রয়েছে। রড-সিমেন্ট ও হার্ডওয়্যারের দোকান আছে ২০টি। তবে বেচাকেনা বাড়লেও দিন দিন বেদখল হয়ে যাচ্ছে হাটের জায়গা।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানান, হাটের অনেক জায়গা দখলে নিয়ে ভবন নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। আবার অনেকে হাটের জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ করে বিক্রি করছেন। শুরুতে সপ্তাহে দু’দিন হাট বসত শুক্রবার ও সোমবার। এর মধ্যে বড় হাটবার ছিল শুক্রবার। এখন হাট বসে বৃহস্পতিবার এবং সোমবার। সেসময় রাস্তাঘাট ভালো না থাকায় হাটের দিন অন্তত চার-পাঁচশ ঘোড়ার গাড়িতে সলঙ্গা হাটে মালামাল আসতো। ধান, পাট ও রবিশস্য আসতো গরু এবং মহিষের গাড়িতে। তখন ধান আসতো রানিরহাট ও কাটাগাড়ি হাট থেকে।

এখন সলঙ্গা হাটে মালামাল আমদানি-রফতানিতে আগের মতো গরু-মহিষের গাড়ি, নৌকা কিংবা ঘোড়া গাড়ির প্রচলন নেই। শত শত রিকশা, ভ্যান, ভটভটি, করিমন, নছিমন ও ট্রাক-পিকআপে মালামাল পরিবহন করা হয়। চারদিকে পাকা সড়ক। আমদানি-রফতানির কাজে ট্রাক ব্যবহার করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এখন প্রতিদিন ২০-২৫ ট্রাক ধান, পাট, সরিষা সলঙ্গা থেকে বাইরে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে ২০-২৫ ট্রাক বিভিন্ন মালামাল বাইরে থেকে সলঙ্গায় আসছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া বাজারে ফ্রিজ, টেলিভিশনের দোকানও রয়েছে আটটি। ১৫-২০টি স্টিলের দোকান আছে। কোনো পণ্যের জন্য এখন আর কাউকে বাইরে বাজার করতে যেতে হয় না। দৈনিক হাজার হাজার লোকের সমাগম হয়। কাঁচা বাজারসহ সব সদাই এক বাজারেই মেলে। সকাল থেকে রাত্র ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে দোকানগুলো। বিদ্যুতের আলোয় বাজার থাকে উজ্জ্বল।

সলঙ্গা ফোরামের সভাপতি এ এইচ এম মহিবল্লাহ মহিব বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বড়হাট বসে সলঙ্গা বাজারে। তবে আশপাশের উপজেলাগুলোসহ কিছু জায়গায় ছোট ছোট হাট বসার কারণে এখন সলঙ্গা হাটে জনসমাগম কিছুটা কমে এসেছে। সে সময় রাস্তাঘাট পাকা ছিল না। এখন এখানকার সব রাস্তাঘাট পাকা হওয়ায় হাটে আমদানি-রফতানি বেড়েছে। তবে ১০০ বছরে সলঙ্গা হাটের যে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল তা কিন্তু হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু প্রভাবশালী সলঙ্গা হাটের প্রায় ১০০ বিঘা জমি দখল করে রাখায় অনেক উন্নয়মূলক কাজ করা যাচ্ছে না। ১০০ বছর পার হলেও এখনও সলঙ্গা দিবসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়নি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি, সলঙ্গা দিবসকে যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়।’

মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ গবেষণা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ও ইতিহাস গবেষক মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আজ ঐতিহ্যবাহী সলঙ্গা হাটে লাখ লাখ টাকার পণ্য আমদানি-রফতানি হচ্ছে।’

মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ পাঠাগারের সহ-সভাপতি গজেন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, ‘সে সময় উত্তরবঙ্গের মধ্যে শুধু সলঙ্গা বাজারেই হাট বসতো। এখন আশপাশে অনেক জায়গায় ছোট ছোট হাট বসে। তারপরও সলঙ্গা হাটে যে পরিমাণ লোকসমাগম হয়, তা অন্য হাটে হয় না। তবে ১০০ বছরে হাটের যে উন্নয়ন হওয়ার কথা, তা হয়নি। ভূমিদস্যুরা হাটের অনেক জায়গা দখলে নিয়েছে। নিহত শহীদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জায়গাও পাওয়া যাচ্ছে না। এরইমধ্যে হাটের অনেক জায়গা দখল হয়ে গেছে।’

রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৃপ্তি কণা মন্ডল বলেন, ‘সলঙ্গা হাটের কিছু জায়গা প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে, বিষয়টি আমি জানি। জায়গা দখলের বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। মামলাগুলো শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’

সারাবাংলা/এমও

ঐতিহ্যবাহী ঐতিহ্যবাহী সলঙ্গা হাট বেচাকেনা বেদখল সলঙ্গা হাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর