জনসমুদ্র রাজশাহী, কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ভোট চাইলেন শেখ হাসিনা
২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:২২
ঢাকা: ভরা বর্ষায় পদ্মা নদীর উত্তাল ঢেউয়ের গর্জনের মতো রাজশাতীতে জনতার ঢল নেমেছিল মাদ্রাসা মাঠের জনসভায়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে রাজশাহী মহানগরীতে টানা মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলটির নেতাকর্মীদের স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছিল। পদ্মা নদীর কোলঘেঁষা মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত জনসভাকে ঘিরে গোটা মহানগরীর অলিগলি লাখো লাখো জনতার উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। সরকারের টানা ১৪ বছরে উন্নয়নে বদলে যাওয়া রাজশাহী আজ লাখো লাখো নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে জনতার জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। তাই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও জনতার প্রতি কতৃজ্ঞতা জানিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনিমার্ণের লক্ষ্যে উন্নয়নের জয়যাত্রা অব্যাহত রাখতে আগামী জাতীয় নির্বাচনেও নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করেন।
রোববার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভাকে ঘিরে জনতার জনস্রোত রাজশাহী মহানগরে সৃষ্টি হয়। জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে, জনসভাকে সফল করার লক্ষ্যে সকাল ৮টার পর থেকেই জনসভাস্থলের দিকে আসতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। সকাল ৯টার পরে মাদ্রাসা মাঠের প্রবেশমুখগুলো খুলে দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে নেতাকর্মীরা জনসভাস্থলে প্রবেশ করতে থাকেন। জনসভায় অংশ নিতে বিশেষ ট্রেন, বাস, মিনিবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে বিভাগের আওতাধীন জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীরা জনসভায় অংশ নেয়। মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন রঙের শার্ট, টি-শার্ট ও টুপি পরিধান করে, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে অংশ নিতে আসে। এতে রাজশাহী মহানগরী মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর আগমনে গোটা নগরীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিল।
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা মেয়াদে উন্নয়ন কর্মসূচির পাশাপাশি ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন দলটির প্রতি জনপ্রিয়তা ও সমর্থনে বদলে গেছে বরেন্দ্রভূমি খ্যাত রাজশাহীর জনপদে। টানা তিনটি জাতীয় নির্বাচনে রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনেই নৌকার প্রার্থীরা জয়লাভ করেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উন্নয়নের বার্তা দিতে নতুন বছরের শুরুতে রোববার (২৯ জানুয়ারি) ভোট প্রার্থনায় রাজশাহী আসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। গত নির্বাচনের আগেও মাদ্রাসা মাঠের জনসভায় নৌকায় ভোট প্রার্থনা করেন তিনি।
রাজশাহীর জনসভায় অংশ নেওয়ার আগে সারদা পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। রাজশাহীতে প্রায় ১ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ২৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৩৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সরকারপ্রধান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গত ১৪ বছরে ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি উন্নয়ন অবকাঠামো তৈরি করেছি। একটু আগেই আমরা ১ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। এর মধ্যে ২৬টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং ছয়টির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন।’
রাজশাহীর জনসভায় আসার প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনার সময়ে আসতে পারিনি। আজ আপনাদের মাঝে এসে অত্যন্ত আনন্দিত। আপনারা ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। গত নির্বাচনে নৌকা মার্কায় আপনারা ভোট দিয়েছেন। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফের আহ্বান জানাব, আগামী নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দিন।’ এ সময় উপস্থিত জনতা হাত তুলে নৌকা নৌকা স্লোগান স্লোগানে তাদের ওয়াদা ব্যক্ত করেন। জবাবে উপস্থিতি জনতাকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
জনসভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পদ্মা নদীর সব ঢেউ আজ রাজশাহী শহরে চলে এসেছে। যাকে বলে জনতার ঢল। মঞ্চ আলোকিত করে বসে আছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। যার জন্য আপনারা সকাল থেকে হাজার হাজার নর-নারী নগরীকে মিছিলের নগরীতে পরিণত করেছেন। আজকের এই জনসভা তাই জনসমুদ্রে রূপান্তরিত হয়েছে। এই মাঠে যত লোক তার ১০ গুণ বেশি লোক মাঠের বাইরে বসে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি এখন কি পদযাত্রা? পদযাত্রা মানে শেষ যাত্রা। পদযাত্রা মানে অন্তিম যাত্রা। পদযাত্রা মানে পেছন যাত্রা। পদযাত্রা মানে মরণ যাত্রা। মরণ যাত্রা হচ্ছে এখন বিএনপির। তারা এখন সরকারকে পালাতে বলে, পালাবার পথ নাকি খুঁজে পাবে না। ফখরুল সাহেব পালিয়ে তো আছেন আপনারা। তরেক রহমান আর রাজনীতি করবে না, মুচলেকা দিয়ে পালিয়েছে লন্ডনে। সাত বছরের দণ্ডিত পলাতক আসামি আপনাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পালিয়ে যায়। আমরা পালাতে জানি না। আমরা পালাব না। প্রয়োজনে ফখরুল সাহেবের বাসায় গিয়ে উঠব।’
রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এই জনসভার আয়োজন করে। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামালের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাতসহ স্থানীয় নেতারা। জনসভা পরিচালনা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম