Wednesday 27 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বইমেলায় লিটলম্যাগ চত্বর শূন্য পড়ে রয়

আসাদ জামান
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০০:১১

টিএসসিসংলগ্ন সোহওয়ার্দী উদ্যানের গেট দিয়ে মেলায় প্রবেশের পর হাতে বাম পাশে পায়ে হাঁটার সড়কে দারুণ দুইটা ডিসপ্লে বোর্ড চোখে পড়ে। অফ হোইট বোর্ডের উপরের বাম দিকে ‘অমর একুশে বইমেলা’র লোগো, ডান দিকে বাংলা একাডেমির লোগো, এর সামান্য নিচে বিকাশের লোগো। আর বোর্ডটির মাঝ বরাবর লাল অক্ষরে লেখা ‘লিটলম্যাগ চত্বর’।

বইমেলার সোহওয়ার্দী উদ্যান অংশে এ ধরনের বোর্ডের সংখ্যা এবার খুব বেশি না। ওদিকে শেখ রাসেল চত্বরে কয়েকটা, বঙ্গবন্ধু চত্বরে কয়েকটা আর বঙ্গমাতা চত্বরে আরও কয়েকটা— সব মিলে ১০/১২ টার বেশি না। সেদিক দিয়ে বিচার করলে শিল্প-সাহিত্যের সেবাপত্র ‘লিটলম্যাগ’কে বেশ গুরুত্ব দিয়েছে অমর একুশে বইমেলা কর্তৃপক্ষ তথা বাংলা একাডেমি।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু মেলার এত জায়গা থাকতে লিটলম্যাগ চত্বর নির্দেশক ওই দুই বিল বোর্ডের একটির সঙ্গে বিশালাকায় একটা ময়লার ড্রাম ‘পরম’ যত্নে রেখে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যেখানে বিশুদ্ধ বাংলায় লেখা আছে, ‘এখানে ময়লা ফেলুন’। যাক বাবা, বইমেলায় আসছি বলে আমরা এত ভদ্র হয়ে গেছি নাকি, আজন্ম লালিত যে বদাভ্যাস, সেটাকে ভুলে গিয়ে আমরা কেন ওই ময়লার ড্রামে ময়লা ফেলতে যাব। ময়লা ফেলার জন্য মেলার বিস্তৃ পরিসর আছে না? সে কারণে ড্রামগুলো খালি পড়ে আছে।

কিন্তু দো’পেয়ে জীবরা যে ড্রাম শূন্য রেখেছে, চার’পেয়ে জন্তুদের কাছে সে খবরটা তো আর নেই। সুতরাং খাদ্যের সন্ধানে এক চার’পেয়ে জন্তু ড্রাম বেয়ে উপরে উঠতেই সেটি ভূ-পাতিত। মুহূর্তের মধ্যে আরও দুইটা চার’পেয়ে জন্তু এসে হাজির।

এ ঘটানাটা আগে পরেও ঘটতে পারত। কিন্তু কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতা ‘লিচু চোর’-এ একটা পঙ্ক্তি আছে না?— ‘পড়বি পড় মালির ঘারে’। অর্থাৎ এগুলো শুধু আমার সামনেই ঘটে। কাণ্ডজ্ঞানহীনভাবে ডিসপ্লে বোর্ডের সঙ্গে হেলান দিয়ে রাখা ময়লার ড্রাম, সেই ড্রাম নিয়ে তিন কুকুর ঝগড়া ওদিকে একেবারেই শূন্য লিটলম্যাগ চত্বর!

বিজ্ঞাপন

প্রকৃতির একটা শাশ্বত নিয়ম আছে। কোনো জায়গা শূন্য থাকে না। কেউ না কেউ এসে পূর্ণ করে দেয়। ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কম থাকলে, সেখানে চার’পেয়ে জন্তু গিয়ে বিরোধীপক্ষের বিতর্কের খোরাক যোগায়, প্রার্থনালয়ে ভক্তের অভাব হলে গরু-ছাগল গিয়ে অভাব পূরণ কর দেয়। আজ যখন লেখার কোনো টপিক খুঁজে পাচ্ছিলাম না, তখন হয়তো বইমেলা কর্তৃপক্ষের দারুণ একটা ভুল ও সেইসঙ্গে দারুণ একটা ঘটনা ঘটে গেল হঠাৎ করেই।

ঘটনার আকস্মিকতার রেশ কেটে গেলে লিটলম্যাগ চত্বরের দিকে যাত্রা। প্রথম যে স্টলটি চোখে পড়ল, সেটির নাম ‘ঈক্ষণ’। পল্টু সরকার সম্পাদিত এ লিটল ম্যাগটি সাতক্ষীরা থেকে বের হয়। যথা নিয়মে ঈক্ষণও মেলায় স্টল পেয়েছে। স্টল পাহারা দেওয়ার জন্য ঢাকায় বসবাসরত দীপা মণি নামক এক তরুণীকেও এক মাসের জন্য নিয়োগ দিয়েছে। এ প্রতিবেদককে দীপা মণি জানান, গত ১৩দিনে ৩টা লিটল ম্যাগ বিক্রি করেছেন তিনি।

‘বইসই’ স্টলে দায়িত্ব পালন করছিলেন রাশেদ রহমান। সারাবাংলাকে তিনি জানান, গত দুই দিনে একটা কপিও বিক্রি করতে পারেননি তিনি। আগের ১১ দিনে এ স্টলে দায়িত্ব পালন করেছেন অন্য একজন।

