রাজপথ থেকে বঙ্গভবনে মো. সাহাবুদ্দিন
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:৪০
ঢাকা: বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। রাজপথের সক্রিয় রাজনীতি থেকে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগ পর্যন্ত বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী ছিলেন মো. সাহবুদ্দিন। দেশের সাধারণ মানুষের কাছে তিনি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু নামেই সর্বাধিক পরিচিত।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় প্রার্থী হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের তার নাম চূড়ান্ত করেন। ওইদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচন কমিশনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাহাবুদ্দিনের নাম প্রস্তাব করেন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ তা সমর্থন করেন। পরদিন সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচনকর্তা কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন-১৯৯১ সনের ২৭(৭) নম্বর ধারা আইনের অনুসারে মো. সাহাবুদ্দিনকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।’
জানা গেছে, মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় (শিবরামপুর) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শরফুদ্দিন আনছারী ও মাতা খায়রুন্নেসা। তিনি ১৯৬৬ সালে পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এসএসসি, ১৯৬৮ সালে এইচএসসি পাস করেন ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহিদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্র জীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ সালে সংঘটিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর কারা বরণ করেন। ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতি থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব নির্বাচিত হন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন। পেশাগত জীবনে প্রথম দিকে সাংবাদিকতাও করেছেন। তিনি পাবনা প্রেসক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির জীবন-সদস্য।
ব্যক্তিজীবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর পাবনা শহরের দিলালপুর নিবাসী আলী আকতারের জ্যেষ্ঠ কন্যা ড. রেবেকা সুলতানার সঙ্গে সাহাবুদ্দিন বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। ড. রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়ে যুগ্ম-সচিব হিসেবে ২০০৯ সালে অবসরে যান। তিনি বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্চ প্রোগ্রাম বিভাগের অধ্যাপক এবং ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। সাহাবুদ্দিন-রেবেকা দম্পতির একমাত্র সন্তান মো. আরশাদ আদনান (রনি) দেশে ও বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে প্রাইম ব্যাংকের উচ্চ পদে কর্মরত।
অন্যদিকে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর উপর হামলা হয়। এসব হামলায় হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ওসব ঘটনার তদন্তে কমিশন গঠন করেন, যার প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ২০২২ সালে জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কাউন্সিলের পর তাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়। সর্বশেষ গত ১৫ জানুয়ারি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যর পাশাপাশি তাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত করা হয়েছে।
এদিকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্ব ব্যাংকের পদ্মাসেতু সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করেন মো. সাহাবুদ্দিন। এসব অভিযোগগুলো মিথ্যা ও অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণে তিনি সমর্থ হন। তার দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন কানাডা কোর্ট কর্তৃক সমর্থিত হয়।
সারাবাংলা/জিএস/ইআ