ঢাকা-রূপগঞ্জ: পাতাল রেলের যুগে বাংলাদেশ, নির্মাণকাজ উদ্বোধন আজ
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০০:০৮
ঢাকা: সরকারের টানা মেয়াদে বদলে গেছে যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন। আর এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্মার্ট পরিবহন যুগেও প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে গত বছর বিজয়ের মাসে মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যার দ্বার সূচনা করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। মেগাসিটিতে পরিবহন সেবায় এবার মেট্রোরেলের পর স্মার্ট পরিবহন হিসাবে দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোলাইন নির্মাণকাজের উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পাতালরেল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন তিনি। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় সকাল ১১টায় এর উদ্বোধন হবে। উড়াল পথে মেট্রোরেল যাত্রার পরে এটিই হতে যাচ্ছে দেশের মেট্রোরেলের প্রথম পাতালযাত্রা।
এই পাতালরেল নির্মাণে ব্যয় হবে ৫২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি ঋণ ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। আর বাকি অর্থ সরকারি তহবিল থেকে মেটানো হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা দৈনিক ৬ লাখ। উদ্বোধন ২০২৬ সালে।
এর আগে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক বলেন, ‘আগামী ২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প, নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের রাজউক কমার্শিয়াল প্লট মাঠে পাতাল মেট্রোলাইন নির্মাণকাজের উদ্বোধন ঘোষণা ও ফলক উন্মোচন করবেন।’ পাতালরেল হচ্ছে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি-১) প্রকল্পের আওতায়। এটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জে মেট্রো রেলের ডিপো নির্মাণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে ডিএমটিসিএল।
প্রকল্প সূত্র জানায়, দ্বিতীয় মেট্রোরেল হবে উড়াল ও পাতাল পথের সমন্বয়ে। দুটি রুটে ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ হবে। এর মধ্যে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত- এই রুটে মাটির নিচ দিয়ে চলবে রেল। এটি ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রুট।
এই রুটে স্টেশন হবে মোট ১২টি। এগুলো হলো- বিমানবন্দর, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচার পার্ক, নতুন বাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর। আর পূর্বাচল রুটে নতুন বাজার স্টেশনটি হবে পাতালে। এরপর নতুন বাজার থেকে পূর্বাচলের নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জ পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার হবে উড়ালপথে। এ রুটে আবার স্টেশন হবে নয়টি। সেগুলো হলো- নতুন বাজার, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা, পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি, মাস্তুল, পূর্বাচল পশ্চিম, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল পূর্ব, পূর্বাচল টার্মিনাল ও পিতলগঞ্জ ডিপো।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে এই ছয়টি মেট্রো রেলের নির্মাণকাজ পর্যায়ক্রমে তিন ধাপে শেষ করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২৮ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৫ নর্দান রুটের নির্মাণকাজ শেষ করা হবে। তৃতীয় পর্যায়ে ২০৩০ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৫ : সাউদার্ন রুট, এমআরটি লাইন-২ এবং এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।
গত বছর বিজয়ের মাসে ঢাকায় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারে মেট্রোরেলের চলাচল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অত্যাধুনিক তথা স্মার্ট পরিবহন যুগে প্রবেশ করে। আর ২৫ জুন উদ্বোধন করে যোগাযোগ নেটওয়ার্কের সবচেয়ে বড় দ্বার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। এছাড়া যোগাযোগ অবকাঠামোত খাতের উন্নয়নে একই দিনে একশ সেতু এবং একশ সড়ক-মহাসড়কের উদ্বোধন করেন।
এদিকে, গত ১৪ বছরে বদলে গেছে শীতলক্ষ্যা নদীর দুইপাড়ের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা। আওয়ামী লীগ সরকার টানা ক্ষমতায় থাকায় এই অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। রূপগঞ্জ উপজেলাবাসী বলছে, প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তিই বেশি। শিল্পাঞ্চলখ্যাত এ উপজেলায় এখন শান্তির সুবাতাস। সেই রূপগঞ্জের পূর্বাচলে বৃহস্পতিবার আসছেন। বিগত সময়ে তার সরকার যে উন্নয়ন করেছে সেই উন্নয়ন তুলে ধরে নতুন বছরের শুরুতে স্মার্ট পরিবহন যুগে প্রবেশের দ্বার উন্মোচন করে ফের আগামী নির্বাচনে জনগণের রায় বিবেচনায় ভোট প্রার্থনা করবেন তিনি।
নতুন বছরে রূপগঞ্জে এটা প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় সুধী সমাবেশ। এই সুধী সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ দিতে এক মাস ধরে কাজ করছেন স্থানীয় নেতারা। রূপগঞ্জ উপজেলায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বরণ করতে প্রস্তুত লাখো জনতা। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুদৃষ্টি থাকায় বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীর প্রতীকের প্রচেষ্টায় গত ১৪ বছরে মেগা প্রকল্প ভুলতা ফ্লাইওভার, বীর প্রতীক গাজী সেতু নির্মাণ, তিনশ ফুট সড়ক নির্মাণ, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, প্রশস্ত রাস্তা, উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, আলোকায়নসহ নানাবিধ উন্নয়নে তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত হয়েছে রূপগঞ্জ এলাকা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এ সরকারের আমলে উপজেলায় একের পর এক সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণে রূপগঞ্জ উপজেলাকে এক অন্যরকম রূপ এনে দিয়েছে। সড়ক, কালর্ভাট, ব্রিজ সংস্কার ও নতুন নতুন ব্রিজ নির্মাণে নতুন সাজে সেজেছে রূপগঞ্জ। হয়েছে শিক্ষাসহ সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন। তিলোত্তমা রূপগঞ্জ সফরে বাংলাদেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১ এর নির্মাণকাজের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রীর। পরে তিনি সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন।
সুধী সমাবেশ সফল করতে ওয়ার্ড পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম দস্তগীর গাজী, বীর প্রতীক। পাশাপাশি প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। সুধী সমাবেশকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে চায় রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোও। লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে সুধী সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত করার লক্ষে এরই মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান ভুঁইয়া বলেন, ‘আশা করছি ওয়ার্ড থেকে শুরু করে রূপগঞ্জ উপজেলা তথা নারায়ণগঞ্জ জেলা পর্যন্ত সকল নেতাকর্মীরা দলে দলে প্রধানমন্ত্রীর সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন।’
রূপগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তারাব পৌরসভার মেয়র হাছিনা গাজী বলেন, ‘রূপগঞ্জ উপজেলার সর্বত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভূতপূর্ব উন্নয়ন কাজ করেছেন। তাই সুধী সমাবেশে আওয়ামী লীগ ছাড়াও সাধারণ জনগণও উপস্থিত হবে। পূর্বাচলের মাঠ ছাপিয়ে বাইরেও জনসমুদ্রে পরিণত হবে।’
সুধী সমাবেশ নিয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীর প্রতীক বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে রূপগঞ্জের দু’টি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। রূপগঞ্জবাসীর কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নই আমার লক্ষ্য। রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জে বাংলাদেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১ এর নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন উপলক্ষে সুধী সমাবেশে বিগত ১৪ বছরের উন্নয়ন অর্জন দিয়ে জনগণের কাছে ভোট চাইবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে যে দেশের উন্নয়ন হয় সেই বার্তাই পাবেন রূপগঞ্জবাসী তথা দেশের মানুষ।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য রূপগঞ্জবাসী ধন্য। আমরা নেত্রীকে বরণ করার জন্য প্রস্তুত আছি। নেত্রীর সমাবেশে রূপগঞ্জ থেকে লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ ঘটবে। মাত্র এক মাস পর ২ ফেব্রুয়ারি রূপগঞ্জে আসছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে, গত ১ জানুয়ারি একই এলাকায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার শুভ উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।’
ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম
গোলাম দস্তগীর গাজী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বীর প্রতীক রূপগঞ্জ হাছিনা গাজী