বসন্তের রঙে রঙিন চবি ক্যাম্পাস
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২৩:০৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। পাহাড়ের কোলে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসও ঋতুর পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে হাজির হয় নতুন চেহারা নিয়ে। শীতের শুষ্কতা আর মৌনতা ভেঙে প্রকৃতিকে যখন লাল-সবুজে সাজাতে ব্যস্ত বসন্ত, সেই নতুন পাতার উপস্থিতি আর পাখির কলতানে ক্যাম্পাসও সেজেছে নতুন রঙে।
ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন। বসন্তের বর্ণনা শেষ হয় না কোনো রং তুলির আঁচড়ে । গাছে গাছে ফুটেছে রক্তশিমুল-পলাশ, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গমসহ বাহারি ফুল। ফুলের সৌরভে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠবে চারপাশ। বসন্ত বাতাস দোলা দেবে সবার মনে সাজবে বাসন্তি সাজে। তরুণীরা পরবে হলুদ রঙের বাসন্তী শাড়ি। একইসঙ্গ তরুণরাও বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি বা ফতুয়া পড়ে বসন্তের হাওয়ায় মেতে উঠছে।
পহেলা ফাল্গুনের সেই বাসন্তি রঙের সঙ্গে ভালোবাসা দিবসের যে রঙের মিশেল, এই রঙের ছোঁয়ায় সেজে উঠল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস। শীতের শেষে বসন্তের ছোঁয়ায় যেমন জেগে ওঠে প্রকৃতি, তেমনই জেগে উঠল যেন তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে। বিংশ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য বাঙালি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের বলেছেন- ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক/আজ বসন্ত’। একদিকে কোকিলের ডাক, অন্যদিকে ফুলে ফুলে প্রজাপতির ওড়াউড়ি— তাকালেই বোঝা যায় বসন্তের উপস্থিতি।
বঙ্গাব্দ বর্ষপঞ্জির সংস্কারের পর থেকেই ঋতুরাজ বসন্তের শুরুর দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি পড়ছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দুইটি দিনকে একসঙ্গে বরণ করে নিতেই মঙ্গলবার চবি ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছিল মুখর। জিরো পয়েন্ট, শহিদ মিনার, জয় বাংলা ভাস্কর্য, মুক্তমঞ্চ, লেডিস ঝুপড়ি, কলা ঝুপড়ি, ফরেস্ট্রি রোডসহ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রতিটি চত্বরেই ছিল শিক্ষার্থীদের পদচারণা। কমলা-হলুদ-লাল রঙের শাড়ি-পাঞ্জাবিতে ক্যাম্পাস ছিল বর্ণিল।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় সংগীত বিভাগের আয়োজনে ‘আজ সবার রঙে রঙ মিশাতে হবে’ স্লোগান ধারণ করে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বসন্ত উৎসব পালন করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নাচ-গান, নাটকসহ নানা আয়োজনে বসন্ত বরণ আয়োজন করে থাকে। এই আয়োজনের অংশ হিসেবে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আয়োজন করেছে বসন্ত উৎসব। এখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, ‘বাঙালি আনন্দ ও উৎসব প্রিয় জাতি। বছরের বেশিরভাগ সময়ে বাঙালি বিভিন্ন উৎসব পালন করে থাকে। আবহমানকাল থেকে বাঙালি এ সব উৎসব অত্যন্ত প্রাণোচ্ছ্বলভাবে পালন করে এসেছে। করোনা মহামারীসহ বিভিন্ন কারণে যদিও এ সকল আনন্দ-উৎসব সাম্প্রতিককালে কিছু কম ছিল কিন্তু বর্তমানে এ সকল উৎসব আবারও স্বমহিমায় ফিরে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর আজকের বসন্ত উৎসব আয়োজনে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীসহ সকলের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এ উৎসবের মধ্যদিয়ে প্রজন্মের সন্তানেরা বসন্ত উৎসব সম্পর্কে অবহিত হবার সুযোগ পাবে এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অধিকতর সুদৃঢ় হবে মর্মে মাননীয় উপাচার্য প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। উদীচী অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে সকল প্রকার অন্ধকার-কুসংস্কারকে পিছনে ফেলে প্রগতি ও সুন্দরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে এবং ভবিষ্যতেও তাদের কর্মতৎপরতা অব্যাহত থাকবে।’
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের বিজয়া ভট্টাচার্য বলেন, ‘ক্যাম্পাসের বসন্ত মানে অন্যরকম। চারদিকে ফুলে ভরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এমনিতে সুন্দর। সকাল থেকে উদীচী,সংগীত বিভাগের বসন্ত বরণে অংশ নিয়েছি। সবকিছু মিলে ভালো লাগছে।’
অন্যদিকে সাহিত্য সংসদের উদ্দেগ্যে বই বিমিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়াও ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালোবাসুন’ স্লোগানে সুন্দরবন দিবস পালন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ সংসদে। তাদের উদ্যোগে র্যালিও করা হয়।
বসন্ত উৎসব উপলক্ষে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী চবি সংসদ আয়োজিত আলোচনা সভায় সাধারণ সম্পাদক পার্থ প্রতীম মহাজন সঞ্চালনায় সংগঠনের সভাপতি ইউসুফ মুহম্মদ সভাপতিত্ব করেন। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে। আরও বক্তব্য রাখেন চবি সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর সিরাজ উদ দৌল্লাহ, আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান এবং বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ ঘোষ।
সারাবাংলা/সিসি/একে