Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকার ২৪ শতাংশ মানুষ চোখের সমস্যায় ভুগছে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:০০

ঢাকা: দৃশ্য দূষণের (ভিজ্যুয়াল পলিউশন) কারণে ঢাকার ২৪ শতাংশ মানুষ চোখের সমস্যায় ভুগছে। এর বড় অংশটিই শিশু। ভিজ্যুয়াল পলিউশনের কারণে রাজধানীর প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার শিশু চক্ষু রোগে এবং মাথাব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দৃশ্য দূষণের কারণে মানসিক সমস্যয়ও ভুগছেন অনেকে। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে এসডোর কার্যালয়ে ‘ভিজ্যুয়াল পলিউশন ইন দ্যা সিটি অফ ঢাকা অ্যা পাবলিক হেলথ, এনভাইয়রনমেন্ট, অ্যান্ড ট্রাফিক ডিসট্রাকশন’ শীর্ষক ওই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ভিজ্যুয়াল পলিউশনের কারণে ২৪ শতাংশ মানুষ চোখের সমস্যায় ভুগছে, যার মধ্যে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঢাকা শহরের ২৭টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতি বছর ঢাকা শহরের প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার শিশুরা চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এবং গুরুতর মাথাব্যথার জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করে। এ ছাড়াও, ঢাকা শহরের বাসিন্দা যারা মানসিক সমস্যায় রয়েছেন, তাদের সংখ্যা প্রায় ১৭ শতাংশ ভিজ্যুয়াল পলিউশনের কারণে হয়ে থাকে।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ভিজ্যুয়াল পলিউশনের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৪০ শতাংশ হারে বেড়েছে। ২০১৯ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ২২৭ জন, যা বেড়ে ২০২২ সালে হয়েছে ৮ হাজার ৮০০ জন। ভিজ্যুয়াল পলিউশনকে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ওভারটেকিং, বেপরোয়া ও মাতাল হয়ে গাড়ি চালানো।

গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, ভিজ্যুয়াল পলিউশন সম্পর্কে জনসচেনতার হার খুবই কম। প্রায় ৯৫ শতাংশ নগরবাসী এ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই।

বিলবোর্ড তারযুক্ত বিদ্যুতের খুঁটি এবং বিদ্যুৎ বিতরণ নেটওয়ার্ক, কুয়াশা, গ্রাফিটি ইত্যাদি ভিজ্যুয়াল পলিউশনের উদাহরণ এবং যা জনগনের সৌন্দর্য উপভোগে বাধা দেয়। ভিজ্যুয়াল পলিউশনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মানবসৃষ্ট আবাসভূমি নষ্ট হওয়ার কারণে বাস্তুসংস্থানের ক্ষতি হচ্ছে। ফলে নগরবাসী স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আয়োজকরা জানান, ভিজ্যুয়াল পলিউশনের টার্মটি নতুন। তবে পলিউশন বহু বছর ধরেই হয়ে আসছে। মূলত চোখের দৃষ্টিতে যা বিরক্তিকর দূষণের সেই বিষয়গুলোই ভিজ্যুয়াল পলিউশন। ঢাকা শহরের অধিকাংশ বিলবোর্ড, জঞ্জালযুক্ত তার, দৃশ্যমাণ ময়লারস্তুপ ভিজ্যুয়াল দূষণের অন্তর্ভূক্ত।

এসডোর সম্মানিত চেয়ারপারসন ও সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, ‘ভিজ্যুয়াল পলিউশন বিষয়টি ধাপে ধাপে মোকাবিলা করতে হবে।’

জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশকে ভিজ্যুয়াল পলিউশন থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সৈয়দ মোর্শেদ বলেন, ‘ভিজ্যুয়াল পলিউশনের ঝুঁকি কমাতে আমাদের অবশ্যই এই সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে এ সম্পর্কে বোঝাতে হবে।’

গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করে এসডোর মহাসচিব এবং স্টাডি টিম লিডার ড. শাহরিয়ার হোসেন জানান, ভিজ্যুয়াল পলিউশনের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বিলবোর্ড, তার ও বিদ্যুতের খুঁটি, কুয়াশা, অতিরিক্ত ট্রাফিক সাইন, আবর্জনা বা আবর্জনার স্তূপ, শহুরে গ্রাফিটি, অতিরিক্ত আলো বা নিয়ন সাইন দূষণ এবং ডিজিটাল বিলবোর্ড ইত্যাদি। প্লাস্টিকের ব্যাগ ও আবর্জনা এই পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে যা সাধারণ জনগণের পরিবেশগত সমস্যা সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচয়স্বরূপ।

এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘ভিজুয়্যাল পলিউশনের পরিণতি সুদূরপ্রসারী। এর মধ্যে রয়েছে মানসিক বিভ্রান্তি ও অবসাদ, মতামত প্রকাশের ক্ষমতা হ্রাস, পরিচয়হীনতা, রাস্তায় যানজট, বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি, মানসিক অস্থিরতা ও অসুস্থতা, চোখের সমস্যা, নান্দনিকতা বোধ হ্রাস, কমিউনিটির সামগ্রিক ক্ষতি ইত্যাদি। যে শিশুরা শৈশব থেকেই ভিজুয়্যাল পলিউশনের সংস্পর্শে এসেছে, তারা প্রায়ই অপ্রীতিকর পরিবেশের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে ও তাদের স্বাভাবিক আবেগ হারিয়ে যাচ্ছে।’

এই গবেষণার প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেছেন এসডোর প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট মালিহা হক। অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল এডভাইজার ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) কেমিক্যাল বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল হাসেম।

সারাবাংলা/ইএইচটি/ইআ

এসডো চোখের সমস্যা দৃশ্য দূষণ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর