গভীর রাতে চবি’র চারুকলা ইনস্টিটিউটে তল্লাশি
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১০:৫৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউট ‘শিল্পী রশিদ চৌধুরী’ ছাত্রাবাসে তল্লাশি চালিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পুলিশ। এসময় এক ছাত্রীকে আটক করা হয়। পরে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টার দিকে এই তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া সারাবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘চারুকলায় অবৈধ কেউ আছে কিনা সেই লক্ষ্যে তল্লাশি চালিয়েছি। ওই সময় একটা মেয়েকে পাওয়া গেছে। তাকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
চারুকলা ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থী জহির রায়হান অভি সারাবাংলাকে বলেন, ‘তালা ভেঙে পুলিশ প্রবেশ করেন। হোস্টেলে বহিরাগত কেউ আছেন কিনা এই বিষয়ে তল্লাশি করার কারণ দেখিয়েছেন। কিন্তু তারা রুমের ভেতরে আমাদের আটকে রাখেন। ওই সময়ে আমাদের এক জুনিয়র মেয়ে আরেকজন জুনিয়রের জন্য অপেক্ষা করছিল। প্রক্টর ও পুলিশ সবাইকে রুমে যেতে বাধ্য করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরে মুচলেকা নিয়ে ওই ছাত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পরে আমরা দেখতে পাই, আমাদের আন্দোলনের পোস্টার, ফেস্টুন সব ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। শিক্ষকদের অবৈধ ভবন বা ক্লাব ঘরে তালা ভেঙে নতুন একটি তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। এসব কর্মকাণ্ডে বুঝা যায় আমাদের একপ্রকার হুমকি দিয়ে চলে গেছেন। আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আজ (বৃহস্পতিবার) যদি শিক্ষকরা না আসেন, তাহলে রোববার থেকে অনশনে যাব।’
এর আগে, ঝুঁকিমুক্ত ক্লাসরুম, ভবন ও ছাত্রাবাস নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের জন্য বাস, ডাইনিং ও ক্যান্টিন চালুসহ ২২ দফা দাবিতে ২০২২ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে আন্দোলনে নামে চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। ৩ নভেম্বর থেকে তারা চারুকলা ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার এক দফার আন্দোলন শুরু করেন।
প্রায় আড়াই মাস ধরে টানা আন্দোলনে অচল হয়ে থাকা চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গত ২১ জানুয়ারি চট্টগ্রামে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এরপর আন্দোলনকারীদের নিয়ে ফটক খুলে চারুকলার ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন মন্ত্রী-উপমন্ত্রী। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে তাদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানান।
শিক্ষার্থীরা প্রথমে ক্লাসে ফিরতে অস্বীকৃতি জানালে ২২ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউটে যান। তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা সাতদিনের জন্য আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে ক্লাসে ফেরেন।
সাত দিনের ক্লাস শেষে তাদের দাবি মেনে না নেওয়ায় মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে ফটকে তালা লাগিয়ে ক্লাস ছেড়ে আবারও আন্দোলনে নেমেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
১৯৬৯ সালে শিল্পী রশিদ চৌধুরীর উদ্যোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধীনে ‘সহায়ক’ বিষয় হিসেবে শিল্পকলা বিষয় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে চারুকলা শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে রশিদ চৌধুরীকে বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত করার মধ্যদিয়ে স্বতন্ত্রভাবে এই বিভাগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শুরুতে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ড. আবদুল করিম ভবনে এই বিভাগের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হতো।
পরে ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ৪৬২তম সিন্ডিকেট সভায় ৮৬নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চারুকলা বিভাগ এবং চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজকে একীভূত করার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ২০১০ সালের ২ আগস্ট চারুকলা ইনস্টিটিউট ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নগরীর বাদশাহ মিয়া চৌধুরী সড়কে বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।
সারাবাংলা/সিসি/এমও