Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বস্তি ফিরেছে বইমেলায়

আসাদ জামান
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:৫১

মেলার প্রথম দিন গেছে ‘যাচ্ছে তাই’, দ্বিতীয় দিন ‘সামান্য উন্নতি’ আর তৃতীয় দিনটা ‘ধুলায় ধূসর’। সঙ্গত কারণেই চতুর্থ দিনটা নিয়ে পজিটিভ কিছু মাথায় আসছিল না। কিন্তু পরিস্থিতি সবসময় একরকম থাকে না। যথা নিয়মেই বদলায়। সেটা হতে পারে প্রকৃতির নিয়মে অথবা মানুষের ত্যাগে-শ্রমে-ঘামে-প্রচেষ্টায় কিংবা বিপ্লব-বিদ্রোহ-প্রতিবাদ-প্রতিরোধে।

মেলার চতুর্থ দিন শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের বঙ্গমাতা চত্বরের সামনে একজন নর এবং একজন নারীর দেখা মিলল। প্রথম জনের হাতে কাঠের একটা দণ্ড। দণ্ডের মাথায় লোহার সূচালো আঁকড়ি। ‘ভদ্রজনেরা’ মেলা জুড়ে যে ছোট ছোট কাগজ, মোড়ক, প্যাকেট, সিগারেটের খোসাসহ নানা কিসিমের বর্জ্য ফেলে গেছেন, সেগুলো তিনি ওই সূচালো আঁকড়ি দিয়ে শিকার করছেন এবং সঙ্গে থাকা সহকর্মীর বস্তায় পুরে দিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

আর নারীটি মেলার মাঠে পড়ে থাকা ছোট ছোট কষ্টদায়ক পাথর, ইটের টুকরো, কাঠের খণ্ড, পেরেক, তারকাটা, টিনের ধারালো ক্ষুদ্রাংশ হাত দিয়ে তুলে বস্তায় রাখছেন। যাতে করে ভদ্রশ্রেণি অর্থাৎ অভ্যাসগত কারণে যারা এই পৃথিবীটাকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলেন, তাদের যেন কষ্ট না হয়।

এই দুই নর-নারীর ‘অতি তুচ্ছ’ কর্মটি দেখার পর কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘শ্রম কিনাঙ্ক কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি তলে/ত্রস্তা ধরণী নজরানা দেয় ডালি ভরে ফুল-ফলে’— লাইন দু’টি মনে পড়ে গেল। কারণ, মেলা শুরুর দিন যে পরিমাণ নির্মাণবর্জ্য উদ্যান জুড়ে পড়ে থাকতে দেখেছি, তা তো আমাদের মতো ‘ভদ্রজনেরা’ সাফ করেনি। এই অতিশয় ক্ষীণ-শীর্ণ-ক্ষয়িত-কৃশ দেহবিশিষ্ট এবং মলিন বস্ত্র পরিহিত নর-নারীরাই সাফ করেছেন। আর তাই মেলার চতুর্থ দিনে এসে একটা স্বস্তিদায়ক পরিবেশ পেয়েছি আমরা সবাই।

বিজ্ঞাপন

 

কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করলে একজন জানালেন তার নাম রতন রায়। পুরো মেলার আবর্জনা সরাতে তারা ২০ জন কাজ করছেন। এদের মধ্যে ১৮ জন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। অপর দু’জন বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে।

রতন রায়েরা বইমেলার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত— বিষয়টি এমন নয়। তারা বাংলা একাডেমির স্থায়ী কর্মী। সারাবছর যেমন তেমন, মেলার একমাস তাদের নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় থাকে না। মেলা শেষে সবাই যখন ঘরে ফেরে, তখন তারা নেমে পড়েন আবর্জনা সরানোর কাজে। আবর্জনা বাড়লে তাদের শ্রমঘণ্টাও বাড়ে। অর্থাৎ আমরা যত আবর্জনা ফেলব, রতনদের নির্ঘুম রাতের ব্যপ্তি তত বাড়বে।

মেলার চতুর্থ দিনে বিকেলে এসে স্বস্তিদায়ক পরিবেশ পেয়ে কবি-লেখক-সাহিত্যিক-প্রকাশক-পাঠক-দর্শনার্থী— সবাই খুশি। ফলে ঘুরে-ফিরে মেলা দেখা এবং বই কেনা সমানতালে চলেছে। প্রথম তিন দিনের চেয়ে শনিবার বই বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে।

ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)-এর প্রধান বিক্রয়কর্মী ইউসুফ আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত তিন দিনের তুলনায় আজ বিক্রি বেশি, মেলার পরিবেশটাও সুন্দর।’

সিসিমপুর স্টলের বিক্রয় কর্মী তোয়া মণি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ অনেক বই বিক্রি হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দিন বই বিক্রি ছিল খুবই কম। গতকাল থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। আজকে বিক্রি সবচেয়ে বেশি।’

জার্নিম্যান বুকসের বিক্রয় কর্মী আরেফিন সোহাগ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেলার পরিবেশ খারাপ হলে পাঠক-দর্শনার্থী ঢুকেই বেরিয়ে যেতে পারেন। কিন্ত আমরা যারা দায়িত্ব পালন করি, তারা তো আর বেরিয়ে যেতে পারি না। কষ্ট হলেও ৭/৮ ঘণ্টা থাকতে হয়। তাই আমাদের জন্যই মেলার স্বস্তিদায়ক পরিবেশটা বেশি প্রয়োজন। সেদিক থেকে বলা যায় আজই প্রথম সুন্দর ও পরিপাটি বইমেলা পেলাম। বই বিক্রিও হচ্ছে মোটামুটি। আজ আপনারা যখন লিখবেন- মেলার পরিবেশ সুন্দর হয়ে গেছে, কাল পাঠক এবং দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে।’

বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্যমতে, মেলার চতুর্থ দিনে নতুন বই এসেছে ১১৩টি। এদিন প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য নুতন বই এনেছে ছয়টি।

বইমেলার চতুর্থ দিন বিকেল ৪ টায় বাংলা একাডেমির মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘ড. আকবর আলি খান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আমিনুল ইসলাম ভুইয়া। আলোচনায় অংশ নেন ফারুক মঈনউদ্দীন, মো. মোফাকখারুল ইকবাল এবং কামরুল হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদ সাদিক।

প্রাবন্ধিক বলেন, ‘ড. আকবর আলি খান প্রশাসনের বহু পদে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। মুজিবনগর সরকারে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ছিলেন। বহুকাল তিনি অর্থসচিব হিসেবে কাজ করেছেন। সরকারি প্রাশাসনের শীর্ষপদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন। বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টাও ছিলেন। সরকারি প্রশাসনিক কর্মে এসব সাফল্য সত্ত্বেও মনে করা যায় যে, আকবর আলি খানের মূল পরিচয় তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখাজোখায় ছড়িয়ে আছে। তিনি অত্যন্ত উঁচু মানের সৃষ্টি রেখে গেছেন।

সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘অর্থনীতি, ইতিহাস নৃবিজ্ঞান ও সাহিত্য নিয়ে গভীর জ্ঞানতাত্ত্বিক আলোচনা ড. আকবর আলি খানকে যেমন অমর করেছে, তেমনি বাঙালি জাতিকে করেছে ঋদ্ধ। এমন একজন বিবেকবান, স্পষ্টভাষী, সৎ ও নির্মোহ মানুষ আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য নিঃসন্দেহে অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবেন।’

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন ফারুক হোসেন, আবদুল বাছির, ইসহাক খান এবং আফরোজা সোমা।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি অসীম সাহা, অঞ্জনা সাহা এবং ফরিদ কবির। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মো. রফিকুল ইসলাম, অলোক কুমার বসু এবং মিজানুর রহমান সজল। এছাড়া ছিল গোলাম কুদ্দুছ-এর নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বহ্নিশিখা’র পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী দিল আফরোজ রেবা, চন্দনা মজুমদার, আব্দুল লতিফ শাহ এবং শাহ আলম দেওয়ান।

যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন তুলসী সাহা (তবলা), ডালিম কুমার বড়ুয়া (কী-বোর্ড), রতন কুমার রায় (দোতারা), মো. ফায়জুর রহমান (বাঁশি)।

আগামীকাল অমর একুশে বইমেলার ৫ম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘সমরজিৎ রায় চৌধুরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জাহিদ মুস্তাফা। আলোচনায় অংশ নেবেন মইনুদ্দীন খালেদ, মুস্তাফা জামান এবং আনিসুজ্জামান সোহেল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন শিল্পী হাশেম খান।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

বইমেলা ২০২৩

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভারত থেকে ফিরলেন ৯ বাংলাদেশি তরুণী
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৩

আজ জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:০৪

সবজি-মুরগির বাজার চড়া, অধরা ইলিশ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:১০

সম্পর্কিত খবর