Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাষ্ট্রপতি হয়ে বঙ্গভবনে বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য সাহাবুদ্দিন

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:০৯

ঢাকা: ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্যে ছাত্র রাজনীতির হাতেখড়ি। যুবলীগ নেতা হিসেবে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, পরে বিচার বিভাগ ও দুদকের কমিশনারের দায়িত্ব শেষে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে উচ্চপদে আসীন হন মো. সাহাবুদ্দিন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সাহসী বিশ্বস্ত রাজনৈতিক যোদ্ধা হয়ে সরকারি চাকরির কর্মময় জীবন অতিবাহিত করা মো. সাহাবুদ্দিন হলেন দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি।

সোমবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের উত্তরসূরী হিসেবে তিনি হলেন দেশের ২২ তম রাষ্ট্রপতি।

এদিন দুপুরে নির্বাচনি কর্মকর্তা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে একমাত্র প্রার্থী সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।

এর আগে রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ।

মো. সাহাবুদ্দিন আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হন এবং প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

মো. সাহাবুদ্দিন ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন এবং মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অনুসন্ধানে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এক পুত্র সন্তানের বাবা। তার স্ত্রী অধ্যাপক রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব। তিনি বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্চ প্রোগ্রাম বিভাগে অধ্যাপনার পাশাপাশি ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

সাহাবুদ্দিন সরকারি কর্মজীবনে জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন করেন সাহাবুদ্দিন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

ছাত্ররাজনীতি থেকে যুবলীগের রাজনীতি করার সময়ে পাবনা জেলার তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব বগা মিয়া, এম মনসুর আলী, এম এইচ কামারুজ্জামানসহ বিভিন্ন নেতাদের সান্নিধ্য পান।

ছাত্রলীগের যুক্ত হওয়ার পর এডওয়ার্ড কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক, অবিভক্ত পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি থেকে ছয় বছর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সাহাবুদ্দিন। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের পদে ছিলেন। পরে ছাত্রলীগের রাজনীতির ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্বে আসেন।

১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। কারামুক্তির পর পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

একসময় পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) পরীক্ষা দিয়ে বিচারক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। বিচারালয়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন শেষে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে ২০০৬ সালে অবসরে যান মো. সাহাবুদ্দিন। এরমধ্যে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান পদেও তিনি ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তখনকার বিচারক সাহাবুদ্দিন। বিচারক জীবনের ইতি টানার পর আবারও তিনি আইন পেশায় ফেরেন। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী থাকার মধ্যে সরকার তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন।

কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি? সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী মনোনীত করে ক্ষমতাসীন দলটি। জাতীয় নির্বাচনের আগে এবার সবার নজর ছিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকের নাম নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছিল। তবে আলোচনা ছাপিয়ে অনেকটা চমকের মতোই আসে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসাবে সাহাবুদ্দিনের নাম।

বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও ছাত্রলীগ নেতা থেকে কিশোরগঞ্জ থেকে উঠে আসা আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি পদে আছেন। আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে তার দায়িত্বের মেয়াদ।

সারাবাংলা/এনআর/একে

টপ নিউজ মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর