Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আগামী বছরের মার্চে রাজাকারদের চূড়ান্ত তালিকা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:৪০

ঢাকা: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী রাজাকার, আলবদর, আল-শামসের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি হচ্ছে। আগামী বছরের মার্চে তালিকা চূড়ান্ত করা যাবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি জানিয়েছেন, রাজাকারদের তালিকা প্রকাশের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। সে আলোকে তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে।

এটি চলতি বছরে শেষ করা সম্ভব নয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আগামী বছরের মার্চে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করা হবে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের উদ্বোধন ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এ সব কথা বলেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে শান্তি কমিটির আওতায় রাজাকাররা কাজ করতেন। একাত্তরে এই বাহিনীতে ৫০ হাজার সদস্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হয়ে কাজ করার তথ্য ইতিহাসে রয়েছে। যারা মাসিক ভাতাও পেতেন। আবার কেউ কেউ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতেন।

এ প্রসঙ্গে গবেষক অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘ওই সময়ে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দিতেই শুধু সহায়তা করতেন না তারা পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধও করতেন। লুটপাটও করতেন। ওই সময়ে পাকিস্তানিদের সহায়তা দিতে বেশ কয়েকটি সংগঠন গড়ে ওঠে। রাজাকার, আলবদর, আল শামস নামে গঠিত সংগঠনগুলোর পেছনে ছিলেন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে।’

রাজাকারদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম আযম, মুসলিম লীগ নেতা খাজা খয়ের উদ্দীন, মতিউর রহমান নিজামী। যিনি স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ছিলেন। পরবর্তী সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত হলে তার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। একাত্তরের এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে রাজাকারদের তালিকা তৈরির বিষয়টি সামনে আসে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সব সময় রাজাকারদের তালিকা তৈরির জোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

বিজ্ঞাপন

এরপর অন্যান্য মহল থেকেও এ দাবি ওঠে। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যার মধ্যে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নামও। যে কারণে ওই তালিকা নিয়ে নানা মহলে ব্যাপক সমালোচনায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে মুক্তিযু্দ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সে তালিকা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তখন জানানো হয়েছিল ২০২০ সালের স্বাধীনতা দিবসের আগেই নতুন করে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হবে। সে কাজ করতে গিয়ে দেখা গেল ওই ধরনের তালিকা প্রকাশ করার এখতিয়ার নেই সরকারের। যে কারণে ওই কার্যক্রম সেখানেই থেমে যায়। এরপর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল- জামুকা আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রনয়ন করা হয় একটি নীতিমালা। যার আলোকে ফের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়।

জামুকা সূত্রে জানা গেছে— সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য শাহজাহান খানের নেতৃত্বে গঠিত রাজাকারদের তালিকা তৈরিতে একটি উপকমিটি কাজ করছে। এই কমিটি রাজাকারের তালিকা সংগ্রহের প্রক্রিয়া ও প্রকাশের বিষয় নির্ধারণ করবে।

এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এরই মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি হয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়ন হয়েছে। এখন রাজাকারদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। যা ২০২৪ সালের মার্চে চূড়ান্ত হবে।’

মতবিনিময় সভায় মহান একুশে ফেব্রুয়ারির প্রেক্ষাপট নিয়েও আলোচনা করে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়কমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাঙালিদের নেতা ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তারই ঘনিষ্ট সহচর শেখ মুজিবুর রহমান। তখন তিনি ছাত্র নেতা। শেখ মুজিবকে সংগে নিয়েই সারা বাংলাদেশে ঘুরে বেড়িয়ে মুসলিম লীগের পক্ষে জনমত গড়ে তুলেছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।’

১৯৪৬ সালে ভোট হয়েছিল উল্লেখ করে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ইংরেজরা এ দেশ ছাড়ার আগে একটি নির্বাচন দিয়েছিল কার কী দাবি শোনার জন্য। কংগ্রেস বলেছিল, আমরা এক ভারত চাই, ভারত ভাগ করা যাবে না। আর মুসলিম লীগ বলেছিল, ভারত ভাগ করে মুসলমানদের জন্য আলাদা আবাসভূমি চাই। আলাদা রাষ্ট্রের দাবি তখনি উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু মুসলমানদের রাষ্ট্রের জন্য তার নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আন্দোলন করলেন। পাকিস্তান হলো, পাকিস্তানের শতকতা ৫৬ ভাগ লোক আমরাই ছিলাম। ওরা ছিল ৪৪ শতাংশ। রাষ্ট্রভাষা করা হলো উর্দুকে। আমরা সংখ্যাগরিষ্ট হওয়া সত্তেও তার মর্যাদা তারা দেয়নি। সেই জন্য আমরাই একমাত্রা জাতি যারা মায়ের ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি। সেই জন্য এই একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পেয়েছে।’

সারাবাংলা/জেআর/একে

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রাজাকার রাজাকারের তালিকা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর