ঢাকা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী সংঘটিত গণহত্যার জন্য দেশটিকে প্রকাশ্য ক্ষমা চাইতে বলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল পাকিস্তান। আমিও পরিষ্কার করে বলেছি যে আগে আপনারা (পাকিস্তান) ১৯৭১ সালে গণহত্যার বিষয়ে পাবলিকলি ক্ষমা চান। তবেই সম্পর্কন্নোয়ন সম্ভব।’
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে ফিরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
শ্রীলঙ্কার ৭৫তম জাতীয় দিবস উদযাপনে জন্য শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) দেশটিতে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এসময় কলম্বোতে গত শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রব্বানি খানের বৈঠক হয়।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালুচ টুইটারে দু’টি স্থিরচিত্র, একটি ভিডিও চিত্রসহ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে হিনার বৈঠকের বিষয়টি প্রকাশ করেন। তার দাবি, দুই মন্ত্রী অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক বিষয়সহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বৈচিত্র্যময় ক্ষেত্রে পরস্পরের জন্য লাভজনক হয়, এমন সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
তবে বৈঠক বিষয়ে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘উনি (পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) আমাকে বলেছেন আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চান। আমি পরিষ্কার করে বলেছি যে আগে আপনারা আগে ১৯৭১ সালে গণহত্যার বিষয়ে পাবলিকলি ক্ষমা চান। তবেই সম্পর্কন্নোয়ন সম্ভব। সবার আগে ক্ষমা চাইতে হবে।’
ক্ষমা চাওয়ার বিষয় বললে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কী জবাব দিয়েছেন?- এমন প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি কিছু বলেননি বরং বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতেও আগ্রহী বলে হিনা খান জানিয়েছেন। আমি পাল্টা জানতে চেয়েছি, পাকিস্তান বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক দিয়ে রেখেছে। তাহলে বাণিজ্য কীভাবে বাড়বে?’
শ্রীলঙ্কায় নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. বিমলা রাই পোডেলের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নেপালের মন্ত্রী দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চেয়েছেন। জবাবে মোমেন বিষয়টি ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার জন্য নেপালের মন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছেন জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ এই বিষয়ে নেপালের পাশে থাকবে।’
এছাড়া শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া বাংলাদেশের ২০ কোটি ডলারের ঋণ সেপ্টেম্বর থেকে ফেরত পাওয়া যেতে পারে। তারা ধীরে ধীরে ভালো করছে। আমরা তাদের সেপ্টেম্বরে ঋণ পরিশোধের সময় দিয়েছি। ইনশা আল্লাহ তারা দিয়ে দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে বৌদ্ধ-অধ্যুষিত শ্রীলঙ্কার সম্পর্ক ভালো। তাই এসব বৈঠকে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে শ্রীলঙ্কার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হয়েছে ২০১৪ সালে, নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে। ২০১৬ সালে ১৯তম সম্মেলন পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও গত সাত বছরে কোনো সম্মেলন হয়নি।