‘জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় উন্নয়ন হতে হবে’
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২১:৪৫
ঢাকা: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, কোভিড-১৯ এ আমাদের দেশে এ পর্যন্ত যে সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, বায়ুদূষণে প্রতি বছরই তা হচ্ছে। সব দূষণ বিবেচনায় বায়ূ দূষণের প্রভাব তিন গুণ বেশি। তাই জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় সব উন্নয়ন হওয়া জরুরি।
বুধবার (১৫ই ফেব্রুয়ারি) স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিঃসরণ মানমাত্রার পুনর্বিবেচনা’ শিরোনামে শীর্ষক একটি জাতীয় আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিদেশিরা যেহেতু তাদের ইন্টারেস্ট অনুযায়ী গবেষণা করে তাই তাদের স্বার্থটা আগে দেখে। তাই আমাদের উন্নয়নের সব গবেষণা দেশীয় গবেষকদের দিয়ে করানো দরকার বলে মনে করেন সাবের হোসেন চৌধুরী।
মূল বক্তব্যে স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ‘বায়ুদূষণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনুধাবন করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেখানে বস্তুকণা ২.৫ এর মানমাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম থেকে কমিয়ে ৫ মাইক্রোগ্রাম করেছে, সেখানে সাম্প্রতিক পাস হওয়া বায়ু দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২ এর ১ নম্বর তফসিলে বায়ুর মানমাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম থেকে বাড়িয়ে ৩৫ মাইক্রোগ্রাম করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অপরদিকে একই বিধিমালার তফসিল ৫-এ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্ট্যাক নিসঃসরণের সর্বোচ্চ সীমা সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন এর অক্সাইডসমূহ এবং বস্তুকণার মানমাত্রা যথাক্রমে ঘনমিটারে ২০০, ২০০ এবং ৫০ মিলিগ্রাম করা হয়েছে, যা উন্নতদেশের মানমাত্রার চেয়ে নূন্যতম ৪-৫ গুণ বেশি। অর্থাৎ উন্নত দেশগুলো তাদের দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করার সময় নিঃসরণ মাত্রার যে মানদণ্ড মেনে চলে, সেই মানমাত্রা দেশগুলো উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে আমাদের দেশে কাজ করার সময় মানে না।’
আমাদের দেশে যে মেগাপ্রজেক্ট হচ্ছে তার ‘হেলথ ইমপ্যাক্ট’ বিবেচনায় অর্থনৈতিক মূল্য নিরূপণ করা দরকার বলে মনে করেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ’র সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি এ সময় পরিবেশসম্মত হয় না এমন প্রজেক্ট বাতিল করা উচিত বলে মন্তব্য করেন।
সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’র প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ‘বায়ুমান নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের জীবাশ্ম জালানিভিত্তিক উৎপাদন থেকে পর্যায়ক্রমে সরে আসতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘প্রজেক্টগুলোর এনভায়রনমেন্টার ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (ইআইএ) ত্রুটিপূর্ণ। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পরিবেশগত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় করা হচ্ছে। উন্নত দেশগুলো এসব ক্ষেত্রে যা মানছে, তা আমাদের এখানে মানা হচ্ছে না।’
ফিনল্যান্ডের সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’র কো-ফাউন্ডার লরি মিল্লিভিরটা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানমাত্রার মধ্যে সালফার ও মারকিউরি উল্লেখ নেই। এটি যুক্ত করা দরকার। সেইসঙ্গে প্রতিনিয়ত কলকারখানায় নিঃসরণ মাত্রা পর্যবেক্ষণ এবং আইন করে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।’
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র লেকচারার মাহমুদা ইসলামের সঞ্চালনায় ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে আরও উপস্তিত ছিলেন- সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. এস এম মনজুরুল হান্নান খান, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’র প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা, সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) সাবের হোসেন চৌধুরী