পণ্যের দাম বাড়ালে শাস্তি, কমালে পুরস্কার চান তথ্যমন্ত্রী
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:৫১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ‘ইকোনমিক লাইফলাইন’ বন্ধ করতে বিএনপি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গরু-ছাগল, মুরগির ওপরও পেট্রোল বোমা মেরেছিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। পণ্যের মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। নগরীর রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের আয়োজনে মাসব্যাপী এই মেলা শুরু হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৩ থেকে ১৫ সালে সারাদেশে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছিল মানুষের ওপর। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মুরগি, গরু ছাগলের ওপরেও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হচ্ছে বাংলাদেশের ইকোনমিক লাইফলাইন। সেটাকে বন্ধ করে দেয়ার জন্য বিএনপি এই কাজ করেছিল। তখন আমাদের সরকার সমস্ত প্রোটেকশন দিয়ে রফতানিসহ সবকিছু চালু রেখেছিল। তারা যদি আবার সুযোগ পায়, দেশটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে।’
‘আজ দেশ সমৃদ্ধ হচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্যে সমৃদ্ধি আসছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখন বিদেশে বিনিয়োগ করছে, এটি জননেত্রী শেখ হাসিনা না হলে হতো না। এখানে যদি আবার অন্য সরকার আসে এগুলো সব বন্ধ হয়ে যাবে।’
পণ্যের মজুতদারির বিরুদ্ধে এফবিসিসিআইসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে কঠোর অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশে যখন পূজা পার্বণ-উৎসব হয়, তখন পণ্যের দাম কমে। আর আমাদের দেশে যখন উৎসব হয়, তখন পণ্যের দাম বাড়ে। যখন আমাদের কোনো উৎসব হবে, সেটি ঈদ-রোজা-পূজা যেটিই হোক, তখন যেন পণ্যের দাম কমানোর মানসিকতা ব্যবসায়ীরা রাখে। যারা মজুতদারি করবে তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আবার যারা পণ্যের দাম কমাবে তাদের পুরস্কৃত করা যেতে পারে।’
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গত ১৪ বছর ধরে আপনারা নির্বিঘ্নে ব্যবসা করেছেন। দেশের সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেক ব্যবসায়ীরও সমৃদ্ধি এসেছে। আপনারা যদি নিজের কাছে প্রশ্ন করেন, ১৪ বছর আগে আপনার ব্যবসার কী ব্যাপ্তি ছিল আর এখন ব্যাপ্তি কোথায়। একবার ভাবুন, আমাদের জিডিপির আকার ছিল ৮০ বিলিয়ন ডলার। আজ সেটি পৌনে ৫০০ বিলিয়ন ডলার।’
‘নিরবিচ্ছিন্নভাবে দেশের সমৃদ্ধির সাথে যে ব্যবসা-বাণিজ্যেরও সমৃদ্ধি আসছে সেটি যদি অব্যাহত রাখতে হয়, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। তিনি অব্যাহতভাবে যদি দেশ পরিচালনা করতে পারেন তাহলে আমাদের দেশকে আমরা স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছাতে পারব। তা যদি না হয় তাহলে স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছাতে পারব না।’
দেশের উন্নয়নে বিএনপি খুশি নয় মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন ও এগিয়ে যাওয়া নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব প্রশংসা করে, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রশংসা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আমাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরপূর্তি উপলক্ষে যে বার্তা পাঠিয়েছেন, সেখানে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেছেন।’
‘সমগ্র বিশ্ব প্রশংসা করে, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বিএনপি ও তার দোসরেরা প্রশংসা করতে পারে না। পদ্মা সেতু দিয়ে ওপাড়ে গিয়ে জনসভা করে বলে দেশে কোনো উন্নয়ন হয়নি। ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে গিয়ে বলে কিছুই হয়নি। যাদের চোখ থাকতে অন্ধ, কান থাকতে বধির তাদেরকে কেউ আলোও দিতে পারবে না, শ্রবণশক্তিও দিতে পারবে না।’
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এম এ লতিফ, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং বাণিজ্য মেলা কমিটির চেয়ারম্যান একেএম আক্তার হোসেন।
রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে প্রায় ৪ লাখ বর্গফুট জায়গায় এ মেলায় ২০টি প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, ৫৬টি প্রিমিয়ার স্টল, ৯৪টি গোল্ড স্টল, ৪৮টি মেগা স্টল, ১১টি ফুড স্টল এবং তিনটি আলাদা জোন নিয়ে মোট ৪০০ স্টলে তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে।
এবার মেলায় প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। তবে নগরীর বিভিন্ন স্কুলের প্লে থেকে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাসব্যাপী এ মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
সারাবাংলা/আইসি/একে