Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অতঃপর কবি এসে মেলার উদ্যান অংশে দাঁড়ালেন

আসাদ জামান
৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:১৩

‘অমর একুশে বইমেলা’ কেবলমাত্র বই বিক্রি, প্রদর্শন বা কবি-সাহিত্যিক-লেখক-প্রকাশক-পাঠকদের বর্ষিক মিলনমেলা নয়, নয় কেবল আড্ডা-আয়োজন। এ মেলা আমাদের অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প-সাহ্যি-সংস্কৃতি-রাজনীতি এবং বাংলাদেশ বিনির্মাণের নানা পর্যায়ে নানাভাবে সম্পৃক্ত মহাকালজয়ী মানুষগুলোকে পরিপূর্ণতায় স্মরণ করার বিরাট এক উপলক্ষও বটে।

আমাদের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন, সাংস্কৃতিক আন্দোলন, সাহিত্য আন্দোলনসহ জাতিসত্ত্বার পরিচয়বাহী যত আন্দোলন-সংগ্রাম আছে— সবগুলোর গৌরবময় অতীত ইতিহাসকে এক সুতোয় গেঁথে নতুন প্রজন্মের সামনে উপস্থাপনে চেষ্টার কমতি থাকে না অমর একুশে বইমেলা কর্তৃপক্ষের।

বিজ্ঞাপন

এ লক্ষ্যে সেই আবহওমানকাল থেকে বইমেলার মূল মঞ্চে বিভিন্ন টপিকসের ওপরে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম এবং আলোচনা সভা আয়োজন করে আসছে বাংলা একাডেমি। কিন্তু মেলায় আসা সব শ্রেণির দর্শক বা পাঠক তো আর তাত্ত্বিক আলোচনা শুনতে চায় না। মূল মঞ্চের গান-বাজনা, কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য-গীতটুকু বাদ দিলে খুব কম সংখ্যক লোকই সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের জন্য মেলা মঞ্চে যায়।

কিন্তু এই আমজনতার সামনে তো কোনো না কোনোভাবে জাতির কীর্তিমানদের তুলে ধরতে হবে। উৎসর্গের বরণডালায় বরণ করতে হবে সেইসব মানুষগুলোকে, যারা আপন কর্মের দ্বারা স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন যুগ যুগ ধরে।

এমন চিন্তা থেকেই হয়তো ২০১০ সালে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ নয়টি ভাগে বিভক্ত করে একেকটি ভাগকে একেকজন মনীষীর নামে উৎসর্গ করা হয়। সেবার চত্বরগুলোর নাম ছিল এ রকমান— ‘ভাষা শহিদ চত্বর’, ‘রবীন্দ্র চত্বর’, ‘নজরুল চত্বর’, ‘ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চত্বর’, ‘আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ চত্বর’, ‘সুফিয়া কামাল চত্বর’, ‘ধীরন্দ্রেনাথ দত্ত চত্বর’, ‘সোমন চন্দ চত্বর’ ও ‘বেগম রোকেয়া চত্বর’।

বিজ্ঞাপন

এর এক বছর পর ২০১২ সালে এসে পুরো মেলাকে ‘ভাষা শহিদ চত্বর’, ‘রবীন্দ্র চত্বর’, ‘রোকেয়া চত্বর’, ‘নজরুল চত্বর’, ‘ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ চত্বর’ এবং ‘শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ চত্বর’— এ ছয় ভাগে বিভক্ত করা হয়।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে মেলার বড় একটি অংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার পর ২০১৫ সালে গোটা মেলা বিন্যস্ত করা হয় ‘রবীন্দ্রনাথ চত্বর’, ‘নজরুল চত্বর’, ‘ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চত্বর’, ‘ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সত্বর, ‘আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ চত্বর’, ‘বেগম রোকেয়া চ্ত্বর’, ‘সুফিয়া কামাল চত্বর’ এবং ‘সোমেন চন্দ চত্বরে’।

এর পর ২০১৭ সালে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ১২টি চত্বরে বিভক্ত করা হয়। এসব চত্বর ১২জন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও লেখকের নামে উৎসর্গ করা হয়। এরা হলেন— সৈয়দ শামসুল হক, শওকত ওসমান, রফিক আজাদ, শহীদ কাদরী, আব্দুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দীন, সরদার জয়েন উদ্দীন, নূরজাহান বেগম, আহসান হাবীব, আব্দুল গফুর হালী, মদনমোহন তর্কালংকার, আমীর হোসেন চৌধুরী, দীনেশচন্দ্র সেন। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ উৎসর্গ করা ভাষা শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে।

