অবহেলায় নায়ক মান্নার মৃত্যু, স্থগিতাদেশে থেমে আছে বিচার
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:৩৪
ঢাকা: বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম নায়ক এস এম আসলাম তালুকদার মান্না। অবহেলায় তার মৃত্যুর ১৪ বছর পার হলেও এখনও শেষ হয়নি এই ঘটনার বিচার। চিত্রনায়ক মান্নার মৃত্যুতে ইউনাইটেড হাসপাতালের কিছু চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়।
বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ৬ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদনও দাখিল করা হয়। মামলার আসামিরা হলেন- ডা. মো. এনায়েত হোসেন শেখ, ডা. জহির উদ্দিন মাহমুদ ইলিয়াস, ডা. মোমেনুজ্জামান, ডা. ফাতেমা, ডা. মাইনুল ইসলাম মজুমদার ও ডা. খন্দকার মাহবুব হোসাইন।
আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিলেও উচ্চ আদালতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। ফলে বিচার প্রক্রিয়া আর এগোতে পারেনি।
১৫ বছর আগে এই দিনে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অ্যাকশন হিরো এস এম আসলাম তালুকদার মান্নার মৃত্যু হয়েছিল। ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বুকে ব্যথা অনুভব করায় ভোর রাত ৪টায় মান্না ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু চিকিৎসকরা হাসপাতালে আসেন সকাল ৯টায়। চিকিৎসা দেরিতে শুরু হওয়ায় এই মৃত্যু বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
‘মায়োকারডিয়াল ইনফ্রাকশনে’ আক্রান্ত হওয়ার ৯০ মিনিটের মধ্যে রোগীকে নির্দিষ্ট ইনজেকশন দিতে হয়। কিন্তু মান্নাকে এই ইনজেকশন দেওয়া হয় আক্রান্ত হওয়ার ৫ ঘণ্টা পর। হৃদরোগ বিভাগের ওই ৬ চিকিৎসকদের অবহেলার জন্যই মান্নার মৃত্যু হয়, এমন অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করা হয়।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার এক নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন। তবে উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ থাকায় সাক্ষ্য গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর জাহাঙ্গীর হোসেন দুলাল জানান, সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিনই মামলা স্থগিত করে হাইকোর্ট। ১৪ বছর হয়ে গেছে স্থগিত রয়েছে মামলাটি। এটি একটি আলোচিত মামলা। মান্না মানে একটা ইন্ডাস্ট্রি। তার মৃত্যুর পর খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই চার্জগঠন শেষ হয়। কিন্তু ১৪ বছর ধরে মামলা স্থগিত, যা কাম্য নয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত আছি। স্থতিগাদেশ তুলে দিলে দ্রুত সময়ে সাক্ষী হাজির করে মামলার বিচার শেষ করা যাবে।’
এ বিষয়ে জানতে মান্নার স্ত্রী শেলী মান্নাকে কয়েক দফা মোবাইলে ফোন করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার মুশফিকুল হুদা জানান, মামলাটির স্থগিতাদেশ এখনও রয়েছে। অদৃশ্য কোনো কারণে তা বাতিল হচ্ছে না। তবে আমরা নতুন আইনি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। আশা করছি খুব দ্রত ভালো ফলাফল পাব।
জানা যায়, ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বুকে ব্যথা অনুভব করায় ভোর রাত ৪টায় মান্না ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু কিছু চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে মান্নার মৃত্যুর হয়েছে বলে তার আত্মীয়রা অভিযোগ করেন। ওই ঘটনায় ১৭ সেপ্টেম্বর প্রয়াত মান্নার স্ত্রী শেলী কাদেরের ভাই রেজা কাদের ঢাকার মেট্রোপলিন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
আদালত মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান সিদ্দিক বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ৬ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ১৮ অক্টোবর চার্জগঠন করেন তৎকালীন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক ফিরোজ আলম। এরপর সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেন বিচারক। সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য থাকা দিনেই সংশিষ্ট বিচারক বদলি হয়ে যান। থেমে যায় সাক্ষ্য গ্রহণ। এরপর আসামিরা মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
সারাবাংলা/এআই/এমও