সাহাবুদ্দিন চুপ্পুতেই আস্থা রাখল আওয়ামী লীগ
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২৩:৩৯
ঢাকা: ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে হাতেখড়ি ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে। যৌবনে যুবলীগের মিছিল হাঁটা থেকে শুরু করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, বিচার বিভাগে যোগদান, সবশেষে দুদকের কমিশনার। এরপর ফের আওয়ামী লীগের উচ্চপদে আসীন হন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। রাজনীতি ও বর্ণাঢ্য সরকারি চাকরির কর্মময় জীবন অতিবাহিত করা সাহাবুদ্দিন চুপ্পুই হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি। রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হন এবং প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন এবং মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অনুসন্ধানে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এক পুত্রসন্তানের বাবা। তার স্ত্রী অধ্যাপক রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব। তিনি জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্ণাঢ্য জীবনে ছাত্র রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, আইন পেশা, বিচারকের দায়িত্ব, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সামলানোর পর এবার তিনি বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হতে যাচ্ছেন।
১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাংকপাড়ায় (শিবরামপুর) তার জন্ম। ছোটবেলা কাটে পাবনা শহরে। শহরের পূর্বতন গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাসের পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হন। সেখানেই জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে। এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন করেন সাহাবুদ্দিন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি পান।
ছাত্ররাজনীতি থেকে যুবলীগের রাজনীতি করার সময়ে পাবনা জেলার তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব বগা মিয়া, এম মনসুর আলী, এম এইচ কামারুজ্জামানসহ বিভিন্ন নেতাদের সান্নিধ্য পান।
ছাত্রলীগে যুক্ত হওয়ার পর এডওয়ার্ড কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক, অবিভক্ত পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি থেকে ছয় বছর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের পদে ছিলেন। পরে ছাত্রলীগের রাজনীতির ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্বে আসেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন। ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। কারামুক্তির পর পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
এক সময় পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) পরীক্ষা দিয়ে বিচারক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পর পর দুইবার বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। বিচারালয়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন শেষে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে ২০০৬ সালে অবসরে যান মো. সাহাবুদ্দিন। এর মধ্যে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান পদেও ছিলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তখনকার বিচারক সাহাবুদ্দিন। বিচারক জীবনের ইতি টানার পর ফের তিনি আইন পেশায় ফেরেন। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী থাকার মধ্যে সরকার তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন।
কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি? সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী মনোনীত করল ক্ষমতাসীন দলটি। জাতীয় নির্বাচনের আগে এবার সবার নজর ছিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকের নাম নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছিল। তবে আলোচনা ছাপিয়ে অনেকটা চমকের মতোই এসেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নাম।
এদিকে, আর কোনো প্রার্থী না থাকায় এখন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণার কেবল অপেক্ষামাত্র। বিধান অনুযায়ী, সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) প্রার্থিতা বাছাইয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ বিবেচিত হলে নির্বাচন কমিশন তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে। এখন শুধু প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পালা।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম