Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

চবি করেসপন্ডেন্ট
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:৩১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে ১০০ দিনের মতো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে এই ঘটনা ঘটে। পরে দুপুর ১টার দিকে আবারও প্রক্টর অফিসের সামনে অবস্থান নেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় ‘অন্যায় অবিচার মানি না মানব না’; ‘প্রশাসনের কালোহাত ভেঙে দাও পুড়িয়ে দাও’; ‘একসাথে লড়ব, একসাথে থাকব’; ‘আমাদের উপর হামলা কেন প্রশাসনের জবাব চাই’; ‘প্রশাসনের তালবাহানা চলবে না চলবে না’; ‘দাবি মোদের একটাই চারুকলা ক্যাম্পাসে চাই’; ‘আমাদের দাবি মানতে হবে মানবে হবে’- এসব স্লোগান দিতে থাকেন তারা।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগের গ্রুপগুলো হলো— বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক ছাত্রলীগের সংগঠন ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স) ও বাংলার মুখ (বিএম)। উভয় গ্রুপ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

জানা যায়, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেয় চারুকলার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলন সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের গ্রুপ দুটি বাধা দেয় ও মারধরের অভিযোগ উঠে। এসময় ব্যানার ও ফেস্টুন কেড়ে নেওয়া হয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।

চারুকলা শিক্ষার্থীদের পক্ষে মোহাম্মদ শহীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘অন্য শিক্ষার্থীদের আহ্বান করে আন্দোলনে দাঁড়িয়েছিলাম। দাঁড়ানোর শুরু থেকে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা শুরু করেন। এরপর আমাদের কয়েকজনকে আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়। এরমধ্যে একজন নারী শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। আমরা যতটুকু ধারণা করি প্রক্টরের নির্দেশে হামলা করা হয়। আমরা বেশ কয়েকবার প্রক্টরিয়াল বডিকে ফোন করছি। কিন্তু তারা কেউ রেসপন্স করেননি। আমাদের আন্দোলন একদফা একদাবি অব্যাহত থাকবে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও ভার্সিটি এক্সপ্রেস গ্রুপের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় সারাবাংলাকে বলেন, ‘একপক্ষ আন্দোলন করছে। আরেক পক্ষ থামাতে গেছে শুনছি। এর বাইরে কিছু জানি না। এগুলো আমাদের সাংগঠনিক কোনো বিষয় নয়। এই আন্দোলনে আমার কোনো পক্ষে বিপক্ষে সংশ্লিষ্টটা নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকুক। আন্দোলনরত চারুকলা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অভিযোগপত্র পেয়েছি। চারুকলায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একমাস বন্ধ করেছে। সেকারণে মূল ক্যাম্পাসে তারা আন্দোলন করছে। আন্দোলনের সময় যারা তাদের উপরে হামলা করেছে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তার স্বার্থে যা যা করণীয় তাই ব্যবস্থা করা হবে। সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা (শিক্ষার্থীরা) যখন আন্দোলনে দাঁড়িয়েছে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের টিম পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সেখানে ছিল কি ছিল না, তদন্ত করলে জানতে পারব। তাদের দাবিটা আসলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবে। প্রক্টরের দাযিত্ব শৃঙ্খলার জন্য সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যাতে নিরাপদে থাকে সেদিকটা আমরা সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে থাকি।’

এর আগে, ঝুঁকিমুক্ত ক্লাসরুম, ভবন ও ছাত্রাবাস নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের জন্য বাস, ডাইনিং ও ক্যান্টিন চালুসহ ২২ দফা দাবিতে ২০২২ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে আন্দোলনে নামেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। ৩ নভেম্বর থেকে তারা চারুকলা ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার এক দফার আন্দোলন শুরু করেন।

প্রায় আড়াই মাস ধরে টানা আন্দোলনে অচল হয়ে থাকা চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গত ২১ জানুয়ারি চট্টগ্রামে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এরপর আন্দোলনকারীদের নিয়ে ফটক খুলে চারুকলার ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন মন্ত্রী-উপমন্ত্রী। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে তাদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানান।

শিক্ষার্থীরা প্রথমে ক্লাসে ফিরতে অস্বীকৃতি জানালে ২২ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউটে যান। তাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা সাতদিনের জন্য আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে ক্লাসে ফেরেন।

সাত দিনের ক্লাস শেষে তাদের দাবি মেনে না নেওয়ায় গত ৩১ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) সকাল থেকে ফটকে তালা লাগিয়ে ক্লাস ছেড়ে আবারও আন্দোলনে নেমেছেন চবি চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।

এ পরিস্থিতিতে গত ২ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বিকেলে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় চারুকলা ইনস্টিটিউট আগামী এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি বন্ধ থাকবে ছাত্রাবাসও। সেজন্য রাত ১০টার মধ্যে ক্যাম্পাস ছাড়তেও বলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের। তবে আগামী এক মাস অনলাইনে ক্লাস চলবে বরে জানানো হয়।

পরে চারুকলা ইনস্টিটিউট’কে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ইনস্টিটিউট এক মাস বন্ধ করে দিযেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বন্ধ ঘোষণার পর গত রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। এসময় মূল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিভাগের শ’খানেক শিক্ষার্থীও অংশ নিয়েছেন।

সারাবাংলা/সিসি/এনএস

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউট টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

৯০০তম গোলে ইতিহাস গড়লেন রোনালদো
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০৪

সম্পর্কিত খবর