গণতন্ত্রকে বার বার হত্যা করেছে আ.লীগ সরকার: খন্দকার মোশাররফ
৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:৩৭
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্রকে বার বার হত্যা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) রাজধানীর গাবতলীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে পদযাত্রা’ অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
পদযাত্রার শুরুতে একটি খোলা ট্রাকে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত মঞ্চে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আজকে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ১০ দফা দাবি তথা এই সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সকল দ্রব্যমূল্যে আকাশ ছোঁয়া দাম কমানোর দাবিতে আজকের এই শান্তিপূর্ণ পদযাত্রার আয়োজন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘যখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কোন কর্মসূচি দেয়, তখন গায়ের জোরের সরকার, যারা এই দেশে ভোট চুরি করে, দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করে যারা গায়ের জোরে সরকারে আছে; যারা স্বৈরাচারী, যারা ফ্যাসিস্ট এবং আন্তর্জাতিকভাবে যারা একটি হাইব্রিড সরকারের রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত; তারা যখনই দেখে আমাদের বিএনপির কর্মসূচি তখন তারা এর মধ্যে আবিষ্কার করে আমরা নাকি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করব, আমরা নাকি সন্ত্রাস সৃষ্টি করবো।’
‘আমরা সরকারকে বলতে চাই, আমরা এর আগে দশটি বিভাগীয় বিশাল গণসমাবেশ করেছি। আপনারা বাধা সৃষ্টি করেছেন, পরিবহনে ধর্মঘট করিয়েছেন। পুলিশ দিয়ে আমাদের নেতা কর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভয় দেখিয়েছেন। আপনাদের পেটুয়া বাহিনী দিয়ে রাস্তায় রাস্তায় বাধা দিয়েছেন তারপরেও এদেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রত্যেকটি গণসমাবেশ সফল করেছে।’
আমরা গত কয়েকদিন যাবত এই ঢাকা শহরে আমরা পদযাত্রা করছি, এতে কোন ধরনের সন্ত্রাস, বিশৃঙ্খলা হয়নি উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আজকে সরকারকে বলতে চাই আপনাদের তো সময় শেষ। পায়ের নিচে মাটি নাই। আজকে দেশ-বিদেশে আপনাদেরকে চাপ দিচ্ছে আর আমাদের কোন প্রোগ্রাম দেখলেই আপনারা সেই ভয়ে ভীত হয়ে যান।’
ব্যাংকগুলোরং দুরবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলো আজকের তারুল্য সংকটে, আজকে আমদানি করার জন্য ডলার দিতে পারে না, যা আজকে আপনারা দেখেছেন। তারপরেও গায়ের জোরে চাপাবাজি করে বলে অর্থনীতি সব দিক থেকে নাকি ভালো। সবদিক থেকে যদি ভালো হয় তাহলে ঊর্ধ্বগতি হচ্ছে কেন?’
‘মাত্র ১৯ দিন আগে গণশুনানি উপেক্ষা করে সরকার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছিল। আবার আজকে একইভাবে তারা ৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে। বলেছে মাসে মাসে তারা এটাকে সমন্বয় করবে অর্থাৎ তাদের হাতে আজকে টাকা নেই। এদেশের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লুট করে টাকা নেওয়ার জন্য বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, পানির দাম বৃদ্ধি, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি অথচ বিদ্যুৎ দিতে পারে না, পানি দিতে পারে না। যার ফলে এদেশের মানুষের অবস্থা আজকে অত্যন্ত দুর্বিষহ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে গরিব মানুষ আরও গরিব হয়েছে। অনেকের পেটে ভাত জোটে না। মধ্যবিত্ত আজকে গরিব হয়েছে। তাই আজকে গণতন্ত্রের হত্যাকারী অর্থনীতিকে হত্যাকারী, যারা অর্থনীতিকে লুটপাট করেছে তারা অর্থনীতিকে মেরামত করতে পারবে না।’
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আজকে বানোয়াট মামলায় আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে শাস্তি দিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বানোয়াট মামলায়ের শাস্তি দিয়ে বিদেশে থাকতে বাধ্য করছে। এমনিভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপরে লাখের উপরে মামলা, প্রায় ৩৭ লক্ষ আসামি। এই করে তারা বিএনপিকে দাবিয়ে দিতে চেয়েছিল।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ এই সদস্য বলেন, ‘আমরা বলতে চাই আপনাদের সময় শেষ। আগামী দিনের বাংলাদেশ হলো বেগম খালেদা জিয়া- তারেক রহমানের বাংলাদেশ। অতএব বিদায়ের প্রস্তুতি নেন, আমরা কিন্তু আপনাদের বিদায়ের শুভযাত্রা হিসাবে এই পদযাত্রা করছি। আপনারা যাই মনে করেন না কেন, আপনাদের বিদায়ের অগ্রিম পদযাত্রা হচ্ছে আমাদের আজকের এই শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনা পদযাত্রা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন আলমসহ যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দলসহ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে আজ দুপুর থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে পদযাত্রা’ কর্মসূচিতে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের হাজারো নেতা কর্মী রঙ বেরঙের পোস্টার ব্যানার নিয়ে পদযাত্রা কর্মসূচিতে দলে দলে যোগ দিতে দেখা যায়। এ সময় দলের চেয়ারপার্সনের মুক্তিসহ নানা দাবিতে স্লোগান দেন তারা।
পরে বিএনপির নেতৃবৃন্দ গাবতলী থেকে পদযাত্রা শুরু করে মাজার রোড হয়ে শাহ আলী মাজার, মিরপুর-১ হয়ে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে গিয়ে পদযাত্রা কর্মসূচি সমাপ্ত করে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট