বসন্তের রং একুশের বইমেলায়
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২৩:২৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ফাগুনের প্রথম দিনে অমর একুশের বইমেলায় পাঠক সমাগম ছিল বেশি। বিভিন্ন বয়সের নরনারী বাসন্তী সাজে গেছেন মেলায়। বই কিনুক আর না কিনুক, তাদের কলকাকলিতে মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গন।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে একুশের বইমেলায় পাঠকের ভিড় দেখে বিক্রেতাদের মধ্যেও উৎসাহের কমতি ছিল না।
বাসন্তী রঙের শাড়ি, খোঁপায় হলুদ গাঁদার মালা, অন্যদিকে রঙবেরঙের পাঞ্জাবি- এমন সাজেই দেখা গেছে মেলায় আসা অধিকাংশ তরুণ-তরুণীকে। এক হাতে বই, অন্য হাতে সেলফির স্টিক কিংবা মোবাইল, পাশে দাঁড়ানো প্রিয়জন, ভালোবাসায় মুখর এ এক অনন্য বিকেল!
রাইসা মনি, তাসনিম জাহান, রাহেলা নিধি, কোহিনুর আক্তার রেখা- চার বান্ধবী গেছেন বইমেলায়। চারজনই পড়েন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজেদের বসন্তের রঙে রাঙিয়ে তারা ঘুরছিলেন এক স্টল থেকে আরেক স্টলে।
রাইসা মনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বসন্ত মানেই উৎসব। বসন্ত মানে প্রকৃতির সাথে নিজেকে নতুন করে খুঁজে নেওয়া। আর এ উৎসবের সঙ্গে যদি থাকে বই, তাহলে তো আর কথাই নেই। ছোটোবেলা থেকেই হুমায়ুন আহমেদের বই পড়ে বড় হয়েছি। গতবছর মেলায় আসতে পারিনি, এবার বান্ধবীদের নিয়ে চলে এলাম।’
রাহেলা নিধি বলেন, ‘একাডেমিক বই ছাড়া অন্য বই পড়ার তেমন সুযোগ হয় না। বই তেমন কেনাও হয় না। মাঝে মাঝে তথ্যনির্ভর বই পড়ি। এরকম কিছু বই পেলে কিনব। আর ভালো লাগলে কিছু গল্পের বই কেনার ইচ্ছা আছে।’
বাবার সঙ্গে নগরীর হালিশহর থেকে প্রথমবার বইমেলায় এসেছেন গরীবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র রাহুল দত্ত। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্কুলে বইমেলার ব্যাপারে জেনে অনেকদিন ধরেই আসার ইচ্ছা ছিল। এই প্রথম আমি বইমেলায় এসেছি। অনেক ভালো লাগছে। কিছু সাইন্স ফিকশন বই কিনেছি। বাসায় বড় আপু বলেছে জাফর ইকাবালের কিছু বই নিয়ে যেতে। সেগুলো কিনব।’
এদিকে মেলা শুরুর পর থেকে বিক্রি এখনও আশানুরূপ নয় বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
কথা-বিচিত্রা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী ইমন হোসেন নিলয় সারাবাংলাকে বলেন, ‘অন্যন্যদিনের তুলনায় আজ যা একটু মানুষ এসেছে, তবে অনেকে শুধু বই নেড়েচেড়ে দেখছেন আর ছবি তুলছেন। বই কিনছেন না। আগেরবারের মতো এবার মেলায় বই কিনতে আসা মানুষের সংখ্যা খুব কম।’
নন্দন বইঘরের স্বত্বাধিকারী সুব্রত কান্তি চৌধুরী বলেন, ‘আগে যেসব বইমেলা হয়েছে সেগুলো থেকে এবারের বইমেলায় মানুষ অনেক কম। তেমন বই বিক্রিও হচ্ছে না। আর মৌসুমি লেখকদের ভিড়ে প্রকৃত লেখকদের বই কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছেন পাঠকরা। যেভাবে বইমেলার প্রচার হওয়ার কথা ছিল সেভাবে হয়নি। তাই বইমেলায় আনাগোনা কম। তবে আজকে বিশেষ দিন হওয়ায় মানুষের আনাগোনা একটু বেড়েছে।’
এদিকে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। ভিড় সামলে নিয়ে স্টলের সামনে জায়গা করে পছন্দের বই কেনেন ক্রেতারা। যেন মনে হচ্ছে উৎসবের প্রকাশটা যেন বইমেলাতে এসেই প্রাণ পেয়েছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আয়োজনে অমর একুশের বইমেলা শুরু হয়েছে।
ছবি: শ্যামল নন্দী, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট
সারাবাংলা/আইসি/একে