ছুটির দিনে ছিমছাম প্রথম প্রহর
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:৫২
জুম’আর আজান শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই ঘোষণা মঞ্চের মাইক সচল হয়ে উঠল। নারী কণ্ঠে ভেসে এলো- ‘আজ মেলা শুরু হয়েছে সকাল ১১টায়। ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বেলা ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত বইমেলা খোলা থাকবে। ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। রাত সাড়ে ৮টার পর কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবে না। আপনারা যারা ছোট্ট সোনামণিদের নিয়ে মেলায় এসেছেন, তারা মন্দির গেট দিয়ে ঢুকে হাতের ডান পাশে যান। ওখানেই শিশু চত্বর।’
আজানের ধ্বনি শূন্যে মিলে যাওয়ার পর বাংলা একাডেমির ঘোষণা মঞ্চ থেকে ভেসে আসা কথাগুলো চমৎকার একটা আবেশ তৈরি করছিল! মানুষের জন্য মানুষের এই দরদমাখা দিক-নির্দেশনা পুরো মেলা জুড়েই থাকবে। তবে মাঘের মিষ্টি দুপুরে তপোবন সদৃশ, বিহ্বলতা মোড়ানো, বৃক্ষশোভিত অমর একুশে বইমেলায় মানবীর কণ্ঠে ভেসে আসা কথাগুলোর মধ্যে অন্যরকম কিছু একটা থাকে।
মেলার তৃতীয় দিনের প্রথম প্রহর। মেলা পরিপূর্ণ আয়োজনে এখনও অনেক কিছু বাকি। তারপরও ছোট্ট সোনামণিদের নিয়ে অনেকেই মেলায় এসেছেন। শিশু চত্বরের সুসজ্জিত ও নান্দনিক স্টলগুলোতে বাবা-মায়ের হাত ধরে হাঁটছে তারা। বেলা ১১ টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত- এই দেড় ঘণ্টা শিশু ও অভিভাবকদের পদভাড়ে মুখোরিত ছিল মেলা।
বাবার হাত ধরে মেলায় আসা ছোট্ট ঋদ্ধি ঘুরে ফিরে বেশ মজা উপভোগ করছে। কারও সঙ্গে কথা বলা বা ক্যামেরায় পোজ দেওয়া একদমই পছন্দ না তার। তারপরও সারাবাংলাকে একটু সময় দিল সে।
কেমন লাগছে মেলা? ‘খু…উ…ব ভালো। বাবা আজ অফিসে যায়নি। আমাকে নিয়ে মেলায় এসেছে। দুইটা বই কিনেছি। আরও কিনব।’
কথা হয় ঋদ্ধির বাবা মিজানুর রহমানের সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ঢোকার মুখে শিশু চত্বর রেখে ভালোই করেছে। বেশি খোঁজাখুঁজি করতে হয়নি। পরিবেশটা মোটামুটি ভালো। মেলার ওদিকটায় (সাধারণ স্টল ও প্যাভিলিয়ন অংশ) আজ আর যাব না। দূর থেকেই মনে হচ্ছে প্রচুর ধূলা-বালি। যেদিন বাচ্চাকে রেখে আসব, সেদিন যাব। মেলা কর্তৃপক্ষের উচিত প্রচুর পানি ছিটানো।’
কালী মন্দির গেট দিয়ে মেলায় ঢোকার পর হাতের ডান দিকে শিশু চত্বর। বাম দিকে বাংলা একাডেমির তথ্য কেন্দ্রে। সামনে পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প। আর আশপাশে বইয়ের স্টল। একটু দূরেই স্টল-প্যাভিলিয়নের দীর্ঘ সারি। এর মাঝখানে পাঠক ও দর্শনার্থীদের বসার স্থান।
তবে কোনো কিছু পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। মেলার তৃতীয় দিন সাপ্তাহিক ছুটি পড়ে যাওয়ায় প্রকাশক, বই বিক্রেতা ও আয়োজকরা খুব ভালো করেই জানে শুক্রবার প্রচণ্ড ভিড় হবে। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই সবাই সাধ্যমতো চেষ্টা করছে মেলাটাকে গোছ-গাছ করার। স্টল-প্যাভিলিয়নে উঠানো হচ্ছে নতুন বই। বিক্রয়কর্মীরাও প্রস্তুত পাঠক এবং ক্রেতাদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে।
শুক্রবার দুপুরেও দেখা গেছে, অনেক স্টল-প্যাভিলিয়নের সাজ-সজ্জা ও কাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে। আবার মেলার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের বুথ, প্যাভিলিয়নগুলো প্রস্তুত করছে। মেলার সৌন্দর্য ও রূপবিন্যসে নিয়োজতি কর্মীরাও চেষ্টা করছেন, তাদের কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে।
সারাবাংলা/এজেড/এমও