Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কতখানি— যা বলছে সংবিধান

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:২২

ঢাকা: সাবেক দুদক কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আর কেউ মনোনয়ন দাখিল না করায় মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু একক প্রার্থী। ফলে রাষ্ট্রপতি পদে তিনি একমাত্র প্রার্থী হওয়াই এখন আর ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না।

সংবিধান অনুয়াযী, রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ থেকে ৫ বছরের জন্য পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। রাষ্ট্রপতির স্থান সবার ঊর্ধ্বে— বাংলাদেশের সংবিধানে এটাই বলা হয়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্রপতির দায়, দায়িত্ব উল্লেখসহ নানা ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যদিও রাষ্ট্রপতিকে খুব একটা দৃশ্যমান দেখা যায় না, তবু রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোয় নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাকে করতে হয়।

বিজ্ঞাপন

গতকাল রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে মনোনয়ন দিয়েছে। আগের রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়া, আর নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ নিয়ে এখন সবখানেই চলছে নানা আলোচনা। উঠেছে প্রশ্নও, বাংলাদেশের সংবিধান এবং সাংবিধানিক রীতি অনুসারে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কতটুকু? বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ থেকে ৫৪ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার পরিধি সম্পর্কে বলা রয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়—
(১) বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ-সদস্যদের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন।

(২) রাষ্ট্রপ্রধানরূপে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করবেন এবং এই সংবিধান ও অন্য কোন আইনের দ্বারা তার উপর দেওয়া সব ক্ষমতা প্রয়োগ ও কর্তব্য পালন করবেন।

বিজ্ঞাপন

(৩) এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ছাড়া রাষ্টপতি তার অন্য সব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করবেন। তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোনো পরামর্শ প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন কি না, কোনো আদালত সেই সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের তদন্ত করতে পারবেন না।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে কমপক্ষে ৩৫ বৎসরের বয়স হতে হবে। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যে যোগ্যতা, সেসবও থাকতে হবে।

সংবিধানের ৪৯ নম্বর অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দেওয়া যেকোন দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে।’

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫০ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি কার্যভার নেওয়ার তারিখ থেকে পাঁচ বৎসর পর্যন্ত পদে মেয়াদ থাকবে। তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তার উত্তরাধিকারী কার্যভার না নেওয়া পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন। একাদিক্রমে হোক বা না হোক, দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোনো ব্যক্তি নিয়োগ হবেন না।

স্পিকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি নিজেও পদত্যাগ করতে পারবেন।

অনুচ্ছেদ ৫১ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি তার দায়িত্ব পালন করার সময় কোনো কাজ করলে সেজন্য তাকে কোনো আদালতে জবাবদিহি করতে হবে না। তবে এই দফা সরকারের বিরুদ্ধে কার্যধারা গ্রহণে কোনো ব্যক্তির অধিকার ক্ষুণ্ন করবে না। রাষ্ট্রপতির কার্যভারকালে তার বিরুদ্ধে কোনো আদালতে কোনো প্রকার ফৌজদারি আইনে মামলা দায়ের করা বা চালু রাখা যাবে না। তার গ্রেফতার বা কারাবাসের জন্য কোনো আদালত থেকে পরোয়ানা জারি করা যাবে না।

অনুচ্ছেদ ৫৩ অনুযায়ী, শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিকে তার পদ থেকে অপসারণ করা যাবে। এজন্য সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের স্বাক্ষরে কথিত অসামর্থ্যের বিবরণ লিপিবদ্ধ করে একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পিকারের কাছে জমা দিতে হবে।

বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দায়িত্বভার নিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী, তার ৫ বছরের মেয়াদ আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে পরোক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সাতবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একবার রাষ্ট্রপতি পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় সংসদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়। তৎকালীন বিরোধীদল ও বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছিল বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে। ওই নির্বাচনে আব্দুর রহমান বিশ্বাস বিজয়ী হন।

এছাড়া প্রতিবার একক প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর নির্বাচন কমিশন গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে একক প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন:
সাহাবুদ্দিন চুপ্পুতেই আস্থা রাখল আওয়ামী লীগ
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু
রাষ্ট্রপতি পদে মনোয়ন পেয়ে যা বললেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু

সারাবাংলা/এআই/এমও

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সংবিধান সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর