Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মেলার প্রথম দিন যথারীতি শ্রীহীন

আসাদ জামান
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:৪৫

‘আজকে আপনারা যারা বরাদ্দ পেয়ে যাবেন, তারা কাল সকাল থেকে সাজসজ্জার কাজ শুরু করে দিন। আমরা যেমন ১০ দিনে অনেক কিছু করে ফেলতে পারলাম, আপনারাও কিন্তু সাত/আট দিন সময় পাচ্ছেন। ৩১ জানুয়ারি আমরা যখন মেলা ভিজিট করতে যাব, তখন এখানে ওখানে বিচ্ছিন্নভাবে সাজসজ্জার সরঞ্জাম পড়ে থাকাটা অ্যালাউ করব না। কারণ, এটা নিয়ে মিডিয়া অনেক আপত্তি তোলে। মেলার প্রথম দিনটা যদি সুন্দর হয়, বাকি দিনগুলোও সুন্দর হবে।’

বিজ্ঞাপন

স্টল-প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের জন্য ২২ জানুয়ারি লটারি ড্র’র সময় উপরের কথাগুলো বলেছিলেন অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। সেদিন তার বক্তব্য’র সময় প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা উপস্থিত ছিলেন, তারা কোনো কথা বলেননি। তাদের ‘সম্মিলিত নীরবতা’ দেখে মনে হয়েছিল- এবার বোধ হয় মেলার প্রথম দিনটা পরিপাটি, সুন্দর, সুশ্রী, সুষম, আরামদায়ক হবে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বুধবার বিকেল ৫টার দিকে অমর একুশে বইমেলার প্রবেশ দ্বার যখন খোলা হলো, তখন পরিপাটি, সুন্দর, সুশ্রী, সুষম, আরামদায়ক মেলার ছিটে-ফোটাও চোখে পড়ল না। প্রচণ্ড সাইক্লোন শেষে একটা বিধ্বস্ত জনপদের ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেত-খামাড়, উঠান-বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট-মেঠো পথের যে অবস্থা হয়, মেলার প্রথম দিনটার পরিবেশ ঠিক তেমনই।

সন্ধ্যার পর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ঢুকে দেখা যায়, অসংখ্য স্টল এবং বেশি কিছু প্যাভিলিয়নের নির্মাণ কাজ এখনো বাকি। আর যারা নির্মাণকাজ শেষ করে ফেলেছেন, তাদের নির্মাণবর্জ্য সরাননি। ফলে মেলাজুড়ে ইট, কাঠ, বালু, সিমেন্ট, টিন, রড, কাগজ, লোহা, তারকাটা, কস্টেপ, পাইপ, ককশিট, রংয়ের ডিব্বা, পলিথিন, দড়ি, সুতা, ঝুড়ি, কোদাল, বেলচা, কাপড়, পাইপ, পানির বোতল, লাঠি, পেরেক, বালতি, সোলা, বাঁশ, কাঁচের টুকরা, হাডবোর্ডসহ অন্যান্যা আবর্জনায় মেলা সয়লাব হয়ে আছে।

এরইমধ্যে যেসব স্টল ও প্যাভিলিয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলোর নান্দনিক চেহারা মেলার নির্মাণ আবর্জনার কারণে ম্ল্যান হয়ে গেছে। কারণ, পায়ের নিচে অস্বস্তিকর ময়লার স্তূপ রেখে চোখের সামনে ফুলের বাগান তুলে ধরলে মস্তিস্ক আরামদায়ক বার্তা দেয় না। কিন্তু এ অবস্থা এবারই প্রথম নয়, সেই আবহমানকাল থেকেই মেলার প্রথম দিনটা এ রকম শ্রীহীন যায়। মেলার দুই/তিন দিন পর বেশিরভাগ স্টল-প্যাভিলিয়ন নির্মাণ শেষ হলে আস্তে আস্তে পরিবেশ সুন্দর হতে থাকে।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর ম্যানেজার মো. আমজাদ হোসেন খান কাজল সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছর এমনটিই হয়। প্রথম দিন মেলার এ রকম শ্রীহীন অবস্থা থাকে। পরে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। এখনও অনেক প্যাভিলিয়ন ও স্টলের নির্মাণকাজ চলছে। কাজ শেষ হলে মেলার ময়লাগুলোও ছাপ করা হবে। আশা করি শুক্রবার নাগাদ মেলার পরিপাটি চেহারা দেখা যাবে।’

তবে মেলার চেহারা যাই হোক, প্রথম দিনেই বেশ কিছু পাঠক ও দর্শনার্থীকে মেলায় ভিড় করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে মেলায় এসেছেন। ‘অপ্রস্তুত’ মেলার বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে দেখেছেন তারা। কেউ কেউ মেলার প্রথম দিনেই বই কিনেছেন। কেউ আবার সেলফি ও ফটোশুটের মাধ্যমে মেলার প্রথম দিনটাকে স্মৃতির ফ্রেমে বন্দি করেছেন।

মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে কথা হয় মিথিলা বিনতে ওয়াহিদের সঙ্গে। বন্ধুকে নিয়ে মেলায় আসা মিথিলা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেলার এই এলোমেলো, বিবর্ণ, শ্রীহীন অবস্থা দেখে বিরক্ত লাগছে। প্রথম দিন ‘মনখারাপ’ অভিজ্ঞতা নিয়ে মেলা থেকে বের হতে হবে।’

শুধু স্টল-প্যাভিলিয়ন নয়, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যে সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গা জুড়ে মেলা আয়োজন করছে বাংলা একাডেমি, তার কোনো অংশের কাজই পুরোপুরি শেষ হয়নি। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন পাশের বেষ্টনী নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হওয়া মেলার পূর্বপাশ একেবারেই অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এ পাশের প্রবেশ পথের কাজও সম্পন্ন হয়নি। সন্ধ্যার পর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিপুল সংখ্যক পুলিশ মেলার পূর্বপাশের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেলার এ পাশটার বেষ্টনী নির্মাণ শেষ না হওয়ায় উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতা জাদুঘরের গেটও বন্ধ থাকবে। কারণ, মেলার সার্বিক নিরাপত্তা আমাদের কাছে এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

এদিকে, মেলায় প্রবেশের জন্য টিএসসি গেট, কালিমন্দির গেট এবং জাতীয় চার নেতার মাজারসংলগ্ন গেটের কাজও পুরোপুরি শেষ হয়নি। গেট দিয়ে প্রবেশের সময় প্রতি বছর যে নান্দনিকতার ছোঁয়া পাওয়া যায়, এবার তার ছিটে-ফোটাও চোখে পড়েনি।

মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের পশ্চিম উত্তর কোণে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চের সামনে লিটল ম্যাগাজিন চত্বরটির কাজও পুরোপুরি শেষ হয়নি। শেষ হয়নি মোড়ক উন্মোচন মঞ্চের কাজও। জরুরি আশ্রয় কেন্দ্র, স্বাস্থ্যসেবা জোন, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, খাবারের দোকান— এক কথায় মেলার কোনো কাজই পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। সুতরাং বরাবরের মতো এবারও মেলার প্রথম দিন নিতান্তই শ্রীহীন, আগোছালো, এলোমেলো অবস্থার মধ্যেই গেল।

জানতে চাইলে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। তারপরও কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে গেছে। এতবড় কর্মযজ্ঞে এ ধরনের ঘাটতি থাকাটাই স্বাভাবিক। বিষয়টি আপনারা একটু কনসিডারলি দেখেন। আশা করছি দুয়েক দিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা চাই।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

বইমেলা ২০২৩ শ্রীহীন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর