পাতাল রেলপথ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ২ ফেব্রুয়ারি
৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:১১
ঢাকা: উড়াল পথে মেট্রোরেলের পর এবার শুরু হচ্ছে পাতাল রেলপথের কাজ। আগামী বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় পাতালে মেট্রোরেল পথ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এমআরটি লাইন-১ এর আওতায় এই পাতাল রেল নির্মান কাজের বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
ডিটিএমসিএল সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় মেট্রোরেল হবে উড়াল ও পাতালের সমন্বয়ে। দু’টি রুটে মোট ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ করা হবে। আর এতে খরচ হবে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে ডিএমটিসিএল কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ সকল তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক।
যেমন হবে পাতাল রেল
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, মেট্রোরেলের যে অংশ মাটির নিচ দিয়ে চলবে সেটিই পাতাল রেল নামে পরিচিতি পাচ্ছে। এমআরটি লাইন-১ এর আওতায় নির্মাণ হবে মোট ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার রেলপথ। এই পথে থাকবে দু’টি রুট বিমান বন্দর (বিমান বন্দর থেকে কমলাপুর) আর দ্বিতীয় পূর্বাচল রুট (নতুনবাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো)। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত রুটের দৈর্ঘ্য হবে ২০ কিলোমিটার। এই রুটে মোট পাতাল স্টেশন থাকবে ১২টি। বিমানবন্দর- কমলাপুর রুটই হবে দেশের প্রথম পাতাল রেলপথ। মেট্রোরেলের মতো এটিও হবে বিদ্যুৎ চালিত ট্রেন এবং এটি হবে দূর নিয়ন্ত্রিত ট্রেন। দূর নিয়ন্ত্রিত ট্রেনের জন্য থাকবে অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টার।
এমআরটি লাইন-১ এর আওতায় যে দু’টি অংশ থাকবে এর একটি বিমানবন্দর- কমলাপুর রুট পুরোটাই মাটির নিচ দিয়ে যাবে। আর দ্বিতীয় অংশ পূর্বাচল রুটের যে ১১ কিলোমিটার তার পুরোটাই যাবে উড়াল পথে।
এমআরটি-১ এর রেললাইনে দুটি অংশ থাকবে, প্রথম অংশটি পুরোপুরি পাতালপথে, দ্বিতীয়টি উড়ালপথ। এ পথে স্টেশনের সংখ্যা মোট ৯টি। উড়াল-পাতাল মিলিয়ে প্রতিটি স্টেশনে ট্রেন থামবে প্রতি আড়াই থেকে সাড়ে তিন মিনিট পর পর। এই ৩১ কিলোমিটার পথে চলবে ২৫টি ট্রেন। যার প্রতিটি একবারে তিন হাজারের বেশী যাত্রী পরিবহন করার সক্ষমতা থাকবে।
পাতালপথে কমলাপুর, রাজারবাগ, মালিবাগ, হাতিরঝিল, রামপুরা, পূর্ব হাতিরঝিল, বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, নতুন বাজার, নর্দা, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩ ও বিমানবন্দরে স্টেশন থাকবে। প্লাটফর্মে ওঠা নামার জন্য উভয় পথের স্টেশনে থাকবে লিফট, সিঁড়ি ও এস্কেলেটর।
তথ্যানুযায়ী, নতুনবাজার স্টেশনে এমআরটি লাইন-৫ নর্দান রুটের সঙ্গে আন্তঃ লাইন সংযোগ থাকবে। নদ্দা ও নতুন বাজার স্টেশন আন্তঃ সংযোগ রুট ব্যবহার করে বিমানবন্দর রুট থেকে পূর্বাচলে যাওয়া যাবে।
কাজের অগ্রগতি
সূত্রমতে, এমআরটি লাইন-১ এর স্টাডি, সার্ভে, ডিটেইল ডিজাইনের কাজ শেষ হয়েছে। এই অংশের ডিপো নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ হয়েছে কয়েকটি স্টেশনের জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান। ২০২২ সালের অক্টোবর এ কাজের জন্য পরামর্শক নিয়োগের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
এ প্রসঙ্গে ডিএমটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, ‘পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় ২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কাজের উদ্বোধন করবেন। রূপগঞ্জ জনতা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রাজউকের কর্মাশিয়াল প্লট মাঠে এ উপলক্ষ্যে সভা করবেন তিনি। রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জ মৌজায় ৮৮ দশমিক ৭১ একর জমিতে হবে মেট্রোর ডিপো। এতে হবে ৬০৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। বিমানবন্দর রুট ও পূর্বাচল রুটে চলাচলকারী সব মেট্রো এই ডিপোর সুবিধা পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পিতলগঞ্জে মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণ করা হবে। এরমধ্য দিয়ে পাতল রেলের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এমআরটি লাইন-১ দুই ভাগে বাস্তবায়ন করা হবে। একটি অংশ হবে পাতাল অন্যটি হবে উড়াল পথ। দু’টি অংশের মূল ডিপো নির্মাণ কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সঙ্গেই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এমআরটি লাইন-১ বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা অর্থ সহায়তা দেবে জাপান। আর বাকি খরচ মেটানো হবে সরকারি তহবিল থেকে।’
পরিকল্পনায় আরো যা রয়েছে
রাজধানীর যানজট কমিয়ে মানুষের যাতায়াত সহজ ও দ্রুত করার লক্ষ্যে বিশ্বের উন্নত দেশের মতো রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগে ২০১২ সালে সায় দেয় সরকার। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী মোট ৬ ধাপে মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। সে পরিকল্পনার প্রথম ধাপে গঠন করা হয় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড। উড়াল ও পাতাল রেলপথ মিলিয়ে ৬ ধাপে রয়েছে, এমআরটি লাইন-৬, এমআরটি লাইন-১, এমআরটি লাইন-৫ এ দুই রুট রয়েছে নর্দান ও সাউদার্ন, এমআরটি লাইন-২, এমআরটি লাইন-৪। এরমধ্যে এমআরটি লাইন-৬ দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়।
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, এমআরটি লাইন-৬, ১ ও ৫ এই তিন লাইন যথাক্রমে ২০২৫ সালের জুন, ২০২৬ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কারণে এমআরটি লাইন-১ ও ৫ এর কাজ শেষ হতে ২০৩০ সাল লেগে যেতে পারে।
নির্মাণ হবে আরও মেট্রোপথ
২০২৮ সালের মধ্যে রাজধানীর সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত উড়াল-পাতাল মিলিয়ে মোট ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল পথ নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরমধ্যে ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার হবে উড়াল এবং ৭ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হবে পাতাল। মোট ১৪টি স্টেশনের ৯টি উড়াল পথে আর ৫টি স্টেশন থাকবে পাতাল পথে। এমআরটি লাইন ৫ নর্দান রুট নামে পরিচিত এই অংশের সার্ভে কাজ চলছে এখন।
লাইনটি ২০২৮ সালে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও ডিএমটিসিএল এর কর্মকর্তারা বলছেন, এই লাইন ২০৩০ সালের আগে শেষ হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে ডিএমটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক জানিয়েছেন, নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হওয়ায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। তাই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে একটু বেশি সময় লাগতে পারে।
২০৩০ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৬,১ ও ৫ যদি নির্মাণ শেষ করা যায় তাহলেও রাজধানীর যানজট অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
যাত্রী নিয়ে চলছে এমআরটি-৬
রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল পথ নির্মাণের উদ্যোগের সূচনা হয় এমআরটি লাইন-৬ এর হাত ধরে। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল পথের ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের কাজ শেষ করা হয় প্রথম ধাপে। উত্তরা থেকে আগাঁরগাও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের উদ্বোধন করা হয় গত ২৮ ডিসেম্বর। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর ২৯ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন করে যাচ্ছে মেট্রোরেল।
সূত্র বলছে, আগামী বছরের শেষ দিকে চালু করা হবে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। এরপরের ধাপে নির্মাণ হবে মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত। আর এতে সময় লেগে যাবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত।
সারাবাংলা/জেআর/ইআ