Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফের অচল চারুকলা, আন্দোলন নিয়ে বিভক্ত শিক্ষার্থীরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৫৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: এক সপ্তাহ পর ক্লাস ছেড়ে আবারও আন্দোলনে নেমেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তবে এবার আন্দোলনের বিরোধিতা করে ক্লাস-পরীক্ষার পক্ষেও অবস্থান নিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী। আন্দোলনকারীরা ইনস্টিটিউটের মূল ফটক অবরুদ্ধ করে রাখায় কোনো শিক্ষক সেখানে প্রবেশ করতে পারেননি।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে দিনভর মূল ফটকে তালা লাগিয়ে ইনস্টিটিউটের ভেতরে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্লোগানে-স্লোগানে মুখর করে রেখেছেন ক্যাম্পাস। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা চারুকলা সচল রাখার পক্ষে, তারাও দলবদ্ধ হয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন। তবে উভয়পক্ষের মধ্যে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞাপন

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, চারুকলা ইনস্টিটিউট নগরী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ সাতদিনেও দৃশ্যমান না হওয়ায় তারা আন্দোলনে নেমেছেন। অন্যদিকে চারুকলা সচল রাখার পক্ষের শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা তাদের শিক্ষাজীবনের আর একদিনও নষ্ট করতে চান না।

ঝুঁকিমুক্ত ক্লাসরুম, ভবন ও ছাত্রাবাস নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের জন্য বাস, ডাইনিং ও ক্যান্টিন চালুসহ ২২ দফা দাবিতে ২০২২ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে আন্দোলনে নামেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। ৩ নভেম্বর থেকে তারা চারুকলা ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার এক দফার আন্দোলন শুরু করেন।

প্রায় আড়াই মাস ধরে টানা আন্দোলনে অচল হয়ে থাকা চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গত ২১ জানুয়ারি চট্টগ্রামে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এরপর আন্দোলনকারীদের নিয়ে ফটক খুলে চারুকলার ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন মন্ত্রী-উপমন্ত্রী। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে তাদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানান।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীরা প্রথমে ক্লাসে ফিরতে অস্বীকৃতি জানালে ২২ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউটে যান। তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা সাতদিনের জন্য আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে ক্লাসে ফেরেন।

চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী খন্দকার মাশরুর আল ফাহিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, এক সপ্তাহের মধ্যে চারুকলা মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এই আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরা এক সপ্তাহ ক্লাস করেছি। কিন্তু এর মধ্যে আমাদের মূল দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সে জন্য আমরা আবারও ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে নেমেছি। আমাদের এক দফা দাবি যতক্ষণ বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়া হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

চারুকলা ইনস্টিটিউটে দেখা গেছে, শ’খানেক ছাত্রছাত্রীকে মূল ক্যাম্পাসে প্রত্যাবর্তনের দাবি জানিয়ে ব্যানার টানিয়ে তার সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। কেউ আবার রঙতুলি দিয়ে নানা চিত্র এঁকে ফেস্টুন বানিয়ে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। অন্যদিকে কিছুটা দূরত্বে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী আলাদা অবস্থান নিয়েছেন। তারা গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এসে ক্লাসে ফেরার আকুতির কথা জানিয়েছেন।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী অরিত্রা ধর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরাও চাই মূল ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে। দাবির সঙ্গে আমাদের দ্বিমত নেই। কিন্তু তিনমাস ধরে আন্দোলন করে আসছি। মন্ত্রী এসে আশ্বাসও দিয়েছেন। আবার আন্দোলন কেন? করোনার কারণে আমাদের দুই বছর চলে গেছে। আন্দোলনের কারণে তিন মাস চলে গেছে। লেখাপড়া বন্ধ, বাসা থেকে চাপ আসছে। পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে কী আমরা অপরাধ করেছি? মাত্র ক্লাস শুরু হয়েছিল, আমরা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর মধ্যে আবার বন্ধ করে দেওয়া হল।’

আন্দোলনের পক্ষে থাকা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জহির রায়হান অভি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইনস্টিটিউটের ৩৫৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০-১২ জন বিপক্ষে থাকলে আন্দোলনের কোনো ক্ষতি হবে না। যারা এখন আন্দোলনের বিরুদ্ধে বলছেন, তারাও শুরু থেকেই আমাদের সঙ্গে ছিলেন। এখন ‍উনারা যদি শিক্ষকদের পক্ষে অবস্থান নেন, সেটা উনারা নিতেই পারেন। আমরা তাদের অবস্থানের বিষয়ে কিছুই বলবো না। কিন্তু চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন থেকে সরবো না।’

নগরীর বাদশা মিয়া সড়কে ‘চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজকে’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত করে ২০১০ সালে চারুকলা ইনস্টিটিউট করা হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরীতে ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর