স্বাধীনতার ইতিহাসে উজ্জ্বল নক্ষত্র সার্জেন্ট জহুরুল হক
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২৩:০৬
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র শহিদ ব্যক্তিত্ব সার্জেন্ট জহুরুল হক। আজ তার ৮৫ তম জন্মদিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার পান।
জহুরুল হক ১৯৩৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী জেলার সোনাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সালে নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫৬ সালে জগন্নাথ কলেজের (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন এবং ওই বছরই পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগদান করেন। কালক্রমে তিনি ‘সার্জেন্ট’ পদে উন্নীত হন। ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় গ্রেফতার হন সার্জেন্ট জহুরুল হক।
তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাটির সরকারি নাম রেখেছিল ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্যদের বিচার’। এই মামলায় ৩৫ জনকে আসামী করা হয়। তন্মধ্যে ১ নম্বর আসামী হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে রাখা হয়। জহুরুল হককে ১৭ নম্বর আসামী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
প্রবল গণ-আন্দোলন তথা উত্তাল ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব খানের সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে একান্ত বাধ্য হয়। ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবুর রহমান-সহ অন্যান্যদের মুক্তির দাবি করেছিল। সরকার প্রধান হিসেবে আইয়ুব খান সমগ্র পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ঠিক এ সময়টিতেই সার্জেন্ট জহুরুল হকের জীবনে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টে। গ্রেফতারের পর তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, পরে কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে আটকে রাখা হয়। বন্দি অবস্থায় ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯, হাবিলদার মনজুর শাহ সার্জেন্ট জহুরুল হককে লক্ষ্য করে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ জহুরুল হককে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে তিনি মারা যান। এ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে জনগণ প্রচণ্ড আন্দোলন গড়ে তোলে।
শেষ পর্যন্ত আইয়ুব খানের পতন হয়। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় এবং শেখ মুজিবসহ সব বন্দিরা নিঃশর্ত মুক্তি পায়।
বাংলাদেশের মানুষ দেশমাতৃকার মুক্তিপ্রয়াসী এই বীর যুবককে সেদিন কেবল শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেননি, দেশে স্বায়ত্তশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তার নামে শপথ গ্রহণ করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ সেদিন ইকবাল হলের নাম পরিবর্তন করে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল নাম প্রবর্তন করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে বিমানবাহিনীর চট্টগ্রাম বেইজও সার্জেন্ট জহুরুল হক নামাঙ্কিত হয়।
লেখক: শিক্ষার্থী
সারাবাংলা/এজেডএস/এসবিডিই