‘পূর্ব পশ্চিম’ স্টলে দায়িত্ব পালন করছিলেন তানজিমুল ইসলাম নামে এক তরুণ। সারাবাংলাকে তিনি জানান, গত ১৩ দিনে ছয় কপি পূর্ব পশ্চিম বিক্রি করেছেন।

‘মাদুলী’র স্টলের বিক্রয় কর্মী ইশরাত জাহান জানান, গত ১৩ দিনে একটা কপি বিক্রি করেছেন তিনি। এ প্রতিবেদককে ইশরাত জাহান বলেন, ‘লিটলম্যাগ চত্বর সব সময় শূন্য পড়ে থাকে। যারা এখানে আসেন, তারা অধিকাংশ কবি-সাহিত্যিক-লেখক। মাঝে-মধ্যে সাধারণ পাঠক এলেও লিটল ম্যাগ খুব একটা বেশি কেনেন না। নেড়েচেড়ে দেখে চলে যান।’

বস্তুত ইশরাত জাহানের এই বক্তব্যের মধ্যেই পুরো লিটল ম্যাগ চত্বরের বাস্তব পরিস্থিতি চিত্রিত হয়েছে। লেখক গড়ার প্ল্যাট ফর্ম ‘লিটল ম্যাগ’ বইমেলার অবহেলা অনাদরের একটি অংশ। এ অবেহলা অনাদর সব পক্ষের আচরণেই পরিষ্কার হয় বার বার। নইলে কী আর মেলায় এত জায়গা থাকতে লিটল ম্যাগ চত্বর নির্দেশক ডিসপ্লে বোর্ডের সঙ্গে ময়লার ড্রাম রাখে কর্তৃপক্ষ? আর সেখানে এসে ঝগড়া বিবাদে জড়ায় তিন/চার’পেয়ে জন্তু?

মূল মঞ্চের অনুষ্ঠান

বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মফিদুল হক। আলোচনায় অংশ নেন হারিসুল হক এবং অপূর্ব শর্মা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আবেদ খান।

প্রাবন্ধিক বলেন, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী দীর্ঘজীবী কর্মবীর ব্যক্তিত্ব। তার প্রধান পরিচয় সাংবাদিক ও লেখক হিসেবে। উভয় ক্ষেত্রে তার হাতে ছিল কলম যা অপূর্ব আলোর ঝলকানিতে জ্বলে উঠেছিল বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের পর। আবেগ ও উপলব্ধির মিশেল ঘটিয়ে তিনি এমন এক কবিতা লিখেছিলেন যা ছুঁয়ে গিয়েছিল জাতির অন্তর, আলতাফ মাহমুদের সুরে একুশের প্রভাতফেরিতে গীত হয়ে যুগিয়েছিল জাগরণের বাণীমন্ত্র। সেই থেকে তার কলম নানা সন্ধিক্ষণে সমাজের চিন্তা বিস্তারকে প্রভাবিত করেছে, মানুষকে আলোড়িত করেছে, বাঙালিকে করেছে জাতিচেতনায় সংহত।

আলোচকবৃন্দ বলেন, বাঙালির ভাষা আন্দোলন নিয়ে বহু গান রচিত হলেও সাংবাদিক, কবি, কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি সকল বাঙালির মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। পেশাগত জীবনে সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী প্রাণের আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন লেখালেখিতে। আজীবন তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করেছেন এবং অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন।

সভাপতির বক্তব্যে আবেদ খান বলেন, ‘আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর জীবন ও কর্ম অনেক বিস্তৃত। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের মহীরূহদের একজন। যে আদর্শ ও সৃজনশীলতা নিয়ে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সাংবাদিকতা করেছেন তা আমাদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে।’

এদিকে, লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শাহনাজ মুন্নী, তসিকুল ইসলাম, দন্ত্যস রওশন এবং মামুন রশীদ।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন শাহনাজ মুন্নী, ওবায়েদ আকাশ, সাকিরা পারভীন, হানিফ খান এবং জিললুর রহমান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী নাসিমা খান বকুল এবং জয়ন্ত রায়। এছাড়াও ছিল ঝর্ণা আলমগীরের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’, সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনী ঝুম্পার পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘জলতরঙ্গ ডান্স কোম্পানী’র পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন মো. খালেদ মাহমুদ মুন্না, অনন্যা আচার্য্য, কাজী মুয়ীদ শাহরিয়ার সিরাজ জয়, মো. রেজওয়ানুল হক, ফারহানা শিরিন, শরণ বড়ুয়া এবং নাসিমা শাহীন ফ্যান্সি।

যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন সৌমিত্র মুখার্জি (তবলা), সুমন রেজা খান (কি-বোর্ড), অমিত দাস (গিটার) এবং মনির হোসেন (অক্টোপ্যাড)।

আগামীকাল ১লা ফাল্গুন, ১৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার। অমর একুশে বইমেলার ১৪তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ এবং বিদেশি সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জি এইচ হাবীব এবং শামসুদ্দিন চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেবেন করবেন সম্পদ বড়ুয়া, রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মো. আবু জাফর এবং মাহবুবা রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ফকরুল আলম।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

বইমেলা ২০২৩ লিটলম্যাগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর