Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শীতজনিত রোগে ৭৯ দিনে ১০১ মৃত্যু, অধিকাংশই শিশু

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:৪৬

ঢাকা: ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭৯ দিনে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চার লাখ ৪৮ হাজার ৮০৪ জন। এর মাঝে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত নানা রোগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন হাজার ৮০ জন। এছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তিন লাখ ৭৬ হাজার ৭২৪ জন।

গত ৭৯ দিনে মূলত এই দুই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০১ জন। এর মাঝে অধিকাংশই শিশু।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। গতকাল বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়

প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ২০৭ জন। ১৪ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৭২৪ জন।
এসময়ে রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে কন্ট্রোল রুম।

এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ১ হাজার ৮৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মাঝে মৃত্যু হয়েছে একজনের। এ নিয়ে ১৪ নভেম্বর থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৯৮ জন যার অধিকাংশই শিশু।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বিভিন্ন কারণে শীতজনিত বিভিন্ন রোগের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। আর এ জন্য জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে সচেতনতার অভাবকে দায়ী করছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে শিশু ও বয়স্কদের জন্য আলাদা যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শিশুদের ক্ষেত্রে আলাদা যত্ন নেওয়ার পরামর্শ তাদের। শীতের সঙ্গে অপুষ্টির কারণে শিশুরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় নানা রোগে আক্রান্ত হয়। তাই শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার পাশাপাশি শিশুদের পুষ্টির দিকেও নজর দেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

বিজ্ঞাপন

শিশুদের যত্নে রাখার পরামর্শ
ঢাকা শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজওয়ানুল আহসান বিপুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। নিউমোনিয়া, ঠাণ্ডা-কাশি জ্বর নিয়ে শিশুরা বহির্বিভাগে বেশি আসছে। সেই সঙ্গে রয়েছে শীতজনিত ডায়রিয়া।’

তিনি বলেন, ‘শীতের আগে বহির্বিভাগে প্রতিদিন রোগীদের যে সংখ্যা হতো শীতের এই সময়ে সেই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে শিশুরা নিউমোনিয়া বা ডায়রিয়া আক্রান্ত। অ্যাজমা আক্রান্ত শিশুরাও আসছে। শীতে আবহাওয়া যেহেতু শুষ্ক এবং শহরে ধুলোর পরিমাণ বেড়ে যায়, তাই বাইরে বের হওয়া শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে অ্যাজমাতে।’

তিনি বলেন, ‘শীতজনিত ডায়রিয়া, ঠাণ্ডা-কাশিতে আক্রান্ত শিশুদের বাবা-মাকে একটু বেশি সচেতন এবং সতর্ক থাকতে হবে। সকাল থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত শিশুদের হালকা কুসুম গরম পানি খেতে দিতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি খাওয়াতে হবে। সেই সঙ্গে খেতে হবে রঙিন ফল।’

ঠাণ্ডা-কাশি জ্বর হলে প্রচুর তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ডা. রিজওয়ানুল আহসান বলেন, ‘পাতলা আরামদায়ক পোশাক পরাতে হবে শিশুদের। আর নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকতে হবে, কারণ তারা খুব স্পর্শকাতর। ঠাণ্ডা যেন না লাগে, গরম কাপড় সব সময় গায়ে থাকলে অনেক সময় শিশুরা ঘেমে যায় এবং সেই ঠাণ্ডাটাও কিন্তু নিউমোনিয়ার অন্যতম কারণ। তাই শিশুদের পোশাক হতে হবে নরম এবং ঢোলা জাতীয়।’

উষ্ণ আরামদায়ক কাপড়ের পাশাপাশি এ সময়ে শিশুদের মাস্ক পরাতে হবে এবং ধুলো এড়িয়ে চলতে হবে। তাইলেই এ সময়ের রোগবালাই থেকে দূরে থাকা যাবে বলে মন্তব্য করেন ডা. রিজওয়ানুল আহসান।

ঝুঁকিতে বৃদ্ধরাও
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউর) বক্ষব্যাধি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শীতজনিত রোগব্যাধি কিছুটা বাড়ে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ফুসফুসের রেজিস্ট্যান্স কম থাকে। এ কারণে শিশুদের পাশাপাশি বয়স্করাও শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘শিশু ও বয়স্কদের আবার নিউমোনিয়ায় মৃত্যুঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া যাদের সিওপিডি, ব্রংকাইটিস, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টসহ শ্বাসতন্ত্রের রোগ রয়েছে তারাও শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। যাদের ডায়বেটিস, হৃদরোগ ও কিডনি রোগ রয়েছে, তাদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। তারাও সর্দি, জ্বর ও কাশিসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হন।’

পরিবেশ দূষণেরও প্রভাব
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক শফি আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ শীতজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। আবহাওয়ার পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ, বিশেষ করে বায়ুদূষণের কারণে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন।’

তিনি বলেন, ‘শীতে শিশু ও বৃদ্ধদের অ্যাজমা, হাঁপানি, ব্রংকিওলাইটিস, নিউমোনিয়া থেকে বাঁচাতে পর্যাপ্ত গরম কাপড়সহ হাতমোজা, পা মোজা পরিয়ে রাখতে হবে। সব সময় কুসুমগরম পানি ব্যবহার করতে হবে। তারপরও যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে, শ্বাসকষ্টে ঘুমাতে না পারে, বুক স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ওঠানামা করে তাহলে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত।’

সারাবাংলা/এসবি/এমও

শিশু শীতজনিত রোগ

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর