Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গৃহায়ণ প্রকল্পের নামে জমি দখলের চেষ্টা, আদালতে মামলা

মহিউদ্দিন সুমন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:০১

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে ব্যক্তি মালিকাধীন জমিতে গৃহায়ণ প্রকল্পের সরকারি ঘর নির্মাণ চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী প্রতিকার পেতে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আব্দুস ছাত্তার মিয়া নামের ওই ভুক্তভোগীর অভিযোগ, তার কেনা জমি দখল করে সরকারি ঘর নির্মাণে ড্রেজার বসিয়ে জমি ভরাট করা হচ্ছে রাতের আঁধারে।

আদালতে দায়ের করা মামলায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া সত্বেও জমিতে মাটি ভরাট কাজ বন্ধ হয়নি। টাঙ্গাইলের কালিহাতী পৌর শহরের উত্তর কালিহাতী এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সার্ভেয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস কালিহাতীকে আসামি করে কালিহাতী সহকারী জজ আদালতে এ নিয়ে মামলা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, ওই ভূমির মালিকের ভাই কালিহাতি পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে। কালিহাতী পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও যুবলীগ সভাপতির প্ররোচনায় সরকারি কর্মকর্তারা ওই ভূমি দখলে নেমেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগি পরিবারের।

কালিহাতী সহকারী জজ আদালতের দায়েরকৃত মামলার বিবরণে জানা যায়, কালিহাতী পৌর শহরের কালিহাতী মৌজার তফশিল বর্ণিত সাবেক ৮৭ নং দাগের মালিকা দাবিকৃত ০২.৫০ শতাংশসহ মোট ২০ শতাংশ ভূমির জোতদখলকার মুচিরাম মাঝি। এরপর ১৯৯৯ সালে ১৭ মে ৩৫৭৪ নং এওয়াজনামা দলিলমূলে সাবেক ৮৭ দাগের ০২.৫০ শতাংশ ভূমি মামলার বাদী আবুস ছাত্তার বরাবর হস্তান্তর করেন। মামলার বাদী আবুস ছাত্তার তপশিল বর্ণিত সাবেক ৮৭ নং দাগের ০২.৫০ শতাংশ ভূমি স্বত্ববান ও দখলকার হন। বর্তমানে বি.আর.এস জরিপে আব্দুস ছাত্তারের নামে ৮৭ নং দাগের ০২.৫০ শতাংশ ভূমির মাঠ পর্চা প্রস্তুত হয়।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাই নদী ঘেঁষা কালিহাতী পৌর শহরের উত্তর কালিহাতী এলাকার দায়ের করা মামলার ভূমিতে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে চলছে মাটি ভরাটের কাজ। নদী থেকে উত্তোলন করা মাটি দিয়ে ভূমি উঁচু করার কাজ করছেন আট জন নারী শ্রমিক।

৬০ টাকা ঘণ্টা হিসেবে সরকারি কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন নারী শ্রমিক মাধবী রাজবংশী। স্থানীয় প্রতিবেশী সম্ভু রাজবংশী বলেন, ‘জমিটি সাবেক মেয়র আব্দুর জব্বার মিয়াদের। এই জমিতে তারা মাটি মজুদ রাখাসহ নানা ধরণের কাজে ব্যবহার করেছেন, সেটি আমরা দেখেছি। আমার স্বামী ও তারা একই সময় হিন্দুদের জমি কিনেছেন। তবে তারা কতটুকু জমি কিনেছিলেন সেটি বলতে পারবো না।’

এলাকাবাসী জানান, জমিটি কালিহাতী পৌরসভার সাবেক মেয়র জব্বার সাহেবদের বলেই তারা জানতেন। হঠাৎ সরকারি লোকজন এসে জমিটি খাস বলে দাবি করাসহ ঘর নির্মাণের জন্য মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেছে।

জমির দাবিদার আব্দুস ছাত্তার মিয়ার ভাতিজা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জমিগুলো আমাদের কেনা। প্রায় বিশ বছর ধরে ওই জমিগুলো আমরা ভোগ দখল করছি এবং কিছু জমি বিক্রিও করেছি। হঠাৎ একদিন জানতে পারি, আমাদের জমি ভরাট করা হচ্ছে। আমাদের ৮৭ নং দাগের রেকর্ড ও দলিলমূলে প্রাপ্ত ৫ শতাংশ জমিতে জোরপূর্বক সরকারিভাবে গৃহায়নের ঘর তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা কাগজপত্র নিয়ে জমিটি আমাদের বুঝানোর চেষ্টা পরও কর্মকর্তা সেটি কানে নেননি। এর প্রতিবাদে আমরা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সার্ভেয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস কালিহাতীকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। আদালত সাতদিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পরও কাজ বন্ধ না করে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।’

কালিহাতী পৌরসভার মেয়র নুরুনবী সরকার জানান, জমিটি পৌর এলাকার মধ্যে হলেও এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমাকে জড়িয়ে অহেতুক প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর গৃহায়ন প্রকল্পের কাজ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। জমিটি সরকারি নাকি ব্যক্তি মালিকাধীন সে বিষয়টি ওনারই নিশ্চিত করতে পারবেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকেও কোনো অভিযোগ বা সমস্যা নিরসনে কিছুই অবহিত করা হয়নি বলেও জানান তিনি।

কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুসেইন বলেন, ‘জমিটি সরকারি। এ কারণে আমরা জমিতে মাটি ভরাট ও গৃহায়ণের ঘর করার কাজ করছি। যেহেতু বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে। সে কারণে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না।’

সারাবাংলা/এমও

গৃহায়ণ প্রকল্প জমি দখল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর