মোছলেমের জন্য চট্টগ্রামে শোক
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৩৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: যে শহরের মাটিতে রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছিল মোছলেম উদ্দিন আহমেদের, নানা আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছিলেন, চিরদায়ের ক্ষণে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন সেই শহরে তার রাজনৈতিক সতীর্থ আর শিষ্যরা। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে চট্টগ্রামে শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই নগরীর লালখান বাজারে তার বাসভবনে নেতাকর্মীরা ভিড় জমাতে শুরু করেন।
সাংসদ মোছলেমের মৃত্যুতে তার নির্বাচনী আসন চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) এলাকার লোকজন অপেক্ষা করছেন তাদের জনপ্রতিনিধিকে একবার শেষ দেখার জন্য, যিনি আমৃত্যু বোয়ালখালীবাসীর প্রাণের দাবি কালুরঘাট সেতু নিয়ে সোচ্চার ছিলেন।
মোছলেম উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে চট্রগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভাপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, আমার বাবা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং মোহাম্মদ ইউনুস মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে একসঙ্গে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে নির্যাতন সহ্য করেছেন। সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি মাঠে, ময়দানে, রাজপথে, আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে সংগ্রামী ভুমিকা রেখেছেন। কয়েকদিন আগেও জননেত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রামের জনসভা সফল করতে তিনি চিকিৎসা-বিশ্রাম বাদ দিয়ে রাতদিন পরিশ্রম করেছেন। এতে তিনি বেশ ক্লান্ত হয় পড়েন, কিন্তু আওয়ামী লীগের সম্মেলনে অসুস্থ শরীর নিয়েও উপস্থিত ছিলেন। তার মৃত্যুতে জাতি একজন নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ হারালো। এই ক্ষতি অপূরণীয়।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শাহআলম এবং চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অশোক সাহা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগ নেতা মোছলেম উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সিপিবির পক্ষ থেকে পাঠানো শোকবার্তায় বলা হয়েছে, মোছলেম উদ্দিন আহমেদ একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। ষাটের দশকে পাকিস্তান বিরোধী উত্তাল আন্দোলনের গর্ভ থেকে যেসব রাজনৈতিক কর্মী উঠে এসেছেন, তাদের মধ্যে মোছলেম উদ্দিন একজন। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকার পরও তিনি সবসময় সৌহাদ্যপূর্ণ সহাবস্থানের রাজনীতির চর্চা করে গেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়কারী বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার।
প্রয়াতের নিকটাত্মীয় এজাজ মাহমুদ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, মোছলেম উদ্দিন আহমেদের প্রথম জানাজা সকাল ১১টায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। হেলিকপ্টারে করে প্রয়াতের মরদেহ সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে নেওয়া হবে। বাদ আছর বোয়ালখালী পৌরসভার গোমদণ্ডী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাজা হবে। এরপর তার মরদেহ লালখান বাজারের বাসভবনে রাখা হবে।
মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় নগরীর জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তৃতীয় জানাজা শেষে গরীবউল্লাহ শাহ মাজারে মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
দূরারোগ্য ক্যান্সারে ভুগছিলেন ৭৫ বছর বয়সী এ রাজনীতিক। তিনি স্ত্রী, চার মেয়ে রেখে গেছেন।
আরও পড়ুন: এমপি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ আর নেই
সারাবাংলা/আরডি/ইআ