চিকিৎসা সেবায় নিষ্ঠা ও বিশেষ অবদানের জন্য স্বর্ণপদক প্রদান
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:১০
ঢাকা: চিকিৎসা সেবায় নিষ্ঠা বিশেষ অবদানের জন্য ডা. আসমা ইসলাম স্মৃতি স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়েছে। ডা: আসমা ইসলাম স্মরণে এবং প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের একনিষ্ঠতা ও কঠোর পরিশ্রমের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৯ থেকে প্রতি বছর এই পুরস্কারটি প্রদান করা হয়। এবার এই পুরষ্কার পেয়েছেন আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. মনিরুজ্জামান।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) মহাখালীর উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর,বির সাসাকাওয়া মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই পদক তুলে দেয়া হয়।
অনুষ্টানে জানানো হয়, পুরস্কার প্রদানের মানদণ্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রোগীর সেবা, রোগী এবং সহকর্মীদের প্রতি আচরণ ও মনোভাব, চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিচালনায় দক্ষতা এবং ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব কালীন সময়ে দৃঢ়তার সাথে কাজ করা। এ বছর মোঃ মনিরুজ্জামান, সিনিয়র স্টাফ নার্স, ২০২২-এ কর্মক্ষেত্রে তার বিশেষ অবদানের জন্য ডা: আসমা ইসলাম স্মৃতি স্বর্ণ পদক পেয়েছেন। একই অনুষ্ঠানে, আইসিডিডিআর,বি আরও সাত জন হাসপাতাল কর্মীকে তাদের উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ক্রেস্ট প্রদান করে।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে নার্সিং অফিসার মমতাজ বেগম, নার্সিং অফিসার ক্যাথরিন কস্তা, সিনিয়র স্টাফ নার্স মাহরাব হোসেইন, ফেলো নার্স অর্জুন দাস রাতুল, ক্লিনিক্যাল ফেলো ডা: মেহরীন চৌধুরী, ক্লিনিক্যাল ফেলো ডা: খালিদ হাসান রোগীর সেবার জন্য, এবং ডা: প্রমিতা গুহ তার শিক্ষাগত অর্জণের জন্য সম্মাননা পেয়েছেন।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন এর সভাপতি ডা: মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিডিডিআর,বি-র প্রাক্তন গবেষক ও হেলথ এন্ড নিউট্রিশন ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা: রুখসানা হায়দার। আইসিডিডিআর,বি হাসপাতাল প্রধান ডা: বাহারুল ইসলাম ও প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য কর্মচারীরা এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ডা: মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে গবেষণা ক্ষেত্রে ডা: আসমা ইসলামের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি অনেককে অনুপ্রাণিত করেছেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পথপ্রদর্শক ছিলেন। তরুণ গবেষকদের উচিৎ তার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, এই পুরস্কার চিকিৎসা সেবায় আমাদের প্রিয় সহকর্মী ডা: আসমা ইসলামের অটুট নিষ্ঠা ও তার পরিক্রমার স্মৃতির প্রতি উপযুক্ত শ্রদ্ধাঞ্জলি। একইভাবে যারা কঠোর পরিশ্রম ও একাগ্রতার মাধ্যমে এই ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জণ করেছেন তাদের সম্মান জানাতে পেরে আমরা গর্বিত। সমাজের বিত্তশালী ব্যাক্তিরা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে এই ধরনের আরও পুরস্কার প্রবর্তন করার প্রয়াস নিলে তা স্বাস্থ্যকর্মীদের উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবার ব্যাপক উন্নতি ঘটাবে।
ডা: মইনুদ্দিন বলেন, ডা: আসমা ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার আমার কাছে আমার বোনের চেতনার ধারাকে সম্মাননা জানানোর ও হাসপাতালের কর্মীদের সর্বোত্তম যত্ন প্রদানের জন্য উৎসাহিত করার একটি উপায়। আমি আশা করবো এই সম্মাননা অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের জন্য একই রকম পদক্ষেপ গ্রহণের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে যেন সকল কর্মী তাদের কাজের জন্য স্বীকৃত অনুভব করে ও উৎসাহ লাভ করে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে প্রতি বছর ডা: আসমা স্মৃতি পুরস্কার প্রদান আইসিডিডিআর,বি-র একটি বাৎসরিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে যা তাঁর চেতনায় উদ্বুদ্ধ কর্মীদের কঠোর পরিশ্রম এবং অবদানের স্বীকৃতি দেয়। আজকের অনুষ্ঠানটি রোগীর সেবার গুরুত্ব এবং এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি অসংখ্য মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেন তা আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়।
উল্লেখ্য, ডা: আসমা ইসলাম, ৭০-এর দশক থেকে শুরু করে প্রায় দুই দশক ধরে একজন নিষ্ঠাবান ও অনুরাগী জনস্বাস্থ্য গবেষক হিসেবে আইসিডিডিআর,বি-তে দায়িত্ব পালন করেন এবং হয়ে উঠেন একজন কর্মীর চেয়েও বেশি। ১৯৯৫ সালে তার অকালপ্রয়াণ হয়। খাবার স্যালাইন নিয়ে গবেষণা তাঁর পেশাজীবনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য অবদান যা সারা বিশ্বে সাত কোটির বেশি মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। তিনি জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন, ভিটামিন-এ ঘাটতি এবং স্বাস্থ্য খাতে অন্যান্য জরুরী সমস্যা মোকাবেলায় গবেষণা করেছেন।
জনস্বাস্থ্য খাতে কাজের মাধ্যমে মানুষের জীবন উন্নয়নের এই অনুরাগ ও নিষ্ঠাকে স্মরণ করতে ও সম্মাননা জানাতে তাঁর ভাই ডা: মইনুদ্দিন আহমেদ এই পুরস্কার প্রদানের আয়োজন করেন।
সারাবাংলা/এসবি