Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই চলছে কাজ, কথা বলতে নারাজ পিডি

রাজনীন ফারজানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:৪৯

ঢাকা: মহাখালীর আমতলী থেকে গুলশান-১ পর্যন্ত এই রাস্তাটির নাম বীর উত্তম এ কে খন্দকার সড়ক। এই সড়কে পাইপলাইন স্থাপন, আরসিসি ড্রেন, আরসিসি মিডিয়ান, ফুটপাত নির্মাণ এবং রাস্তা কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে। কাজের সময়সীমা ছিল ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে এটি ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। আর এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। কাজ করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স জনি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড’।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার দু’ধারে ও ফুটপাতে একযোগে কাজ চলছে। কোথাও কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী বা সাবধানবাণী নেই। রাস্তার চারদিকে শুধু খোঁড়াখুঁড়িই নয়, বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। এসব গর্ত থেকে আবার রড উঁচিয়ে রয়েছে। একটু অসাবধান হলেই হয় গর্তে পড়ে বড়ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পাশাপাশি রয়েছে ধূলা দূষণ, হাঁটার অনুপযোগী ফুটপাত। এছাড়া এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই কাজ চলায় দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যামে পড়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার একটি হলো বীর উত্তম এ কে খন্দকার সড়ক। এই সড়কে দুই পাশে রয়েছে সরকারি তিতুমীর কলেজ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক সেন্টার, পর্যটন মোটেল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর, ডিসিসি মার্কেট, জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালসহ অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সেজন্য এই এলাকায় প্রতিদিনই মানুষের চলাফেরা বেশি থাকে।

মহাখালীর বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সোশ্যাল অ্যাকটিভিস্ট শাশ্বতী বিপ্লব। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে অফিসে যাওয়া-আসার সময় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তিনি। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এত ব্যস্ত রাস্তা, কিন্তু কাজের ধীরগতি দেখে মনে হয়, কোথাও কোনো বাধ্যবাধকতা নাই।’

সরকারি তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি শামীম হোসেন শিশির সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি রীতি মতো জান হাতে নিয়ে বাইকে চলাচল করি। রাস্তার দু’ধারে ও ফুটপাতে একযোগে কাজ চলছে। চারদিকে শুধু খোঁড়াখুঁড়িই নয়, বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। এসব গর্ত থেকে আবার রড উঁচিয়ে আছে। একটু অসাবধান হলেই হয় গর্তে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারি।’

একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে অনিরাপদ অবস্থায় কাজ চলছে এখানে। আমাদের শিক্ষার্থীরা যখন একযোগে প্রবেশ করে বা বের হয় তখন ফুটপাত ও গর্ত উঁচিয়ে থাকা রডে আহত হওয়ার আতঙ্কে থাকেন। তাছাড়া দীর্ঘ জ্যাম তো আছেই। আমরা শিক্ষকরাও আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করি। যারা কাজ করছেন তাদের কয়েকবার মৌখিকভাবে বলা হলেও নিরাপত্তার জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়নি।’

মহাখালী থেকে গুলশান-১-এ যাওয়ার পথে এমনই এক গর্তে পড়তে পড়তে বেঁচে গেছেন উজ্জল হোসেন। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে সন্ধ্যার পর মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড্ডা আসছিলেন তিনি। পথে হঠাৎ বাইকের ব্রেক চাপতে বাধ্য হন। কারণ, হাতের বামেই বিরাট গর্ত। উঁচিয়ে আছে লম্বা লম্বা রড। সারাবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বাইক চালাই, তাই নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। আনাড়ি চালক হলে পড়েই যেতাম।’

এভাবেই দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকেন এই এলাকার বিভিন্ন হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য বা অন্যান্য সেবা নিতে আসা মানুষেরা। জাতীয় বক্ষব্যাধি ও ক্যানসার হাসপাতালে আসা রোগীদের কয়েকজন স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, চিকিৎসার জন্য এই এলাকায় আসতে বাধ্য তারা। কিন্তু তীব্র জ্যামের কারণে দেরি হয়ে যায়। সেইসঙ্গে রাস্তা ও ফুটপাতে থাকা গর্তের জন্য দেখেশুনে পথ চলতে হয়।

কাজের বর্তমান অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যায়, গুলশান-১ থেকে আমতলী পর্যন্ত অংশে পাইপ স্থাপন, পিটের গাঁথুনি, পিটের স্ল্যাব, ক্যাচপিট, বালি ভরাট, আংশিক ওয়াটার বাউন্ড ম্যাকাডামের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া আরসিসি মিডিয়ানের কাজ চলমান রয়েছে।

আর কাজের সময়সীমা বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে বলা হয়, রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক হওয়ায় ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ থেকে রাস্তাটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে পাইপলাইনের কাজ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া ইদুল ফিতর ও ইদুল আযহা উপলক্ষেও ডিএমপির (ট্রাফিক) অনুরোধে ট্রাফিক চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রাখা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ইউটিলিটি লাইনের জটিলতা থাকায় পাইপ লাইন স্থাপন কাজ অনেক দিন বন্ধ থাকে।

নিরাপত্তা বেষ্টনী ও কাজের সময়সীমা বাড়ানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৭ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ও এই প্রকল্পের পরিচালক মো. ফরহাদ কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি লিখিত আবেদন করতে বলেন। এদিকে, প্রকল্প এলাকায় সরকারি উন্নয়ন কাজের তথ্য সম্বলিত সাইনবোর্ড লাগানোর কথা থাকলেও মহাখালীর ওই রাস্তায় সেটি চোখে পড়েনি। কোথাও সাইনবোর্ড আছে কি না?- সে বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন করে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক কোনো সাড়া দেননি।

অন্যদিকে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জনি এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ বাবুর কাছে কাজটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। কোথাও নিরাপত্তা বেষ্টনী নাই কেন? জানতে চাইলে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ঢেকে রাখলে কাজ করব কিভাবে?’ এর পর আর কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ফোনের কল কেটে দেন তিনি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা সারাবাংলা বলেন, ‘আমি রিসেন্টলি এই রাস্তায় ভিজিট করেছি। ঠিকাদারকে নির্দেশ দিয়েছি দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করার জন্য।’ কাজের তথ্য সম্বলিত সাইনবোর্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোথাও না কোথাও আছে নিশ্চয়ই। যদি না থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম

আমতলী গুলশান প্রকল্প পরিচালক বীর উত্তম এ কে খন্দকার সড়ক মহাখালী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর