Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইংরেজিতে ‘খারাপ ফল’ পিছিয়ে দিল চট্টগ্রামকে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:৪৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনা মহামারি এবং বন্যার কারণে নির্ধারিত সময়ের পর অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের এইচএসসি পরীক্ষায় নয় শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে পাসের হারে সপ্তম স্থান অধিকার করেছে চট্টগ্রাম।

ময়মনসিংহ ও দিনাজপুর থেকে সামান্য এগিয়ে থাকা চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষার্থীরা সামগ্রিকভাবে ইংরেজিতে খারাপ ফল করেছে।

শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইংরেজি প্রথমপত্রে প্রায় ১০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় পত্রে ১৭ শতাংশেরও বেশি পরীক্ষার্থী ফেল করেছেন। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা তিন বিভাগের পরীক্ষার্থীরাই ইংরেজিতে খারাপ ফল করায় সামগ্রিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে। এছাড়া অর্থনীতি প্রথম পত্রেও প্রায় ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে।

তবে কর্মকর্তারা করোনাকালের ২০২০ ও ২০২১ শিক্ষাবর্ষের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে এবারের ফলাফলের তুলনা না করার অনুরোধ করেছেন। তারা বলেছেন, ২০১৮ ও ২০১৯ সালের সঙ্গে তুলনা করলে এবার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড এগিয়ে গেছে।

করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি। জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়নে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করে। ২০২১ সালেও একই কারণে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে পিছিয়ে ডিসেম্বরে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে ছয়টি পত্রে এইচএসসি পরীক্ষা হয়েছিল। সেবার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

২০২২ সালে বন্যার কারণে পরীক্ষা পিছিয়ে শুরু হয় ৬ নভেম্বর থেকে । নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে এবারও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অর্থাৎ বাংলা, ইংরেজি ও গ্রুপভিত্তিক নৈর্বাচনিক তিনটি বিষয় এবং একটি ঐচ্ছিক বিষয়ে পরীক্ষা হয়। বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এইচএসসি পরীক্ষার ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবার পাসের হার ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল ৬২ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীন চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা, কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলা মিলিয়ে এবার পরীক্ষার্থী ছিল ৯১ হাজার ৯৬০ জন। পাস করেছে ৭৪ হাজার ৩২ জন। এর মধ্যে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৮২ দশমিক ৭১ শতাংশ, কক্সবাজারে ৭৪ দশমিক ৯২, রাঙামাটিতে ৭৫ দশমিক ৩৩, খাগড়াছড়িতে ৬৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং বান্দরবানে পাসের হার ৮১ দশমিক ২০ শতাংশ।

বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯১ দশমিক ৩০ শতাংশ, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৮৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং মানবিক বিভাগে পাসের হার ৭৩ দশমিক ০৩ শতাংশ।

বিষয়ভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে কম পরীক্ষার্থী পাস করেছে অর্থনীতি প্রথম পত্রে, ৭৯ দশমিক ৭১ শতাংশ। ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে ৮২ দশমিক ৯৬ ও প্রথম পত্রে ৯০ দশমিক ৭৩ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। যুক্তিবিদ্যায় ৮৯ দশমকি ৬০ শতাংশ পাস করেছে। বাকি অধিকাংশ বিষয়ে পাসের হার ৯০ শতাংশের ওপরে প্রায় শতভাগের কাছাকাছি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০১৮ ও ২০১৯ সালের ফলাফলের সঙ্গে তুলনা করলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড এবার ভালো করেছে। তবে অন্যান্য শিক্ষাবোর্ডের চেয়ে আমাদের পিছিয়ে থাকার কারণ হচ্ছে, ইংরেজি প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্রে পরীক্ষার্থীরা তুলনামূলক রেজাল্ট খারাপ করেছে। প্রান্তিক পর্যায়ে ইংরেজিতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের সংকট আছে। মানসম্মত পাঠদানের বিকল্প নেই। তারপরও আমরা বিষয়টি যাচাইবাছাই করে দেখবো।’

বিজ্ঞাপন

পাসের হারে এবারও ছাত্রীরা ছাত্রদের চেয়ে এগিয়ে আছে। মোট ছাত্রীর ৮২ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং মোট ছাত্রের ৭৭ দশমিক ৯২ শতাংশ পাস করেছে।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবার জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ১২ হাজার ৬৭০ জন। সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ থেকে সবচেয়ে বেশি ১৩৩৪ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন।

চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ থেকে ১১৬৯ জন, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ৮০৭ জন, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ৭৬১ জন, সরকারি কমার্স কলেজ থেকে ৬৯৪ জন, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে ৬৩৬ জন, হাজেরা তুজ ডিগ্রি কলেজ থেকে ৫৬৪ জন, বাকলিয়া সরকারি কলেজ থেকে ৪৮৮ জন, কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে ৪১৬ জন, পটিয়া সরকারি কলেজ থেকে ৩৭৬ জন, নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৩৪১ জন, ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২৬৮ জন, চট্টগ্রাম সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২৬৬ জন, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি কলেজ থেকে ২৪৪ জন, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২৩৫ জন, হাটহাজারী কলেজ থেকে ২০০ জন, হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ১৯৯ জন এবং গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে ১৯০ জন জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন।

মোট ২৬৭টি কলেজের মধ্যে ১৬টি কলেজের শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। কেউ পাস করেনি এমন কোনো কলেজ চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে নেই।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেশি ছাত্রছাত্রী ফেল করেছে গ্রামগঞ্জের বেসরকারি কলেজগুলো থেকে। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়লেই হয় না, সেগুলো দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হয়। এসব কলেজে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের সংকট আছে। এছাড়া তিন পার্বত্য জেলার অনেক অঞ্চল দুর্গম হওয়ায় সেখানেও ভালো শিক্ষকের অভাব আছে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের শহরের বাইরে বেসরকারি কলেজগুলোতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ এবং নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিৎ, এমনটাই মনে করছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা।

সারাবাংলা/আরডি/ এনইউ

টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ঢাকার পথে প্রধান উপদেষ্টা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩৩

সম্পর্কিত খবর