Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:২৯

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: আওয়ামী লীগের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে আবারও নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে গোপীবাগে নীরব পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে তিনি দলটির অবস্থান পরিষ্কার করেন। সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা এবং বিদ্যুত-গ্যাস-দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এ পদযাত্রা আয়োজন করে।

গোপীবাগ ওয়াক্তিয়া মসজিদের সামনের সমাবেশ শেষে বিকেল ৪টায় পদযাত্রা শুরু করে। পদযাত্রাটি মধুমিতা সিনেমা হল, টিকাটুলী, দয়াগঞ্জ, ধোলাইখাল মোড়, রায়সা বাজার মোড় হয়ে নয়াবাজারে নবাব ইউসুফ মার্কেটে গিয়ে শেষ হয়।

একই দাবিতে একই সময় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে উত্তরার কবি জসিম উদ্দিন সড়ক থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত পদযাত্রা হয়। এতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নেতৃত্ব দেন।

আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ঢাকার লোক আপনারা, আপনারা ভালো করে জানেন, ঘোড়াও যে হাসে জানেন তো। কখন হাসে জানেন? যখন ওই ধরনের কথা শুনতে পায়। বিদেশি আসছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী বলছেন যে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে খুব ভালো নির্বাচন হবে, সবাই অবাধে ভোট দিতে পারবে।’

‘ঘোড়াও হাসতে শুরু করেছে এই কথা শুনে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, সেই নির্বাচনে বিএনপি যাবে না, যে নির্বাচনে কেউ ভোট প্রদান করতে পারবে না। আমাদের সোজা কথা। অনেক ক্ষতি করেছেন আমাদের। এ দেশের যে স্বপ্ন ছিল, যে আকাঙ্ক্ষা ছিল— সব কিছুকে ভেঙে ধুলিসাৎ করে দিয়েছেন। আমরা আমাদের হিস্যা চাই’— বলেন মির্জা ফখরুল।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের একটাই কথা। দুই কথা, তিন কথা, চার কথা বলে সময় নষ্ট করার দরকার নাই। এই মুহূর্তে চাই পদত্যাগ। পদত্যাগ করুন, দেশের মানুষকে বাঁচতে দিন। অন্যথায় দেশের মানুষই তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ওরা বলত বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না। এখন বিএনপির আন্দোলনকে ভয় পায়, আন্দোলনকে পাহারা দেয়। পাহারা দিয়ে আন্দোলন ঠেকানো যায়? ঠেকানো যাবে না। তখন পালাবার পথ খুঁজে পাবে না ওরা।’

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এখনো বলছি সময় আছে, দেয়ালের লিখন পড়ুন, মানুষের ভাষা বুঝুন, গ্রামের যান দেখুন। ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির নেতৃত্বে কীভাবে হাজার হাজার মানুষ পদযাত্রা করেছে। আজকে সত্যিকার অর্থেই এই সরকারের পদত্যাগের দাবি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এখনো সময় আছে পদত্যাগ করুন, পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করুন এবং নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।’

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে রাষ্ট্রপতি বলে একজন নির্বাচন করছেন। আমরা কিছু জানি? কেউ কিছু জানে? উনি (নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি) নিজেও জানতেন না। টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়ে উনি বলেছেন, আমি নিজেও জানতাম না।’

‘এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনই প্রমাণ করে যে, সংবিধান যেটা আছে এই সংবিধান দিয়ে এ দেশের সমস্যার এখন সমাধান হবে না। এজন্য এই সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আমরা যে ২৭ দফা দিয়েছি, সেই ২৭ দফার মধ্যে এই সংবিধান সংশোধনের কথা বলেছি। আমরা বলেছি, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, মন্ত্রীদের ক্ষমতা— এইগুলোতে ভারসাম্য আনতে হবে এবং সকল মানুষের অংশ থাকে সেই ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থাকে কীভাবে স্থায়ী করা যায়, তার চিন্তা করতে হবে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘ওরা পুলিশকে ব্যবহার করছে। গতকাল আইন ও সালিশ কেন্দ্র একটা পরিসংখ্যান বলেছে, গত ১৩ মাসে ৭২ জনকে বিনা বিচারে এক্সট্টা জুড়িশিয়াল কিলিং করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। তারা বলেছে যে, অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়া হচ্ছে। গত বছর আগস্ট মাস থেকে আমরা যে আন্দোলন শুরু করেছি তাতে প্রায় ১০ নেতাকে রাজপথে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদেরকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এই ঢাকা শহরে এমন একটা বিএনপির নেতা-কর্মীর বাড়ি নাই যেখানে পুলিশ হানা দেয় না, তল্লাশি বা রেইড করে না এবং ধরে নিয়ে চলে যায় না। আমরা সবাই জেলে গেছি। জেলে যাচ্ছি, আসছি। এখন আমাদের অনেক নেতা-কর্মী জেলে আছে। সেই জেলে নিয়ে কিন্তু বিএনপিকে আটকিয়ে রাখতে পারছে না।’

দেশে নৈরাজ্য চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে নিশ্চয় দেখেছেন, বরিশালে একজনের দোকান দখল করে নিয়েছে। প্রায় ৭০টা দোকান এবং এখন লিখে দিতে হচ্ছে যে, দোকানের ভাড়া ওই আওয়ামী লীগারকে দিতে হবে, দোকানের মালিককে দিতে পারবে না। এই একটা নৈরাজ্য চলছে। যেভাবে খুশি দেশটাকে তারা চালানোর চেষ্টা করছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মূলত একটা সন্ত্রাসী দল, আওয়ামী লীগ কোনোদিন জনগণের ভোট নিয়ে নির্বাচিত হয়ে আসে নাই, আওয়ামী লীগ সব সময়ই জনগণকে ভয় দেখিয়ে, ত্রাস সৃষ্টি করে একটা ত্রাসের রাজত্ব করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করেছে। আজকে আবারও সেইভাবে ত্রাস সৃষ্টি করে মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে।’

মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক সভাপতি আবদুস সালাম ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় গোপীবাগে পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ আরও অনেকে।

সারাবাংলা/এজেড/এনএস

বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর