Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘নিরাপত্তাহীনতায় পাহাড়িরা ভূমি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২১:২০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পাহাড়ের মানুষকে দূরে ঠেলে না দিয়ে বুকে আগলে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ও পাহাড়ের সাবেক এমপি ঊষাতন তালুকদার।

শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহবান জানান। নগরীর যাত্রামোহন সেন (জেএম সেন) হলে এই সভা হয়েছে।

ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম যদি অশান্ত থাকে এই বাংলা শান্ত থাকতে পারে না। তাই আসুন, আমাদের এই অধিকারের আন্দোলনে বাংলার ১৬ কোটি মানুষকে সম্পৃক্ত করি। আপনারা পাহাড়ের মানুষকে দূরে ঠেলে দেবেন না, তাদেরকে বুকে আগলে ধরে রাখতে হবে। তারা বেশি কিছু চায় না। তারা নিজ ভূমিতে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। এই জুম্ম জনগণের বেঁচে থাকার রাস্তা যেন বন্ধ করে দেওয়া না হয়। আর কোনো বিলম্ব, কালক্ষপেণ নয়, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সবাইকে আন্তরিক হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’

সরকার শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও বাস্তবায়ন করেনি অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘দেশভাগ, কাপ্তাই বাঁধ, সংবিধান বাঙালিকরণের মতো ক্ষত জুম্ম জনগণকে জর্জরিত করেছিল। অধিকারহীন এ জনগোষ্ঠীকে মরণফাঁদ থেকে বাঁচানোর জন্য এম এন লারমারা এগিয়ে এসেছিলেন। দীর্ঘ দুই যুগ সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর।’

‘কিন্তু ২৫ বছর পরও স্বয়ং যে সরকার চুক্তির স্বাক্ষর করেছে সেই সরকার চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করেনি। আইনশৃঙ্খলা, বন বিভাগ, ভূমি অধিকার, শরণার্থী পুনর্বাসন দেওয়া হয়নি। শুধু চুক্তি বাস্তবায়ন করেছি তা মুখে বললে হবে না, বাস্তবে কী হয়েছে সেটি সাধারণ জনগণ বোঝে।’

বিজ্ঞাপন

নিরাপত্তাহীনতায় পাহাড়ের মানুষ নিজ ভূমি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে জানিয়ে ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। নিরাপত্তাহীনতায় জুম্মরা নিজ ভূমি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা রাজনৈতিক সমস্যা সেটি সরকারও স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এই সমস্যা শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে সমাধান করা সময়ের দাবি। একমাত্র পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই সেটি সম্ভব। যতক্ষণ না দেশের সচেতন নাগরিক এগিয়ে আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে-আমাকে এই চুক্তির গুরুত্ব বোঝাতে হবে।’

পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে মন্তব্য করে সাবেক এই এমপি বলেন, ‘আজ এই সরকার পাহাড়ি মানুষকে কেন শত্রু মনে করে। অহেতুক কারণ দেখিয়ে চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য আজ একটা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। এজন্য বাংলার মানুষ যদি এই চুক্তির মর্ম না বোঝে, তার বাস্তবায়ন কঠিন হবে। এক নাগরিক আরেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করছে, সরকার এখানে কী করছে! সরকার চাইলে সব কিছু বন্ধ করতে পারে, তাই এখানে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।’

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অশোক সাহা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দীন বাবুল, বাসদ চট্টগ্রামের ইনচার্জ আল কাদেরী জয়, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, ঐক্য ন্যাপ, জেলার সাধারণ সম্পাদক অজিত দাশ, চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, মহানগরের সভাপতি পরিমল কান্তি চৌধুরী, দক্ষিণ জেলার সভাপতি তাপস হোড়, জেলা যুব ইউনিয়নের সহ সভাপতি প্রীতম দাশ, পাহাড়ি শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিশান তঞ্চঙ্গ্যা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা।

বিজ্ঞাপন

সভার শুরুতে জাতীয় সংগীত ও জনসংহতি সমিতির দলীয় সংগীত পরিবেশন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠী।

সারাবাংলা/আইসি/একে

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড় শান্তিচুক্তি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর