‘দেশপ্রেম ও কর্তব্যবোধ মোসলেম উদ্দিনকে স্মরণীয় করে রাখবে’
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:৪২
ঢাকা: দেশপ্রেম ও জনগণের প্রতি কর্তব্যবোধ সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন আহমেদকে স্মরণীয় করে রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতি করে উঠে এসেছেন মোসলেম উদ্দিন। তার রাজনীতিতে কখনো কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। মুক্তিযুদ্ধসহ সকল লড়াই-সংগ্রামে তিনি সক্রিয় ছিলেন এবং সাহসী ভ‚মিকা রেখেছেন।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এই আলোচনায় আরো অংশ নেন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শাহাজান খান, ড. হাছান মাহমুদ ও আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গা, আনিসুল ইমলাম মাহমুদ ও কাজী ফিরোজ রশিদ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ। তিনি দেশ জাতি ও দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমাদের জন্য অপুরণীয় ক্ষতি হলো।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, চলতি সংসদে এই পর্যন্ত আমরা আওয়ামী লীগের ২১ জন সংসদ সদস্য হারিয়েছে। জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের সংসদ সদস্যরাও মারা গেছেন। আমি তাদের জন্য বেহেস্তের সর্বোচ্চ স্থানদানের প্রার্থনা করছি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিনের রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশপ্রেম ও জনগণের প্রতি তার কর্তব্যবোধ সংসদ সদস্যদের আলোচনায় উঠে এসেছে। তিনি দুঃসময়ে দলের পাশে ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। যুদ্ধ চলাকালে অপারেশন চালাতে গিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী ও তিনি একত্রে ধরা পড়েছিলেন। সেখান থেকে বুদ্ধির জোরে পালিয়ে এসে আবারো যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘পঁচাত্তরের বর্বর হত্যাকাণ্ডের পর তিনি প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার ভোট চুরিসহ সব ধরনের আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ছিলেন। সারাদেশে নেতা-কর্মীদের প্রতি হত্যা নির্যাতন হলেও তিনি কখনো আওয়ামী লীগ থেকে বিচ্যুতি হননি। জাতীয় স্বার্থে তিনি অনেক অবদান রেখে গিয়েছেন।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার জন্য সারাজীবন কাজ করে গেছেন মোসলেম উদ্দিন। মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলনে তিনি সামনের কাতারে ছিলেন। তিনি কখনও অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। প্রতিটি স্থানে অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে গেছেন এই সংসদ সদস্য।’
জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও রাজনীতির প্রতি তিনি সারা জীবন ছিলেন অবিচল। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠানের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। তার রাজনৈতিক জীবন একটি ইতিহাস।’
তার মৃত্যু দেশের রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের জন্য বড় ক্ষতি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিবিদের কেমন হওয়া উচিত, তার উদাহরণ মোসলেম উদ্দিন আহমেদ। তিনি চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তার মতো নেতার কাছ থেকে শেখার অনেক কিছু রয়েছে।’
শোক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও সর্বসম্মতভাবে তা গ্রহণের পর মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এর আগে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরাবতা পালন করা হয়। তার মৃত্যুতে সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী দিনের অন্যান্য কার্যসূচি স্থগিত রেখে সংসদ অধিবেশন মূলতবি করা হয়। আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় আবারও সংসদেও অধিবেশন বসবে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে