পানি স্বল্পতায় কর্ণফুলী বিদ্যুৎকেন্দ্রে কমে গেছে উৎপাদন
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:১৫
রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে পানিস্বল্পতার কারণে দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎকেন্দ্র কর্ণফুলী বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন কমেছে। কেন্দ্রটির সর্বোচ্চ উৎপাদন সক্ষমতা ২৪২ মেগাওয়াট হলেও এখন উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৩০ মেগাওয়াট। আগামী দু’মাসে এই সংকট থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে একটি ইউনিটে গড় উৎপাদন হচ্ছে ৩০ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমতে থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমতে শুরু করে। হ্রদের পানি কমতে শুরু হওয়ায় উৎপাদন কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের উৎপাদন সক্ষমতা ধীরলয়ে কমিয়ে আনা হয়। বিগত বছরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কেন্দ্রের দু’টি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত থাকলেও এবছর পাঁচটি ইউনিট সচল রয়েছে।
তবে পাঁচ ইউনিটের মধ্যে এখন কেবলমাত্র ৪ নম্বর ইউনিটে উৎপাদন হচ্ছে গড়ে ৩০ মেগাওয়াট। গত দুই মাস ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে এসেছে। আপাতত হ্রদে পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা না থাকায় আগামী মার্চ পর্যন্ত পানি স্বল্পতার মধ্যেই উৎপাদন অব্যাহত রাখবে হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) সূত্রে জানা গেছে, রুলকার্ভ অনুযায়ী কাপ্তাই হ্রদে পানির ধারণ ক্ষমতা ১০৯ এমএসএল (মীনস সি লেভেল)। হ্রদে বর্তমানে ৯৫.৮৮ এমএসএল পানি থাকার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে পানি ছিল ৮২.৫৩ এমএসএল। স্বাভাবিকতার চেয়ে হ্রদে এখন ১৩.৩৫ এমএসএল পানি রয়েছে। যে কারণে ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট সচল রয়েছে।
উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন করা হচ্ছে। হ্রদে পানি না বাড়লে অন্য ইউনিটকে উৎপাদনে আনার সুযোগ নেই।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক প্রকৌশলী জানান, গত ডিসেম্বর থেকে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমতে শুরু করেছে। কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলে পানি নিগর্মণের কারণে হ্রদের পানি কমে যায়। বর্তমানে রুলকার্ড অনুযায়ী পানি ১৩ এমএসএল কম রয়েছে। হ্রদের বর্তমান পানি দিয়ে আগামী মার্চ পর্যন্ত হ্রদের আমাদের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। এপ্রিলের দিকে বৃষ্টিপাত হলে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়তে পারে, নয়তো এ অবস্থার পরিবর্তন হবে না।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এ টি এম আবদুজ্জাহের বলেন, ‘পাঁচটি ইউনিটে আমাদের কেন্দ্রের মোট উৎপাদন সক্ষমতা ২৪২ মেগাওয়াট। এরমধ্যে এখন কেবলমাত্র একটি ইউনিটে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। পানি স্বল্পতার কারণে চারটি ইউনিটে উৎপাদন আপাতত বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টিপাত না হলে কিংবা কাপ্তাই হ্রদের পানি না বাড়লে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমাদের কিছু করার নেই। পানি না বাড়লে উৎপাদন সক্ষমতা আরও কমতে পারে।’
ষাটের দশকে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেওয়ার কারণে গড়ে ওঠে বিস্তৃীর্ণ কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেওয়া অংশে চালু করা হয় দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎকেন্দ্র কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র। শুরুর দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৮০ মেগাওয়াট। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে স্থাপনাটির বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করে মোট ২৪২ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়। এই উৎপাদনের পুরোটাই যোগ হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।
কাপ্তাই বাঁধের মধ্যে ১২.২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১১.৩ মিটার প্রস্থ আয়তনে ১৬টি জলকপাট রয়েছে। এই ১৬টি জলকপাট দিয়ে একত্রে প্রতি সেকেন্ডে ৫ লাখ ২৫ হাজার কিউসেক পানি নিগর্মণ করানো যায়।
সারাবাংলা/এমও
কর্ণফুলী বিদ্যুৎকেন্দ্র কাপ্তাই হ্রদ পানি স্বল্পতা বিদ্যুৎকেন্দ্র