প্রধানমন্ত্রীর বসন্তের উপহার কালশী ফ্লাইওভার, উদ্বোধন রোববার
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:০৪
ঢাকা: রাজধানীর যানজট ভোগান্তি নিরসনে ইসিবি চত্ত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্থকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার উদ্বোধন হচ্ছে রোবাবার। কালশী ফ্লাইওভার চালু হলে মিরপুরবাসী যানজট ভোগান্তির পাশাপাাশি বর্ষাকালে জলজট থেকেও মুক্তি পাবে। এ জন্য আগামীকাল কালশী ফ্লাইওভার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুরবাসীকে বসন্তের উপহার দিতে যাচ্ছেন।
রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় কালশী ফ্লাউওভার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে কালশী বালুর মাঠের জনসভায় বক্তব্য দেবেন তিনি।
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘কালশী ফ্লাইওভার মিরপুরবাসীর জন্য বসন্তের উপহার। ফ্লাইওভারটি চালুর পর প্রতিদিনের যানজটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে মিরপুরের বাসিন্দারা।’
মিরপুরবাসীর বহুল প্রত্যাশিত দাবি ছিল কালশী ফ্লাইওভার। বিমানবন্দর সড়ক থেকে মিরপুর এলাকায় ঢোকার একটা প্রবেশপথ কালশী সড়ক। তবে ওই এলাকায় সব সময় যানজট লেগে থাকত। যানজটের ভয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে মিরপুর যেতে হত। ফ্লাইওভারের নির্মাণ হওয়ায় আর তা করতে হবে না।
উদ্বোধনি অনুষ্ঠানের সূচিতে রয়েছে, রোববার সকাল ৯টায় অতিথিদের আসন গ্রহণ শুরুর পর সকাল ১০টার পর প্রকল্পের বাস্তবায়িত কার্যক্রমের উদ্বোধনি ফলক উন্মোচন করবেন প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা। পরে মোনাজত অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সুধী সমাবেশ মঞ্চে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিরা আসন গ্রহণ করবেন। পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে জনসভার বক্ততা পর্ব শুরু হবে।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম স্বাগত বক্তব্য দেবেন। প্রকল্প সম্পর্কিত উপস্থাপনা ও ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করবেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন বিগ্রেডের বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. মনোয়ারুল ইসলাম সরদার। এ ছাড়া আরও বক্তব্য রাখবেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি অর্থায়নে ফ্লাইওভারটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় দুই কিলোমিটার ফ্লাইওভার (১ দশমিক ৭ কিলোমিটার) নির্মাণের পাশাপাশি সড়ক, ফুটপাত এবং ড্রেনের উন্নয়ন কাজও করা হয়েছে। ৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়ক, ফুটপাত প্রশস্তকরণ, সড়ক বিভাজক তৈরি এবং ড্রেন নির্মাণ ও কমিউনিকেশন ডাক্টও তৈরি করা হয়েছে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ১৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটির স্বত্বাধিকারী সংস্থা ডিএনসিসি। উদ্বোধনের পর থেকে প্রকল্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে ডিএনসিসি।
ফ্লাইওভারটি মিরপুরের ইসিবি চত্বর থেকে কালশী মোড়, মিরপুর ডিওএইচএস ও মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এটি চালু হলে চালু হলে মিরপুর, পল্লবী, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, উত্তরা, মহাখালী ও রামপুরার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সহজ হবে। বাড়বে সড়কে যানবাহনের ধারণক্ষমতা। মিরপুর থেকে ১০ থেকে ১৫ মিনিটে উত্তরার বিমানবন্দর এলাকায় যাতায়াত করা যাবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিদ্যমান ৩ দশমিক ৭০ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্থকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার (২ হাজার ৩৩৫ মিটার) নির্মাণের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কাজ সম্পাদন করা হয়। এগুলো হলো- মিরপুর, পল্লবী, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, উত্তরা-মহাখালী ও রামপুরার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতকরণ, সড়কের পার্শ্ববর্তী আবাসিক এলাকার জন্য নিরাপদ সড়ক নির্মাণ, সড়কে যানবাহন ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ ও যানজট নিরসন, সড়কটিতে সাইকেল চালনা সুবিধা প্রদান, পথচারীদের ফুটপাত ব্যবহারের সুবিধা প্রদান, পথচারীর নিরাপদ সড়ক পারাপারের উদ্দেশ্যে ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণ, যাত্রী সাধারণের জন্য বাস-বে ও যাত্রী ছাউনী নির্মাণ এবং জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বক্স নির্মাণ এবং পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া রাস্তার সম্প্রসারণ নিশ্চিত হলে মিরপুর, পল্লবী, মাটিকাটা, মানিকদী, ভাষানটেক ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার সর্বস্তরের জনগণ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে এবং উল্লেখিত এলাকা হতে এয়ারপোর্ট, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, মহাখালী এবং রামপুরার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে এবং ঢাকা শহরের ক্রমবর্ধমান যানজট সমস্যা অনেকাংশেই হ্রাস পাবে।
ফ্লাইওভার এলাকায় দু’টি ফুটব্রিজ করা হয়েছে এবং এতে চলন্ত সিঁড়ির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সাইকেলের জন্য আলাদা লেইন রয়েছে।
সারাবাংলা/এনআর/ইআ