Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মূল্যছাড়ের হিড়িক, শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে বাণিজ্য মেলা

আশিকুর রহমান হান্নান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ১০:৫৪

নারায়ণগঞ্জ: হাতে আর মাত্র একদিন। এরপরই পর্দা নামবে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে চলা ২৭তম ঢ‌াকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার। শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে মেলা। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই দিচ্ছে বিভিন্ন অফার। ক্রেতা-দর্শনার্থীরাও ভিড় জমা‌চ্ছেন স্টলগুলোতে। ইলেকট্রনিকস, কাপড়, আসবাবপত্র, রান্না সামগ্রী, প্রসাধন থেকে শুরু করে খাদ্যপণ্যের ওপর রয়েছে বিশেষ ছাড়। সেই সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের উপহার।

বিজ্ঞাপন

মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি‌দিন সকাল থেকেই দর্শনার্থী বাড়তে থাকে বাণিজ্যমেলায়। কেউ সপরিবারে, কেউ বন্ধু-বান্ধবী, স্কুল-কলেজের সহপাঠীদের নিয়ে দলবেঁধে মেলায় এসেছেন। এদের একটি অংশ মেলায় ঘুরতে এলেও বেশিরভাগই ব্যস্ত কেনাকাটায়।

এদিকে মেলায় ক্রেতাদের বেশি আগ্রহ দেখা গেছে গৃহস্থালি বিভিন্ন পণ্যের প্রতি। প্লাস্টিক পণ্যের পাশাপাশি রয়েছে প্রেসার কুকার, জুস মেকার, ওভেন, রাইস কুকার, ইস্ত্রি, ইন্ডাকশন চুলা, ফ্যানসহ নানা ধরনের ইলেকট্রনিক ও গৃহস্থালি পণ্য। মেলায় বিভিন্ন স্টলগুলোতে চলছে নানান অফার। যেসব স্টলে ছাড় বেশি সেখানে ক্রেতাদের ভিড়ও বেশি।

ক্রেতাদের আকর্ষণে বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় অফার দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। মূল্য ছাড়, তিনটি কিনলে একটি ফ্রি- এই রকমের অফারে হুমড়ি খেয়ে পণ্য কিনছেন ক্রেতারাও। সব বয়সের ক্রেতা ও দর্শনার্থীর পদচারণায় জমে উঠেছে এবারের বাণিজ্য মেলা। মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে কেনাকাটাও। মেলা পুরোদমে জমে ওঠায় ব্যবসায়ীদের মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি।

তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, মেলায় সব পণ্যের দাম বেশি। অনেক কোম্পানি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে মূল্যছাড় দিলেও পণ্যের দাম বেশি রাখছে। পণ্যের দাম বাড়িয়ে এর সঙ্গে অন্যান্য পণ্য ফ্রি দেওয়া হচ্ছে।

বন্ধুদের নিয়ে দলবেঁধে টঙ্গী থেকে ঘুরতে এসেছেন টঙ্গী কলেজের ছাত্র মোজাফ্ফর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যাচের আজ কোনো ক্লাস নেই। তাই আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম আমরা বাণিজ্য মেলায় যাব ঘুরতে। সবাই না এলেও একসঙ্গে ৭ জন আসতে পেরেছি। এখন পুরো বাণিজ্য মেলা ঘুরে দেখব, খাব আর ছবি তুলবো, আড্ডা দেব।’

বিজ্ঞাপন

নর‌সিংদী থেকে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা লোকমান হোসেন বলেন, ‘পরিবার নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে এসেছি। বিকেলে আরও একটি কাজ আছে, তাই সকাল সকাল এসেছিলাম মেলায়। আমার স্ত্রী পরিবারের জন্য কিছু কেনাকাটা করেছেন।’

কথা হয় রাজধানীর উত্তরা থেকে আসা সা‌নি মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মেলায় বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছিলাম। ঘুরতে ঘুরতে একটি ইস্ত্রি পছন্দ হয়ে গেল। দেখলাম তারা মূল্যের চেয়ে বেশ ভালো ছাড় দিচ্ছেন। এ কারণে দেরি না করে কিনে নিলাম।’

ফার্নিচার পণ্যে ছাড় দেওয়া হচ্ছে শুনে পুরান ঢাকা থেকে বাণিজ্যমেলায় এসেছেন স্বর্ণা আক্তার। তিনি বলেন, ‘মেলায় ফার্নিচারের অনেক নতুন কালেকশন রয়েছে দেখলাম। ফার্নিচারের স্টল থেকে একটি সোফাসেট কিনেছি। এখন আরেকটি খাট কিনব। এ কারণে ঘুরেফিরে দেখছি আরও কয়েকটি ফার্নিচারের দোকান।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মেলায় এখন যারা আসছেন তাদের বেশির ভাগই কিছু না কিছু কিনছেন। ফলে বেনাকেনাও হচ্ছে প্রচুর।

‌হাতিল ফার্নিচারের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমরা নতুন নতুন ডিজাইনের কাঠের তৈরি ফার্নিচার নিয়ে মেলায় এসেছি। আমাদের ফার্নিচারের ৫-১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছি। প্রথমদিকে ফার্নিচারের ক্রেতার সংখ্যা কম থাকলেও ১০ দিনের পর থেকে ক্রেতাদের সারা বেশ ভালো পাচ্ছি।’

ড্রেস লাইন স্টলের কর্মী মিলন মিয়া বলেন, ‘মেলার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ছাড় ও উপহার। আর এটাই যদি না থাকে তবে ক্রেতাদের মেলায় এসে কি লাভ। এবার মেলায় শুরু থেকেই ক্রেতাদের সমাগম ভালো, বেচাকেনাও চাঙ্গা।’

বাণিজ্যমেলা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে শেষ করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হ‌য়েছে জা‌নি‌য়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) স‌চিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী ব‌লেন, ‘দিন যতই যা‌চ্ছে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী সমাগম বাড়ছে। মেলা শেষের দিকে হওয়ার কারণে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছুটির দিন ছাড়াও অনেক রয়েছে। মেলায় দর্শনার্থীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন সে কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের টিম ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন মেলায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দিতে।’

উল্লেখ্য, এবার দেশি-বিদেশি মিলে মেলায় মোট ৩৫১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২২৫টি। দেশি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, ভারতসহ ১০টি বিদেশি রাষ্ট্রের ১৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নি‌য়ে‌ছে। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ফ্রি। মেলা খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।

সারাবাংলা/এমও

বাণিজ্য মেলা মূল্যছাড়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর