Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘যারা শিল্প-কারখানার অবস্থা জানতে আসেন, তাদের থেকে আমরা এগিয়ে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:৪১

ঢাকা: নিরাপদ শিল্প কল-কারখানা পরিবেশের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেকেই আসেন আমাদের দেশে শ্রমিকের অবস্থা জানতে বা শিল্প, কল-কারখানার অবস্থা জানতে। যেসব দেশ থেকে আসেন তারাও কিন্তু এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। তাদের থেকে আমরা অনেকটা অগ্রগামী, এটা বলতে বাধ্য হচ্ছি।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় বস্ত্র দিবস ২০২৩’ উদযাপন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় কর্তৃক দেশের বিভিন্ন জেলায় ৬টি টেক্সটাইল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।

সরকারের টানা মেয়াদে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আইএলও কনভেনশন অনুয়ায়ী সব থেকে বেশি প্রটোকল বা বিধিমালা আমরা অনুমোদন করেছি, স্বাক্ষর করেছি, গ্রহণ করেছি। আমি জানি অনেক উন্নত-ধনী দেশও তা করে নাই। কিন্তু বাংলাদেশ করেছে। এটা হলো বাস্তবতা। এটা সকলকে স্মরণ রাখতে হবে। অনেকেই আসেন আমাদের দেশে শ্রমিকের অবস্থা জানতে বা শিল্প কলকারখানার অবস্থা জানতে; যেসব দেশ থেকে আসেন, তারাও কিন্তু এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন। তাদের থেকে আমরা অনেকটা অগ্রগামী, এটা আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি।’

শিল্প কলকারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিল্প পুলিশ প্রতিষ্ঠা করার তৈরি পোশাক খাতে বিশ্বে সবুজ কারখানা করার মানদণ্ডে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

‘যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের হিসাব মতে শীর্ষ ১০০ গ্রিন ফ্যাক্টরির মধ্যে ৫০টি বাংলাদেশের। আর সেরা ১০ জনের মধ্যে আটটি ইন্ডাস্ট্রি, এখন এটা বৃদ্ধি পেয়েছে আরও। প্রায় ১১টি গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি হয়ে গেছে অর্থাৎ বিশ্বে দশের মধ্যে আমরা আটে আছি। কিন্তু আমাদের এখানে গ্রিন ফ্যাক্টরি অনেক বেশি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।’

আরেকটি রিপোর্ট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন সবুজ কারখানার সংখ্যা ১৮৭টি। এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের।’

তিনি আরও বলেন, ‘বস্ত্র মানুষের মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশে এমন সময় ছিল যখন দেশের সাধারণ মানুষের এক টুকরো কাপড় জোগাড় করতে তাদের কষ্ট ছিল। পেটে ভাত ছিল না, পরণে কাপড় ছিল না, মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না, রোগে চিকিৎসা ছিল না— এমন একটি অবস্থা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বিশেষ উদ্যোগ নেন এবং আমাদের বস্ত্র খাত যেন গতিশীল হয়, আরও উন্নত মানের হয় সেই ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। যেসব শিল্প বন্ধ ছিল; কারণ অধিকাংশ কল-কারখানার মালিক তো পাকিস্তানিরা ছিল, যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই কল-কারখানা বন্ধ করে দিয়ে চলে যায়। সব বন্ধ কল-কারখানা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয়করণ করে সেগুলো পুনরায় চালু করে। আর বস্ত্র খাতকেও আরও উন্নত করার বিভিন্ন পদক্ষেপ তিনি নেন।’

পোশাক শিল্প মেয়েদের কর্মসংস্থানের একটি নতুন দার উন্মোচন করেছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে শুধু অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী না, নারী-পুরুষ উভয়েরই কর্মসংস্থানের বিরাট সুযোগ হয়েছে এই বস্ত্র শিল্পের থেকে। বিশেষ করে আমাদের পোশাক শিল্প থেকে। তাছাড়া বস্ত্র-সুতা উৎপাদনের আমাদের যে ঐতিহ্য ছিল তা একে একে হারিয়ে যাচ্ছিল। সেগুলো আজকে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আবার নতুনভাবে শুরু করতে।

তৈরি পোশাক রফতানির মাধ্যমে আমরা যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি, ২০২২ সালে বাংলাদেশের ৪৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করা হয়। এটা আমাদের অর্থনীতিতে একটা বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গ্রামের মহিলারা এসে যখন কাজ করে, এই কাজের ফলে গ্রামীন অর্থনীতিতেও তারা বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছে। একেকটি পরিবার আর্থিক সক্ষমতা অর্জন করছে।’

আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই শিল্প পরিচালনা সম্পূর্ণ বিদেশ নির্ভর ছিল। ফরওয়ার্ড-ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের ব্যবস্থা ছিল না, বন্ডেড হাউস ছিল না। প্রথমবার সরকারে এসেই বন্ডেড হাউস ও ফরওয়ার্ড লিংকেজের ব্যবস্থা এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের ব্যবস্থাও এখন আমরা যথাযথভাবে নিয়েছি। ফলে আমাদের সম্পূর্ণভাবে বিদেশ নির্ভর না হয়ে আমরা যেন নিজের দেশে নিজেই উৎপাদন করতে পারি, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া।’

একটি শিল্প পরিচালনা করতে গেলে যে দক্ষ জনশক্তি দরকার, বিশেষ করে পরিচালন ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা পিছিয়ে ছিলাম। বিদেশ থেকে লোক নিয়ে এসে পরিচালনা করা হতো। এইদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা ইতোমধ্যে টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি। এখন বিভিন্ন জায়গায় টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট তৈরি করে দিয়ে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করে দিচ্ছি বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈশ্বিক মন্দার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। তারপরও কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে যাতে ব্যয় সাশ্রয় হয়, আমরা তার ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর উৎপাদনশীলতা যাতে বৃদ্ধি পায় তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার দিকে গুরুত্বরোপ করে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি তাঁত শিল্পের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্যও আহ্বান জানান তিনি।

সারাবাংলা/এনআর/ইআ

টপ নিউজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

৯০০তম গোলে ইতিহাস গড়লেন রোনালদো
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০৪

সম্পর্কিত খবর