পরের বছর (২০১৮ সাল) বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে আবারও ১২টি চত্বরে বিভক্ত করা হয়। এবারও ১২জন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও লেখকের নামে উৎসর্গ করা হয় মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এরা হলেন— শহিদ নূতনচন্দ্র সিংহ, শহিদ সিরাজ উদ্দীন হোসেন, সৈয়দ শামসুল হক, শহিদ মতিয়ুর রহমান, শহিদ আলতাফ মাহমুদ, লোকশিল্পী রমেন শীল, অধ্যক্ষ মুহম্মদ আব্দুল হাই, শহিদ আসাদ, শহিদ নূর হোসেন, শহিদ মেহেরুন্নেসা, শহিদ মুনীর চৌধুরী এবং অধ্যাপক অজিতকুমরা গুহ। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ উৎসর্গ করা হয় সদ্য প্রয়াত কথাশিল্পী শওকত আলীর নামে।

২০১৯ সালে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি অংশকে পাঁচ জন ভাষা শহিদের নামে উৎসর্গ করা হয়। বাংলা একাডেমি চত্বরকে ভাষা শহিদ বরকত এবং সোহরাওয়ার্দী চত্বরকে ভাষা শহিদ শফিউর, ভাষা শহিদ জব্বার, ভাষা শহিদ সালাম এবং ভাষা শহিদ রফিকের নামে উৎসর্গ করা হয়।

অর্থাৎ ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল— এই দশ বছর বাংলা ভাষার বড় বড় কবি, সাহিত্যিক, লেখক, ভাষা সংগ্রামী, ভাষাবিদ, লোকশিল্পী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহিদ ব্যক্তিবর্গের নামে অমর একুশে বইমেলার প্রাঙ্গণ এবং উদ্যান অংশ বিন্যস্ত করা হয়। মেলায় আসা লেখক, পাঠক, দর্শনার্থীরা— বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম এসব কীর্তিমানদের সঙ্গে পরিচিত হন।

কিন্তু যে কবি— ‘‘শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে/রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে/ অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন/ তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল/ হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার/সকল দুয়ার খোলা/ কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী/ গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি/ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷’’ (স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো- নির্মলেন্দু গুণ), তার নামে এতদিন কোনো চত্বর হয়নি।

অবশেষে ‘বজ্রকণ্ঠের কবি’ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলার রাখাল রাজা বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অমর একুশে বইমেলার উদ্যান অংশে এসে দাঁড়ালেন। কেননা, এবার বইমেলার উদ্যান অংশে তার নামে চত্বর করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তার তর্জনী উঁচানো হাত, সফেদ পাঞ্জাবি এবং কালোকোর্ট পরা সেই কালোত্তীর্ণ ছবি শোভা পাচ্ছে মেলার ডিসপ্লে বোর্ডে।

শুধু বঙ্গবন্ধু নয়, এবার মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে আরও দু’টি চত্বরে ভাগ করা হয়েছে। একটি ‘বঙ্গমাতা চত্বর’ অপরটি ‘শেখ রাসেল চত্বর’। আর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণকে করা হয়েছে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা’ চত্বর।

এত বছর পরে কেন বঙ্গবন্ধু চত্বর?— এ প্রশ্নের জবাবটা দারুণভাবেই দিলেন মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের সব কর্মে অনুপ্রেরণার উৎস। তাকে বাদ দিয়ে আমাদের কোনো কিছুই হয় না। আপনি হয়তো জানেন, ২০২০ সালে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে উৎসর্গ করা হয়েছিল। আর ২০২২ সালে অমর একুশে বইমেলায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বঙ্গবন্ধু-গ্রন্থভুক্ত হস্তলিপি বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যবহার করা হয়েছিল, যাতে করে লিপি পাঠপূর্বক তরুণেরা বঙ্গবন্ধুর হাতের লেখার সঙ্গে পরিচিতি হতে পারে। একইসঙ্গে তার চিন্তা ও দর্শনের অন্তর্নিহিত অর্থও উদ্ধার করতে পারে। অর্থাৎ নানাভাবে, নানা আঙ্গিকে বঙ্গবন্ধু বইমেলার সঙ্গে ছিলেন, এবারও আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

জাতির পিতা বইমেলা ২০২৩ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর