বইমেলার গোছগাছ শেষ, অপেক্ষা ছুটির দিনের
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০০:০১
গত বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার পর্দা ওঠার পর এরইমধ্যে সাত দিন পার হয়ে গেছে। প্রথম তিন দিন বইমেলার অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। চুতর্থ দিন থেকে একটু একটু করে মেলা স্বরূপে ফিরতে শুরু করে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ দিনেও কোনো কোনো স্টল-প্যাভিলিয়নের কাজ চলতে দেখা যায়। তবে সপ্তম দিন মঙ্গলবার এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে দেখা গেছে বইমেলার গোছগাছ শেষ। এবার অপেক্ষা ছুটির দিনের।
এবারের বইমেলা শুরু হয়েছে বুধবার। ফলে তৃতীয় ও চতুর্থ দিন ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তবে ওই দুই ছুটির দিনে বইমেলা সম্পূর্ণ প্রস্তুত না হওয়ায় স্টল-প্যাভিলিয়নে খুব বেশি বই দেখা যায় নি। বিশেষ করে নতুন বই ছিল খুবই কম। কিন্তু এই মুহূর্তে মেলার সবগুলো স্টল-প্যাভিলিয়ন নতুন পুরোন বইয়ে পরিপূর্ণ। পাঠকের মন জয় এবং জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে প্রস্তুত অমর একুশে বইমেলা।
বইমেলার বেশ কয়েকটি স্টল ও প্যাভিলিয়নে কর্মরত বিক্রয়কর্মী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাত দিন বয়সী মেলার দুইদিন মোটামুটি ভালো বিক্রি হয়েছে। সপ্তম দিনেও বই বিক্রি হয়েছে মোটামুটি। এখন তারা অপেক্ষায় আছেন সামনের দুই ছুটির দিনের। ওই দিনগুলোতে প্রচুর বই বিক্রি হবে— এমনটিই প্রত্যাশা তাদের।
বাংলা প্রকাশের অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার মো. নুরুন নবী বাবু সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেলার প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে সাত/আট দিন লেগে যায়। সেই হিসেবে আজ থেকে পরিপূর্ণ মেলার স্বাদ আমরা পাচ্ছি। আগামী শুক্রবার ও শনিবারের অপেক্ষায় আছি আমরা। আশা করি ওই দুই দিন প্রচুর লোক মেলায় আসবে। বই বিক্রিও বাড়বে।’
আজ বিক্রি কেমন?— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মোটামুটি ভালো। বিশেষ করে গত দুই বছরের চেয়ে এবারের বই বিক্রির অবস্থা ভালোই বলা চলে। তবে কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বইয়ের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে পাঠকদের মধ্যে একটু অসন্তোষ কাজ করছে।’
প্রথমা প্রকাশনীর এক বিক্রিয় প্রতিনিধি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বরাবরই আমাদের বিক্রি ভালো হয়। এবারও খারাপ হচ্ছে না। তবে প্রথম ছয়/সাত দিন তো আমরা প্রস্তুতি পর্ব হিসেবেই ধরে রাখি। আশা করছি আগামী শুক্র ও শনিবার পরিপূর্ণ মেলার স্বাদ পাব।’
প্রায় প্রতিদিনই মেলায় আসা কবি আব্দুল মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ, কাল, আর পরশু বইমেলায় আমাদের মতো বয়স্ক মানুষের জন্য অনুকুল পরিবেশ থাকবে। শুক্র-শনিবার প্রকাশক ও বই বিক্রেতাদের অনুকুলে থাকবে। কারণ, ওই দুই দিন মেলায় মানুষের ঢল নামবে, বিক্রিও বেশি হবে।’
পাললিক সৌরভের বিক্রয়কর্মী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শুক্র-শনিবারের অপেক্ষায় আছি। আসা করছি ওই দুই দিন প্রচুর লোক মেলায় আসবে। বইও বিক্রি হবে প্রচুর।’
মূল মঞ্চের অনুষ্ঠান
বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘মাহবুব তালুকদার’ শীর্ষক স্মরণসভা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গাজী রহমান। ‘আলী ইমাম’ শীর্ষক স্মরণ সভায় আহমাদ মাযহার লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন মোকারম হোসেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. নিমাই ম-ল, আমীরুল ইসলাম এবং ওমর কায়সার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফরিদুর রেজা সাগর।
প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, ‘জীবনের বিচিত্র বিকাশে এবং ব্যক্তিত্বের বহুতর প্রকাশে মাহবুব তালুকদারের অবস্থান তার অবিচল দৃঢ়তা এবং আত্মবোধের প্রতি পূর্ণ আস্থাই প্রমাণ করে। তিনি বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের অন্যতম প্রধান রূপকার ও ছোটোগল্পের পারঙ্গম লেখক। অপরদিকে, পাঠ্যপুস্তকের নানা অনুশাসনের বাইরে শিশু-কিশোরদের অনাবিল আনন্দ দান ও তাদের জ্ঞানতৃষ্ণা মেটানোর দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে গেছেন আলী ইমাম। তার শিশুসাহিত্যপ্রীতি কেবল লেখালেখিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বিস্তৃত ছিল বেতার-টিভির ছোটোদের অনুষ্ঠান পরিচালনা ও উপস্থাপনা থেকে শুরু করে শিশুসংগঠনের প্রতিষ্ঠা ও বিকাশ পর্যন্ত।
সভাপতির বক্তব্যে ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, আলী ইমাম ও মাহবুব তালুকদার বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল দুটি নাম। তারা তাদের চিন্তা, চেতনা ও সাহিত্যকর্ম দিয়ে আমাদের মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন আবুল কাসেম, সাকিরা পারভীন, জালাল ফিরোজ এবং পলাশ মাহবুব।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি জাহিদুল হক, গোলাম কিবরিয়া পিনু এবং ইউসুফ রেজা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী কাজী মাহতাব সুমন, নায়লা তারান্নুম চৌধুরী এবং সংগীতা চৌধুরী।
সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী তপন মজুমদার, মনোতোষ চক্রবর্তী, শামসেল হক চিশতি, এ এইচ এম সালাউদ্দিন, অণিমা মুক্তি গোমেজ, মো. মোখলেসুর রহমান এবং মো. মুরাদ হোসেন। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন দীপক কুমার দাস (তবলা), রবিনস্ চৌধুরী (কী-বোর্ড), রতন কুমার রায় (দোতারা), মো. হাসান আলী (বাঁশি) এবং বিশ্বজিৎ সেন (মন্দিরা)।
আগামীকাল অমর একুশে বইমেলার অষ্টম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩ টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি: ওস্তাদ আলী আকবর খান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সাইম রানা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন কমল খালিদ এবং আলী এফ. এম. রেজওয়ান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন শেখ সাদী খান।
সারাবাংলা/এজেড/একে