‘বিএনপি এখন হাঁটছে, ভবিষ্যতে হামাগুড়ি দেবে’
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২১:১৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আগামী নির্বাচন পর্যন্ত নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজপথের দল। খোঁচা দিলে দিয়াশলাইয়ের কাঠির মতো আমাদের নেতাকর্মীরা জ্বলে ওঠে। তারা (বিএনপি) আমাদের খোঁচা দিয়েছে, আমরা জ্বলে উঠেছি। আমরা রাজপথে নেমেছি, নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে থাকবো। নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনা ছাড়া নেতাকর্মীরা আর ঘরে ফিরে যাবে না।’
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি তালেবানদের সঙ্গে ঐক্য করেছিল মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২০০৮ সালে সারাবিশ্বের কাছে প্রশংসিত নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি পূর্ণশক্তি দিয়ে আসন পেয়েছিল ২৯টি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ডান-বাম, অতিডান-অতিবাম, তালেবানসহ সবাইকে নিয়ে ঐক্য করে তারা আসন পেয়েছিল মাত্র ৬টি। তারা বুঝতে পেরেছে আগামী নির্বাচনেও কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই তারা এখন নানা বাহানা করছে।’
‘যদিও তারা এখন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের বাহানা করছে, সুযোগ পেলেই আবার নাশকতা করবে, জনগণকে ছোবল মারবে। সেই অপচেষ্টার অংশ হিসেবে তারা আজ দেশের আটটি স্থানে সমাবেশ করেছে। আমাদের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায় আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রতিহত করবে।’
১০ ডিসেম্বর ১০ লাখ মানুষের সমাবেশের নামে বিএনপি ঘোড়ার ডিম পেড়েছিল- এমন মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সমাবেশের নামে বিএনপির পরিকল্পনা ছিল ঢাকা শহরে বোমাবাজি করে বিশৃঙ্খলা করা। আমরা ঢাকা শহরে সতর্ক পাহারায় ছিলাম। তারা যে মাঠে সমাবেশ করলো সেখানে মানুষ ধরে সর্বসাকুল্যে ২৫ হাজার। আশপাশের জায়গাসহ ধরে নিলাম ৪৫ হাজার মানুষের একটি সমাবেশ করল। ফেসবুকে মানুষে বলে, ১০ তারিখ বিএনপি ঘোড়ার ডিম পেড়েছিল।’
বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে ‘কটাক্ষ’ করে আওয়ামী লীগ নেতা হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এবার বিএনপি দিল হাঁটা কর্মসূচি, পদযাত্রা। মানুষ বলে বিএনপির মনে হয় দম ফুরিয়ে গেছে। এজন্য এখন মিছিলের পরিবর্তে হাঁটা শুরু করছে। দুর্মুখেরা বলছে, বিএনপি ভবিষ্যতে হামাগুড়ি দেওয়া শুরু করবে।’
‘মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাস সাহেবরা সরকারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবেন বলেছিলেন। আওয়ামী লীগের ভিত বহু গভীরে, আওয়ামী লীগকে কেউ ধাক্কা দিলে সে নিজে পড়ে যায়। সুতরাং তারা ধাক্কা দিতে গিয়ে কোমর ভেঙে পড়ে গেছে। এখন বলছে, আমরা কাউকে আর ধাক্কা দিতে চাই না। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে চাই।’
বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা নির্বাচনে আসুন। আপনারা নির্বাচনকে বয়কট করবেন, নির্বাচনকে ভয় পাবেন, আপনাদের নির্বাচনের ট্রেনে তোলার দায়িত্ব আমাদের নয়। বিএনপি চায় এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা, যে ব্যবস্থা তাদের ক্ষমতায় বসানো নিশ্চিত করবে। সেই ধরনের নির্বাচন বাংলাদেশে হবে না। বাংলাদেশে হবে অবাধ সুষ্ঠু স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।’
সমাবেশে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘তারেক জিয়া নিজের মা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও বেঈমানি করেছেন। অসুস্থ অবস্থায় বেগম জিয়া যখন লন্ডনে ছিলেন, তখন তাকে তারেক জিয়া নিজের বাড়িতে নেননি। তারেক জিয়া জানেন তিনি দেশে ফিরতে পারবেন না। তিনি চান না বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ক্ষমতায় আসুক। কিন্তু এই সত্যটি এখনও বিএনপির অনেক নেতাকর্মীই বোঝেন না। তারা শয়তান তারেক জিয়ার মুরিদ হয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে আমরা ঐক্যবদ্ধ। আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকেই নৌকা প্রতীক দেবেন, আমরা তাকে বিজয়ী করতে বদ্ধপরিকর।’
নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক হাসান মাহমুদ হাসনীর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ-সভাপতি নঈম উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বদিউল আলম, অবদুচ সালাম, নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী ও চন্দন ধর।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ
শনিবার বিকেলে নগরীর লালদিঘীর পাড় এলাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দেশ যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই বিএনপি-জামাতসহ একটি গোষ্ঠী সেই অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছে। এই অপশক্তিকে প্রতিহত করার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের আপামর জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতা মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, মোহাম্মদ ইদ্রিছ, মির্জা কচির উদ্দিন, জহির উদ্দিন, মোছলেহ উদ্দিন মনছুর, আবু জাফর, আবদুল কাদের সুজন, বোরহান উদ্দিন এমরান, আব্দুল হান্নান মঞ্জু, ছিদ্দিক আহমদ, বিজন চক্রবর্তী, নাছির আহমদ, নুরুল আমিন চৌধুরী, কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, শামীমা হারুন লুবনা, দিদারুল ইসলাম চৌধুরী, জহুরুল হক চৌধুরী জহুর বক্তব্য রাখেন।
দামপাড়ায় লাঠি হাতে মিছিল-সমাবেশ
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিমের উদ্যোগে শনিবার বিকেলে নগরীর দামপাড়া এম এম আলী রোডে অবস্থান কর্মসূচি, যুব সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এম আর আজিমের সভাপতিত্বে ও সাবেক ছাত্রলীগ আলী রেজার সঞ্চালনায় সমাবেশে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, নগর কৃষক লীগের সহ সভাপতি বিপ্লব মিত্র, যুবলীগ নেতা হাবিব উল্লাহ নাহিদ, আসহাব রসূল চৌধুরী জাহেদ, মেজবাহ উদ্দিন নোবেল, নগর ছাত্রলীগের সহ সভাপতি একরামুল হক রাসেল, মাঈনুল হাসান চৌধুরী শিমুল, যুগ্ম সম্পাদক অমিতাভ চৌধুরী বাবু, কবির আহমদ, আবুল মনছুর টিটু, মিন্টু কুমার দে, মনির আলম, তুষার ধর, সাব্বির সাকির, কামরুল হুদা পাবেল বক্তব্য রাখেন।
ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সমাবেশ
শনিবার দুপুরে নগরীর জিইসি মোড়ে সন্ত্রাস-নৈরাজ্যবিরোধী সমাবেশ ও মিছিল করেছে ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সম্পাদক ও কলেজ শাখার সভাপতি হাবিবুর রহমান তারেকের সভাপতিত্বে সমাবেশে ওসমান গণি আলমগীর, আব্দুর রাজ্জাক, ইয়াছিন আরাফাত কচি, আশরাফুল আলম টিটু, এম এ হালিম মিতু, সরফুর আনাম জুয়েল, সৈয়দ আনিসুর রহমান, তোফায়েল আহমেদ মামুন, হাসান আলী, শাখায়াত হোসেন অপু, সাইদুর রহমান শাকিল, ইমাম উদ্দীন নয়ন, নুরনবী সাহেদ, রাকিব হায়দার, শাহাদাত হোসেন হিরা, আব্দুল্লাহ আল আহাদ, নুরউদীন তুফান, আজিজুর রহমান আজিজ, ইমাম হোসেন ইমন, আবু সাঈদ মুন্না, শেখ নেওয়াজ উদ্দীন ফাহাদ, সালাউদ্দিন কাদের আরজু, মো. জিয়া, রাইসুল ইসলাম আকাশ, সোহেল তালুকদার, মহিউদ্দিন মাহি, ইউসুফ আলী বিপ্লব, জাবেদ রহিম মুন, ওমর গনি, নুরুল আবছার রাফি, নিলয় চৌধুরী নিহাল, শ্রাবণ বড়ুয়া, রাইহান উদ্দীন ইশান বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে বক্তারা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রামে প্রতিরোধের দূর্গ তৈরি করে বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের জবাব দেয়া হবে বলে জানান।
সারাবাংলা/আরডি/এনএস