Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মেলার সিসিমপুরে বুঁদ রাজকন্যা-রাজপুত্ররা

আসাদ জামান
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:২৩

আজ মেলায় এক ‘রাজকন্যার’ সঙ্গে দেখা হয়েছে। কি, বিশ্বাস হচ্ছে না? বিশ্বাস না হওয়ার কিছু নেই। ছুটির দিনে বইমেলার প্রথম প্রহরে (সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১টা) শিশু চত্বরে গেলে অসংখ্য রাজকন্যার সঙ্গে আপনার দেখা হয়ে যাবে। কারণ, এ সময়টা রাজকন্যা-রাজপুত্রদের জন্য বরাদ্দ থাকে।

তো যা বলছিলাম, শনিবার বেলা পৌনে ১২টা। অমর একুশে বইমেলার চতুর্থ দিনের প্রথম প্রহর। শেখ রাসেল শিশু চত্বরের সিসিমপুর মঞ্চের দিকে এগোতেই দেখি- এক ঝাঁক শিশু হামাগুড়ি দিয়ে কী যেন করছে।

দূর থেকে বোঝার চেষ্টা করলাম। কিন্তু পুরোটা বুঝে উঠতে পারলাম না। অগত্যা সিসিমপুর মঞ্চের একজন কর্মীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ওরা কী করে?’ তিনি বললেন, ওরা খেলছে। খেলতে খেলতে বর্ণ এবং অংক শেখা আরকি।’

অতঃপর সিসিমপুর মঞ্চের এই কর্মীর অনুমতি নিয়ে চারজন শিশুর সঙ্গে কথা বললাম। এদের বয়স চার থেকে ছয় বছরের মধ্যে হবে।

তোমার নাম কী?— আমার নাম গায়ত্রী প্রভা কুন্ডু, কোথা থেকে এসছ? এলিফ্যান্ট রোড থেকে। কী করছ এখানে? এখানে মজা করছি, পড়ছি, খেলছি। এখন কী করছিলে? লুডু খেলছিলাম।

তোমার নাম কী?— আমার নাম রাজকন্যা। আর কোনো নাম নেই?— না। এই রাজকন্যাই নাম?— হ্যাঁ। তোমার সঙ্গে কে এসেছে?— বাবা-মা— দুই জনই এসেছে। তারা কই?— খুঁজে তো পাই না।

যাই হোক, আদতেই তার নাম রাজকন্যা, নাকি আদর করে সবাই তাকে ওই নাম ধরে ডাকে?— বিষয়টা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ‘রাজকন্যা’র বাবা-মা’কে খোঁজ করলাম। কিন্তু পাওয়া গেল না। খুব সম্ভাবত পৃথিবীর সব বাবার মতো ‘রাজকন্যা’ তার বাবার কাছে ‘এক টুকরো রাজকন্যা’। এই নামে ডাক শুনতে শুনতে ও হয়তো ধরেই নিয়েছে ওর নাম ‘রাজকন্যা’।

তাছাড়া, সে রাজকন্যাই বটে! ওমন ফুলের পাপড়ির মতো মুখ, মায়া হরিণীর মতো চোখ, স্বর্গ থেকে পালিয়ে আসা পাখির মতো ডানা, আধো আধো বুলি, বেড়াল ছানার মতো তুলতুলে টোল পড়া গাল— ‘রাজকন্যা’ হওয়ার জন্য আর কী লাগে?

তোমার নাম কি?— অতিন্দ্রিয়া রায়, তোমার নাম— ত্রিলোচনা।

এই গায়ত্রী প্রভা কুণ্ডু, রাজকন্যা, অতিন্দ্রিয়া রায় আর ত্রীলোচনা মেলায় এসে সিসিমপুর মঞ্চে বুঁদ হয়ে আছে। ওরা খুঁজে পেয়েছে ওদের স্বর্গরাজ্য, যেখানে বাস করে হালুম, ইকরি মিকরি, শিকু’, টুকটুকি, মানিক রতন।

অমর একুশে বইমেলা গত কয়েক বছর ধরে বাচ্চাদের এই ‘ভালোলাগা’ উপহার দিচ্ছে ‘ইউএসএইড’র বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান সেসামি স্ট্রিট-এর বাংলাদেশি সংস্করণ সিসিমপুর। বইমেলায় শিশুদের জন্য সিসিমপুর একটা ক্রেজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বই কেনা এবং ঘুরাঘুরির পাশাপাশি ‘হালুম’, ‘ইকরি মিকরি’, ‘শিকু’, ‘টুকটুকি’, ‘মানিক রতন’— এ চরিত্রগুলোর সঙ্গে সরাসরি দেখা করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না শিশুরা। তাই মেলায় এলেই সিসিমপুর মঞ্চে ওঠা এবং চরিত্রগুলোর সঙ্গে দুষ্টুমিতে মেতে ওঠা তাদের কাছে সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার।

সিসিমপুরের কমিউনিকেশন অ্যান্ড পিআর অ্যাডভাইজার পলাশ মাহবুব সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর করোনার কারণে প্রথম সপ্তাহে শিশু প্রহর ছিল না। দ্বিতীয় সপ্তাহেই আমরা শিশু প্রহর শুরু করতে পেরেছিলাম। সে সময়ও আমরা প্রচুর সাড়া পেয়েছি। আর এবার তো করোনার প্রভাবটা নেই। এবার শিশুদের ব্যাপাক সাড়া পাচ্ছি। মূলত, সিসিমপুরের ‘হালুম’, ‘ইকরি মিকরি’, ‘শিকু’, ‘টুকটুকি’, ‘মানিক রতন’— চরিত্রগুলোর সঙ্গে সরাসরি দেখা করা, তাদের সঙ্গে আনন্দ শেয়ার করা শিশুদের জন্য বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ ইফোর্ট দিতে।’

মেলায় শিশুদের মধ্যে শুধু আনন্দ বিতরণ নয়, বরং বর্ণে বর্ণে শেখা, অংকে অংকে শেখা, গল্পে গল্পে শেখার সুযোগ করে দিয়েছে সিসিমপুর। পাশাপাশি দেড় শতাধিক শিশুতোষ বই প্রকাশের মাধ্যমে পাঠাভ্যাস তৈরিতেও ভূমিকা রাখছে সিসিমপুর। মেলার শিশুচত্বরে তাদের একটা নান্দনিক স্টলও রয়েছে।

পলাশ মাহবুব বলেন, ‘আনন্দ বিতরণের পাশাপাশি বই পড়ার ব্যাপারটিও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে, প্রায় দেড় শতাধিক মানসম্মত বই আমরা প্রকাশ করেছি। আমাদের স্টলে এ বই পাওয়া যাচ্ছে।’

গুলশানের নিকেতন থেকে বাবা শাকের আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে মেলায় এসেছে পাঁচ বছর বয়সী আরশিয়া সুফিয়া। সিসিমপুর মঞ্চে বেশ কিছুক্ষণ কাটানোর পর সিসিমপুর স্টল থেকে বই কিনছিল সে। বই কেনার সময়ও এক বিন্দু স্থির ছিল না আরশিয়া। ফলে তার সঙ্গে কথা বলা গেল না।

কথা হলো শাকের আব্দুল্লাহর সঙ্গে। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘মূলত, সিসিমপুরের ক্যারেক্টারগুলোর সঙ্গে দেখা করার জন্য সে বইমেলায় এসেছে। এই সুযোগে কিছু বইও কিনে দিলাম। ইউটিউব, টেলিভিশন থেকে আসক্তি কমানোর জন্য বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করা দরকার। আমাদের শৈশব যেমন কেটেছে, ওদের শৈশব তো সেভাবে কাটছে না। ওরা ঘরবন্দি হয়ে থাকে। সেজন্য সুযোগ পেলেই ওকে নিয়ে একটু বাইরে আসার চেষ্টা করি।’

খিলক্ষেত লেকসিটি কনকর্ড থেকে বাবা মো. শফিক বিন সালামের সঙ্গে মেলায় এসেছে আট বছর বয়সী সাদমান শফিক। সিসিমপুরের ‘হালুম’, ‘ইকরি মিকরি’, ‘শিকু’, ‘টুকটুকি’, ‘মানিক রতন’-দের সঙ্গে দারুণ সময় কাটানোর পর ‘পাপাই’, ‘মাদার তেরেসা’, ‘মঙ্গল মিশন’, ‘মহাবিশ্বে আমরা কি একা?’ কিনে নিয়ে বাসায় ফিরছিল সাদমান শফিক।

চমৎকার পারিবারিক শিক্ষায় শিক্ষিত সাদমানের সামনে দাঁড়াতেই সালাম দিল। কী বই কিনেছ?— জিজ্ঞেস করতেই ব্যাগ থেকে বইগুলো বের করে সামনে ধরল। বাকি কথপোকথন এমন মাদকতা জড়ানো যে, সেগুলো লেখার ভাষা আমার জানা নেই।

সাদমানের বাবা মো. শফিক বিন সালমান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ঘরে বাবা-মা বই পড়লে বাচ্চারাও পড়ে। আর যেসব বাচ্চা বই পড়ে তাদের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই মূল্যবোধ তৈরি হয়। বাচ্চাদের বই সিলেকশনের ক্ষেত্রেও অভিভাবকদের সচেতন হতে হয়। কাল্পনিক ভূত-প্রেতের গল্প দিয়ে বাচ্চাদের মানস গঠন হয় না।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

অমর একুশে বইমেলা বইমেলা ২০২৩ সিসিমপুর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর