চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ৪ বছর আজ, এখনও শেষ হয়নি বিচার
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:২৫
ঢাকা: চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৪ বছর পার হলেও এখনও শেষ হয়নি বিচার। সম্প্রতি মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। বিচার শুরুর মাধ্যমে নতুন আশা জাগলেও কবে নাগাদ শেষ হবে পারে মামলার বিচার কাজ, তা বলতে পারছে না সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
সম্প্রতি ওয়াহেদ ম্যানশন ভবনের মালিক দুই ভাইসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চশবাজার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল কাইউম। গত ৩১ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার ৮ম অতিরিক্ত দায়রা জজ সৈয়দা হাফসা ঝুমা। আগামী ১৪ মার্চ সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মাজহারুল হক জানান, মামলার চার্জগঠন হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষী নিয়ে এসে দ্রুত সাক্ষ্য শেষ করার চেষ্টা করা হবে। আশা করছি, দ্রুত এ মামলার বিচার কাজ শেষ হবে।
নিহত জুম্মনের ছেলে মামলার বাদী আসিফ বলেন, ‘আমাদের আর কেউ খোঁজ-খবর নেয় না। ঘটনার দিন এলে পাবলিসিটি করার জন্য সবাই যোগাযোগ করে, অন্যসময় কারও খোঁজ থাকে না। আমরা কেমন আছি, কিভাবে আমার পরিবার চলছে কারও মাথা ব্যথা নেই। বাবা হারানোর পর এখন পর্যন্ত কোনো অনুদান পাইনি।’
সিটি করপোরেশন থেকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও সেটা দেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ৬৬ পরিবারের মধ্যে কিছুসংখ্যক চাকরি পেলে বাকিদের খোঁজখবর নেওয়া হয়নি। আর সিটি করপোরেশন থেকে যে চাকরি দিয়েছে, সেটা হচ্ছে রোড মাস্টারের। সিটি করপোরেশন বা সরকারের কোনো সংস্থার কাছ থেকে এখন পর্যন্ত এক টাকাও পাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘৪ বছর আগে ঘটে যাওয়া জায়গাটি আগের মতো হয়ে গেছে। সেই বিল্ডিং দেখে চেনার উপায় নেই। নতুন করে অফিস/ দোকান হয়েছে। মাঝখান থেকে আমার বাবাকে হারালাম। ৬৬টি পরিবার তাদের একমাত্র উপার্জন করার লোক হারালো। আমরা এখন কি অবস্থায় দিন পার করছি বলে বোঝানো যাবে না। অনেকে চেষ্টা করেও সরকার ও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। ক্ষতি তো আমাদের হয়েছে, তা অপূরণযোগ্য। তবে সরকার/ সিটি করপোরেশন চাইলে আমাদের ৬৬টি পারিবারকে একটি করে চাকরি দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারতেন। তা হলে আমরা একটু ভালো থাকতে পারতাম।’
মামলা সম্পর্কে আসিফ বলেন, ‘আদালত থেকে দীর্ঘদিন কোনো খোঁজ-খবর আমাদের দেয়নি। মামলা কি পর্যায়ে রয়েছে আমার জানা নেই। তবে আদালত দোষীদের যে শাস্তি দেবেন, তাতেই আমি খুশি।’ মামলার সব আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন তিনি।
আসামি হাসান ও সোহেলের আইনজীবী মোস্তফা পাঠান ফারুক বলেন, ‘আসামিরাই তো ভিকটিম। ওই ঘটনায় তো তাদের মা মারা গেছেন, বিল্ডিংয়েরও ক্ষতি হয়েছে। এখানে আসামিদের দোষ নেই। বিল্ডিংটি ছিলো কমার্শিয়াল। যে দাহ্য পদার্থের কথা বলা হয়েছে, তাতে তো সিটি করপোরেশনের অনুমোদন ছিলো। বিষয়টি তদারকি করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশন। এখানে আসামিদের দোষ নেই। তারাও ভিকটিম।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে মামলাটি চার্জগঠন হয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। চার্জগঠনের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাবো। আশা করি, মানবিক দিক বিবেচনা করে আসামিরা খালাস পাবেন।’
আসামি ইমতিয়াজ আহম্মেদ ও জাওয়াদ আতিরের আইনজীবী শেখ আবু সাঈদ বলেন, ‘আসামিদের সন্দিহানভাবে জড়ানো হয়েছে। মামলাটি কেবল সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে এসেছে। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত নির্ধারণ করবেন আসামিরা দোষী না নির্দোষ। আশা করি রায়ে আসামিরা খালাস পাবেন।’
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০ দিকে চকবাজার মডেল থানাধীন চুড়িহাট্টা শাহী জামে মসজিদের সামনে রাস্তায় চলাচলরত একটি প্রাইভেটকারের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে পাশের বিদ্যুতের ট্রান্সমিটারে আগুন লাগে। তৎক্ষণাৎ পাশে আরেকটি প্রাইভেটকারে আগুন লাগলে সেই গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। নন্দকুমার দত্ত রোড চুড়িহাট্টা বিল্ডিংয়ের সামনে একটি পিকআপ গ্যাস সিলিন্ডার ভর্তি অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিল। ওই পিকআপের সিলিন্ডারগুলো বিস্ফোরিত হয়ে বাড়ির নিচতলা ও রাজমহল হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মধ্যে আগুন লাগে। ওই রাতে চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন মারা যায়।
ওই ঘটনায় স্থানীয় মো. আসিফ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে দুই আসামির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার চার্জশিটভূক্ত আসামিরা হলেন- ভবনের মালিক দুই সহোদর হাসান ওরফে হাসান সুলতান, সোহেল ওরফে শহীদ ওরফে হোসেন, রাসায়নিক গুদামের মালিক ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিচালক মোজাম্মেল হক, ম্যানেজার মোজাফফর উদ্দিন, মোহাম্মদ জাওয়াদ আতির, মো. নাবিল ও মোহাম্মদ কাশিফ।
আসামিরা সবাই জামিনে রয়েছেন।
সারাবাংলা/এআই/এমও